বিশেষ প্রতিনিধি
শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতার মামলায় দুই দিনের পুলিশ রিমান্ডে যেতে হচ্ছে যশোরের বাঘারপাড়ার বিএনপি নেতা জাকির হোসেনকে। রোববার ১৫ ডিসেম্বর যশোর আমলী আদালত (বাঘারপাড়া) বিচারক জাকিয়া সুলতানা তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে বাঘারপাড়া থানায় যশোর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও সদ্য ক্ষমতাচ্যুত উপজেলা চেয়ারম্যান বিপুল ফারাজীর পক্ষে কথিত লুটের মামলায় বাঘারপাড়া থানার সাব ইন্সপেক্টর মোহাম্মাদ তানিম ইসলাম ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। জাকির হোসেন উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য।পতিত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নিপিড়নের শিকার জাকির হোসেন বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের আমলেও হামলা-মামলার শিকার হওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
রোববার বিকেলে বাঘারপাড়া উপজেলা সদরে দলের সহাস্রাধিক নেতাকর্মী বিক্ষোভ করে। এসময় বাঘারপাড়া থানার ওসির অপসারণ দাবি করা হয় বিক্ষোভ থেকে।
বিএনপি নেতা জাকির হোেেসনর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ লতা বলেন,পুলিশ যে মামলায় তাকে আটক করে রিমান্ড আবেদন করেছেন সেই মামলার এজাহারে কোথাও জাকির হোসেনের নাম নেই। সন্দেহের বশে ও উদ্দেশ্য মূলকভাবে তাকে আটক করে রিমান্ড চাওয়া হয়। এ বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
বাঘারপাড়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান বলেন,জুলাই বিপ্লবে হাসিনার পলায়ন হয়েছে ঠিকই, তবে পুলিশ প্রশাসনে তার প্রেত্মারা এখনও বহাল রয়েছে। এসব পুলিশরাই এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের পূণর্বাসনের কাজে কাজ করছে।
তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকের মামলায় যদি এখনও আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে রিমান্ড নেয় পুলিশ, তাহলে যুদ্ধ করে আমরা কী পেলাম সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
বিএনপি নেতা শামসুর রহমান বলেন, বাঘারপাড়া থানার ওসি আব্দুল আলীম আওয়ামী লীগ নেতার মামলা রেকর্ড করে সেই মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারপূর্বক রিমান্ড চেয়ে দু:সাহস দেখিয়েছেন। প্রয়োজনে আন্দোলনের ঘোষণা দেবেন বলে তিনি জানান।
তবে এ বিষয়ে বাঘারপাড়ার থানার ওসি আব্দুল আলীম সাংবাদিকদের বলেছেন,সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আসামী গ্রেফতার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে
আওয়ামী লীগের পূণর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, ৫ জুলাই শেখ সরকারের পতনের পর সারাদেশের ন্যায় বাঘারপাড়া উপজেলাতেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যায়। তবে এর কিছুদিন পরই তারা থানা পুলিশের সাথে গোপন চুক্তি করে এলাকায় ফিরতে শুরু করে। এমনকি আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতাকর্মীরা যারা জনপ্রতিনিধির দায়িত্বপালন করেছেন তাদের মধ্য এমন বেশ কয়েকজন নেতা এনজিও ও সামাজিক কর্মকান্ডের ব্যানারে সাংগঠনিক কর্মকান্ড শুরু করেছে। এদের মধ্য যশোর জেলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সদ্য অপসারিত বাঘারপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বিপুল ফারাজী সামাজিক কর্মকান্ডের ব্যানারে আওয়ামী লীগের দরিদ্র অসচ্ছল কর্মীদের মাঝে সেলাই মেশিন, নগদ টাকা টাকা দিয়ে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সে রায়পুর বাজারে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠান করে এসব নগদ অর্থ ও সেলাই মেশিন বিতরণের ধৃষ্টতা দেখায়। পরে স্থাণীয় ছাত্রজনতার প্রতিরোধে অনুষ্ঠান পন্ড হয়ে যায়।
এদিকে অনুষ্ঠান পন্ড হওয়ার পর বিপুল ফারাজী ওইদিন রাতে রায়পুর বাজারে একটি রাইস মিলে তার বিতরণের জন্য প্রস্তুত থাকা মালামাল পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে ফেলে প্রচার করতে থাকে মালামাল লুট হয়ে গেছে। এরপর বিএনপি নেতাকর্মীদের দোষারোপ করে তার এক কর্মচারীকে দিয়ে ৭ ডিসেম্বর বাঘারপাড়া থানায় মামলা দায়ের করে।
অভিযোগ রয়েছে বাঘারপাড়া থানার ওসিকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে মামলাটি রেকর্ড করতে সক্ষম হয়। তবে ওই মামলায় কারোর নাম উল্লেখ না থাকলেও বিএনপি নেতা জাকিরকে আটক করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।