নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক জিএস গোলাম রাব্বানীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রে জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমলে নিয়ে তাদের এমফিল ভর্তি সাময়িকভাবে বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট।
ভর্তি বাতিলের বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে পাঠানোরও নির্দেশ দিয়েছে ফোরামটি।
এছাড়া বৈধ ছাত্রত্ব না থাকায় যেহেতু গোলাম রাব্বানীর প্রার্থীতাও বৈধ ছিল না, ফলে তার জিএস পদে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিও অবৈধ ঘোষণার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
গত ৪ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি সামনে আসে।
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের কারচুপির অনুসন্ধান, জড়িত ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ শিক্ষকদের শাস্তি ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের ডাকসুর সদস্য পদ বাতিলের দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালী নির্বাচনে ডাকসুর জিএস প্রার্থী রাশেদ খান।
স্মারকলিপি আমলে নিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।
৪ সেপ্টেম্বর এই কমিটির প্রতিবেদন সিন্ডিকেটের এজেন্ডাভুক্ত করা হয়। সভায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাঠ করে শোনানো হয়।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে কিছু প্রার্থী বা প্যানেলের পক্ষ হতে ভোটদান, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, ভোট কারচুপি করা, ভোট দানের জন্য কৃত্রিম লাইন সৃষ্টি করা, ভোট কেন্দ্র দখল করা, ব্যালট পেপারে অবৈধভাবে সিল মারা, ভোট দানে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা, অবৈধ উপায়ে ভর্তি হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, ব্যালট-বাক্সসহ নানা কারচুপি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণাদি ও সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের সাক্ষাৎকার হতে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ পর্যালোচনা করে কমিটির কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, ক্রিমিনোলজি বিভাগের গোলাম রাব্বানী (ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক), মেহজাবিন হক ও ফাহমিদা তাসনিম অনির এম.ফিল প্রোগ্রামে ভর্তি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ভর্তি আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বাতিল বলে গণ্য হবে। এমতাবস্থায় বৈধ ছাত্রত্ব না থাকার কারণে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচ গোলাম রাব্বানীর প্রার্থিতাও বৈধ ছিল না। ফলে এই কমিটি গোলাম রাব্বানীর জিএস নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিকে অবৈধ ঘোষণার জন্য জোর সুপারিশ করে।
সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গৃহীত হয়। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ক্রিমিনোলজি বিভাগের গোলাম রাব্বানী, মেহজাবিন হক ও ফাহমিদা তাসনিম অনির এম.ফিল প্রোগ্রামে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় তাদের এম.ফিল ভর্তি সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়। তাদের এম.ফিল ভর্তি বাতিলের বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া তদন্ত কমিটির বাকি সুপারিশ বাস্তবায়নে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রদানের জন্য আইন উপদেষ্টাকে অনুরোধ করা হয়।