চাকরিতে প্রবেশের বয়স বেড়ে ৩৩ বছর হচ্ছে

Share

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স আরও এক বছর বাড়িয়ে ৩৩ করা হচ্ছে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করে গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার যে গেজেট প্রকাশ করেছিল, তা সংশোধন করা হচ্ছে। বর্তমান গেজেটের কারণে যেসব পদে আরও বেশি বয়সে চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ ছিল তা রুদ্ধ হয়ে গেছে। এতে বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও কিছুই বলা হয়নি। নানা কারণে বিদ্যমান অধ্যাদেশ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিভ্রান্তি দূর করতেই ফের সরকারি অধ্যাদেশ ২০২৪ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব যে কোনো দিন উপস্থাপন করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত ও যুগ্মসচিব পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত আছে। ইতোপূর্বে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনও চাকরি বয়সসীমা পুরুষের ক্ষেত্রে ৩৫ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৩৭ করার সুপারিশ করেছে। সে ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৩ করার চিন্তা চলছে। এছাড়া কিছু কিছু সরকারি পদে অধিক বয়সে নিয়োগের বিধান ছিল।

সময়ের দাবি ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে এ ধরনের নিয়ম থাকে। যেমন সরকারি মেডিকেল কলেজের সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক, প্রিন্সিপাল, সরকারি কলেজের সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক সরাসরি নিয়োগে বয়স কত হবে, সে বিষয়ে গত বছর জারি করা অধ্যাদেশে কিছুই বলা হয়নি। ফলে ওই সব পদে সরাসরি নিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ক্যাটাগরি ভিত্তিক কোন পদে কত বছর হবে, তা স্পষ্ট করা জরুরি হয়ে পড়ছে। সে কারণে এই সংশোধনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৩ বছর নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, বিভাগীয় প্রার্থীদের বয়সসীমা কত হবে, তাদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিলযোগ্য কি না, তা গত বছর জারি করা গেজেটে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া সরকারি অফিসে কম্পিউটার পারসোনেল নিয়োগ অর্থাৎ, সহকারী প্রোগ্রামার, প্রোগ্রামার, সিনিয়র প্রোগ্রামার, সহকারী পরিচালক, সিনিয়র সহকারী পরিচালক, উপ-পরিচালক, উপ-মহাব্যবস্থাপক, সিস্টেম ম্যানেজার, মুখ্য রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী, সহকারী সিস্টেম এনালিস্ট, সিস্টেম এনালিস্ট, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট, অপারেশন ম্যানেজার এবং কম্পিউটার অপারেশন সুপারভাইজার পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা কত হবে, তা প্রকাশিত অধ্যাদেশে উল্লেখ নেই। এতে বিপাকে পড়েছে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও চাকরি প্রত্যাশীরা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, আমি আগেই বলেছি এই অধ্যাদেশ আবার সংশোধন করতে হবে। অন্যথায় জটিলতা আরও বেড়ে যাবে। ৩২ বছরের বেশি বয়সে যাদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ ছিল ওই অধ্যাদেশের ফলে তাদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কমে গেছে।

অর্থাৎ বয়সসীমা কমিয়ে দেওয়ায় তারা নিয়োগ লাভের যোগ্যতা হারিয়েছেন। ফিরোজ মিয়া উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিসিএস নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮১ অনুসারে সরকারি মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৪০, সহযোগী অধ্যাপক পদে ৪৫ এবং প্রিন্সিপাল পদে ৫০ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করা ছিল।

শিক্ষা ক্যাডারে সহযোগী অধ্যাপক পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৪৫ এবং বিভাগীয় প্রার্থীদের বয়সসীমা ৫০ বছর নির্ধারণ করা ছিল। সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩২ বছর ধরে জারি করা অধ্যাদেশ প্রকাশের ফলে তারা নিয়োগ যোগ্যতা হারিয়েছে। তাদের নিয়োগ কীভাবে হবে তা পরিষ্কার করা হয়নি।

প্রায় ৯ মাস পর এসে সরকার বুঝল কাজটা সঠিক হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি অফিসের কম্পিউটার পারসোনেল নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯-এ বয়সসীমার বিষয়ে বলা হয়েছে ৪৫ বছর। উপ-পরিচালক/উপ-মহাব্যবস্থাপক পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স ৪৫ বছর হতে হবে। উপ-পরিচালক/সিস্টেম ম্যানেজার পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে বয়সসীমা ৪৫ বছর। মুখ্য রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট, সিনিয়র রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলীর বয়স হবে ৪৫ বছর।

সিস্টেম এনালিস্ট বয়স ৪০ বছর, সিনিয়র প্রোগ্রামার বয়স ৪০ বছর, অপারেশন ম্যানেজারের বয়স ৪০ বছর, সহকারী সিস্টেম এনালিস্টের বয়স ৩৫ বছর, প্রোগ্রামারের বয়স ৩৫ বছর, কম্পিউটার সুপারভাইজার ৩৫ বছর এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী ৩৫ বছর নির্ধারণ করা আছে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ নির্ধারণ করায় উল্লিখিত পদগুলোয় নিয়োগ প্রত্যাশীরা যোগ্যতা হারিয়েছেন।

Read more