যশোর সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন সাবেক সভাপতির নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ

যশোর প্রতিনিধি
যশোরের ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধেশ্বরী কালি মন্দির পরিচালনা কমিটি বিরোধ চরমে উঠেছে। আসন্ন দুর্গাপূজা ঘিরে একটি পক্ষ আদা-জল খেয়ে মাঠে নেমেছে। তারা জল ঘোলা করে পুজো-অর্চনা বন্ধ করাসহ সম্প্রীতির যশোরে সাম্প্রদায়িক বিষবাস্প ছড়ানোর অপতৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সিদ্ধান্তকেও তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। দু’পক্ষের পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচি সনাতন ধর্মালম্বী সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। এ কাজে মদদ যোগাচ্ছেন সরকার বিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় চুড়িপট্টির আলোচিত এক নেতা। তিনি মন্দির কমিটির বিরোধে ঘি ঢেলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছে দুই স্বার্থে। এক রাজনৈতিক ফায়দা আদায় দুই স্থানীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তার করা। নেপথ্যে থেকে তার মদদ দেয়ার বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরে এসেছে। তিনি প্রশাসনের নজরদারির মধ্যে আছেন বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, বর্তমান মন্দির পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের একাধিক সূত্রের অভিযোগ- সাবেক সভাপতি সুজিত কুমার বাবলু কাপুড়িয়া, তার অন্যতম সহযোগী পবিত্র সাহা এবং বিপ্লব দাস গং নীলগঞ্জ মহাশ্মশান, পূজা উদযাপন পরিষদ জেলা, উপজেলা ও পৌর শাখা এবং মুড়লী জোড়া শিব মন্দির পরিচালনা কমিটি থেকে বিতাড়িতদের নিয়ে প্রকাশ্যে সিদ্বেশ্বরী মন্দিরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তারা ভাড়া করা লোকজন নিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর প্রেসক্লাব যশোরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অবস্থান জাহির করার চেষ্টাও করেছেন।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে চক্রটির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন মন্দির পরিচালনায় গঠিত আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, সম্প্রতির যশোরে একটি পক্ষ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর পায়তারা শুরু করেছে।
নেতৃত্ব সংকটের কারণে সম্প্রতি জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও হিন্দু ধর্মালম্বী বহু মানুষের মতামতের ভিত্তিকে মন্দির পরিচালনায় আহবায়ক কমিটি গঠন করে দিয়েছেন কিন্তু তা মানতে নারাজ চক্রটি। ফ্রন্ট লাইনে থেকে চক্রটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মন্দিরের সাবেক সভাপতি সুজিত কুমার বাবলু কাপুড়িয়া, পবিত্র সাহা ও বিপ্লব দাস। দল ভারী করতে কাছে টানা হয়েছে নীলগঞ্জ মহাশ্মশান, পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা, উপজেলা ও পৌর শাখা এবং মুড়লী জোড়া শিব মন্দির পরিচালনা কমিটি থেকে বিতাড়িতদের। তারপরও লোক ভাড়া করে মানববন্ধ করেছে চক্রটি।
এরফলে আসন্ন দুর্গাপূজা উদযাপনের বিষয়টিও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন- সম্প্রীতির যশোরে সাম্প্রদায়িক বিষবাস্প ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
এরআগে বাবলু কাপুড়িয়া, পবিত্র সাহা, বিপ্লব দাসরা গত ১৫ সেপ্টেম্বর মন্দিরের আ্হবায়ক কমিটির দূর্গাপুজার সভা বানচাল করতে হাঙ্গামা করেন। এসময় তারা দম্ভ প্রকাশ করে বলেন-মামলা না মেটা পর্যন্ত মন্দিরে পূজা-পার্বন কিছুই হতে দেয়া হবে না। তারা বাহিরাগত সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকজন ও ইটভাটার শ্রমিক ভাড়া করে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন। এই চক্রের সহযোগিতায় রয়েছেন, যশোর শহরের মুড়লি জোড়া শিবমন্দিরের অর্থ তছরুপ ও জমি কুক্ষিগত করার অপচেষ্টাকারী অখিল চক্রবর্তী ও কোতয়ালি মডেল থানার সামনে জনৈক বিধবার সম্পত্তি দখলকারী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত এক সমবায় কর্মচারি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন-শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালি মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব বিকাশ চন্দ্র ঘোষ। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, এ্যাডভোকেট স্বপন ভদ্র, মন্দির পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বিদ্যুৎ মজুমদার, সদস্য সচিব বাপ্পী ঘোষ, আশীষ ঘোষ, মদন সাহা, শ্যামল ঘোষ, গোবিন্দ রায়, ধীরাজ সাঁও, অনিক দেবনাথ, দীপ্ত রায় প্রমুখ।
