যশোর অফিস
বেনাপোল বন্দরে দু’দেশের পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞায় বাণিজ্যে ব্যপক ধস নেমেছে। সাথে সাথে কর্মহীন হয়ে পড়েছে দু’দেশের শ্রমিকরা। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বেনাপোল স্থলবন্দরে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে। আগে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় ৫৫০ থেকে ৬০০ ট্রাক পণ্য আমদানি এবং ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হতো। এখন তা নেমে এসেছে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক। একইভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতেও রপ্তানি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে দিনে ১০০ ট্রাকের নিচে। ফলে বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় পরিবহন, গুদাম, হ্যান্ডলিং শ্রমিক ও ব্যাবসায় স্থবিরতা ব্যাপকহারে প্রভাব পড়েছে দু’দেশের বন্দর এলাকায়।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, সাপ্তাহিক শুক্রবার বাদে ৬ দিন লোড-আনলোড হয়ে থাকে বন্দরে বছর ব্যবধানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি কমেছে ৬ লাখ টন এবং রপ্তানি কমেছে ৭৫ হাজার টনের বেশি। গত ২৬ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত চ্যাচিস বাদে আমদানি রপ্তানি ধস। > ২৬ জুলাই-২৫ তারিখে বেনাপোল বন্দরে আমদানি হয়েছে ৩০৬ ট্রাক পণ্য এবং রপ্তানি হয়েছে ৬৮ ট্রাক পণ্য। > ২৭জুলাই-২৫ তারিখে আমদানি হয়েছে ২৩২ ট্রাক পণ্য এবং রপ্তানি হয়েছে ৭৭ ট্রাক পণ্য। > ২৮জুলাই-২৫ তারিখে আমদানি হয়েছে ১৭৪ ট্রাক পণ্য এবং রপ্তানি হয়েছে ১১৭ ট্রাক পণ্য। > ২৯জুলাই-২৫ তারিখে আমদানি হয়েছে ১৯৪ ট্রাক পণ্য এবং রপ্তানি হয়েছে ৪৪ ট্রাক পণ্য। > ৩০জুলাই-২৫ তারিখে আমদানি হয়েছে ২৩৫ ট্রাক পণ্য এবং রপ্তানি হয়েছে ৭৮ ট্রাক পণ্য। > ৩১জুলাই-২৫ তারিখে আমদানি হয়েছে ২৮১ ট্রাক পণ্য এবং রপ্তানি হয়েছে ৭৩ ট্রাক পণ্য।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যে টানাপোড়েন চলছেই। বাণিজ্য কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা, বাণিজ্য কমে যাওয়ায় কমে গেছে কাজকর্মও। ফলে আয়ও কমে গেছে। দু-দেশের মধ্যে বিধিনিষেধ আরোপ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষতির মুখে থাকা ব্যবসায়ীরা। গত বছর বাংলাদেশে গণআন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা হারায় এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেন। তারপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বাণিজ্যবান্ধব নীতিই পারে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তীর মতে, দুই দেশের পক্ষ থেকে একাধিক বিধিনিষেধ এই সংকটের মূলে। ভারত বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে গত ৮ এপ্রিল, আর ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ ভারত থেকে সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পাশাপাশি ভারতও কিছুু পণ্যের আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এইসব নিষেধাজ্ঞার ফলে ব্যবসায়ী, শ্রমিক, পরিবহন সংস্থা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টাস এন্ড এক্সপোটার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জানান, এই বন্দর দিয়ে ভারত বাংলাদেশের সিংহভাগ বাণিজ্য সম্পন্ন হলেও ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর কমেছে পণ্যবাহী ট্রাকের আসা-যাওয়া। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বাণিজ্য অনেক কমে গেছে। বাণিজ্যের পরিমাণ কমে আসায় বন্দর দিয়ে সরকারের রাজস্ব আয়েও প্রভাব পড়েছে। এতে শুধু বাংলাদেশের নয়, ভারতেরও ক্ষতি হচ্ছে। তিনি আরও জানান, দু-দেশের পক্ষ থেকে আরোপিত নানা বিধিনিষেধই বাণিজ্যের এই ধসের মূল কারণ। দ্রুত এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান সজন জানান, বেনাপোল বন্দরে বাণিজ্য স্বাভাবিক করতে হলে ভিসা নীতি সহজ করতে হবে। আগে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যিক ভিসায় ভারতে গিয়ে সরাসরি পণ্য বেছে নিয়ে আমদানি করতো। বর্তমান দু-দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনতি হওয়ায় বাণিজ্যে ভিসা বন্ধ রয়েছে। ফলে আমদানি-রফতানি দুটোই কমে যাচ্ছে। ভারতে যেতে না পেরে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা কাজ করছে, নতুন করে উদ্যেক্তা ও আমদানি কারকরা কেউ ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক মোঃ শামিম হোসেন বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বেশ কিছু পণ্যে দু’দেশের সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যার অধিকাংশ উৎপাদন হয় দেশেই। এসব পণ্য আমদানি না করায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বাণিজ্য অনেক কমে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় ৫৫০ ট্রাক পণ্য আমদানি এবং ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হতো। এখন তা নেমে এসেছে ২৫০ ট্রাক ও রপ্তানি ১০০ ট্রাকের নিচে।