মন্দির পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ গত ১৬ মে তিন শতাধিক ভক্ত, পৌর কাউন্সিলর ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে একটি আহ্বায়ক কমিটি করে দেন। আহবায়ক কমিটিতে ঠাঁই পাননি নানা দোষে দুষ্ট সুজিত কাপুড়িয়া বাবলুসহ কয়েকজন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে একের পর মিথ্যা মামলা, হামলা, পূজা আর্চনা বন্ধের হুমকি দিচ্ছে চক্রটি। এরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভবে ভিডিও করছে। বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড়া করে জড়ো করছে মন্দির ও বড় বাজার এলাকায়।
এ সময় নেতৃবৃন্দ বলেন-বাজার কমিটির সভাপতি ও ব্যবসায়ী নেতা মীর মোশাররফ হোসেন বাবু ভাইকে মন্দির সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিপদে-আপদে পাশে পাওয়া যায়। তাকেও মন্দির কমিটির চলমান বিরোধে জড়ানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
মন্দির পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দের আশঙ্কা পরিস্থিতি যেভাবে ঘোলা করা হচ্ছে, তাতে আসন্ন দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়তো সম্ভব হবে না। রীতিমত ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলেও মনে করেন মন্দির পরিচালনা কমিটির নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ স্বর্ণলতা নিউজকে বলেন-নেতৃত্ব সংকটের কারণে আসন্ন দুর্গাপূজা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে জেনে মন্দির পরিচালনায় একটি আহবায়ক কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাবলু কাপুড়িয়াসহ একটি চক্র মন্দিরের ঐতিহ্য ও যশ-খ্যাতি বিনষ্টের চেষ্টা করছে। এই চক্রের সাথে মিলেছে নীলগঞ্জ মহাশ্মশান, পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা, উপজেলা ও পৌর শাখা এবং মুড়লী জোড়া শিব মন্দির পরিচালনা কমিটি থেকে বিতাড়িতরা। মীর মোশাররফ হোসেন প্রসঙ্গে পূজা উদযাপন পরিষদের শীর্ষ এই নেতা বলেন, তিনি মন্দির সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সব সময় সহযোগীতা করেন। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিপদে-আপদে পাশে থাকেন। তিনি অসম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী একজন বড় মনের মানুষ। তিনি কোনো নোংরা কাজে থাকেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ব্যবসায়ী নেতা মীর মোশাররফ হোসেন বাবু বলেন-পারলে উপকারে থাকি, না পারলে কারোর ক্ষতি করি না। তাহলে মন্দির কমিটি বিরোধে কেন জড়ানো হচ্ছে প্রসঙ্গে তিনি বলেন-বিষয়টি বোধগম্য না। কারণ আমার সাথে কারোর বিরোধ নেই।
তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক একাধিক সূত্রে অভিযোগ পেয়েছেন-সরকার বিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় চুড়িপট্টির বহুল আলোচিত ও সমালোচিত জনৈক নেতা মন্দির কমিটির বিরোধে ঘি ঢালছেন। তিনি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছেন। মন্দিরের স্বার্থবিরোধী চক্রটিকে মদদ দিয়ে সম্প্রীতির যশোরে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি রাজনৈতিক ফায়দা আদায় ও চুড়িপট্টিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। যার ধারাবাহিকতায় তিনি মন্দির কমিটি বিরোধে ক্লিন ইমেজের ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবক মীর মোশাররফ হোসেনকে জড়িয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানোর কাজে উৎসাহিত করছেন। তবে তিনি ডুবে ডুবে পানি খেলেও বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অজানা নেই। রীতিমত তার ওপর প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।#