শহিদ জয, যশোর
বেনাপোল বন্দরে আমদানি রপ্তানির মাধ্যমে শুল্কফাঁকির ছোঁয়ায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে হাসানুজ্জামান-আজিম সিন্ডিকেটের দুই হোতা। ভারতে যখন এই চক্রের প্রায় ১৫ কোটি টাকার পণ্য জব্দ করেছে। তখন বেনাপোলে হাসানুজ্জামানের একটি পণ্য চালান খালাশের প্রক্রিয়া চলছে ঝড়ের গতিতে।এসব নিয়ে যে পত্রিকায় লিখবে তার ওপর শারীরিকভাবে হামলা চালানো হবে বলে হুমকি দিচ্ছে হাসানের অপকর্মের দোসর আজিম-সামাদ চক্র। এদিকে, ভারতে পণ্য জব্দ করার ঘটনায় এপার ওপারে আলোড়ন সৃষ্টি হলেও বেনাপোল কাস্টমসের কোন কোন কর্মকতার্র যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই। বরং হাসানুজ্জামানের একটি পণ্য চারান তড়িঘড়ি করে ছাড় করতে চলছে ব্যাপক আয়োজন। বেনাপোল বন্দরের ৩৯ নম্বর শেডে রক্ষিত এই পণ্য চালানটি স্বল্প সময়ে পরীক্ষণেরও অভিযোগ উঠেছে। বেনাপোলের কথিত আমদানিকারক বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত শুল্কফাঁকিবাজ হাসানুজ্জামান হাসান ও তার অন্যতম সিএণ্ডএফ এজেন্ট ওমর এণ্ড সন্সের লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে তার সাগরেদ আজিম উদ্দীন বেপরোয় হয়ে উঠেছে। বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরে তারা শুল্ক ফাঁকির হোতা হিসেবে পরিচিত এই হাসানুজ্জামান হাসান। ঔষধ, আনপ্রসেসিং চুল, অস্ত্র থেকে শুরু করে সাপের বিষ সবই কৌশলে দেশে প্রবেশ করে আলোচিত হাসানুজ্জামান হাসান ও তার সাগরেদের হাত দিয়ে। তারপরও তারা অধরাই রয়ে গেছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী ঘরাণার এই শুল্কফাঁকিবাজ চক্র একেক সময় একেক রাজনৈতিক নেতার শেল্টারে তাদের ব্যবসা অব্যহত রেখেছে।
সম্প্রতি ভারতের পেট্টাপোলে ভারতীয় ৫ ট্রাক রপ্তানী পণ্যের আমদানিকারক এই হাসানুজ্জামান। ঘটনাটি বাংলাদেশের একাধিকপ্রিন্ট পত্রিকা ও অলনাইন পোর্টালে প্রকাশিত হওয়ার পর হাসান ও তার সহযোগী আজিম নিজেদের অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্ঠায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক টাউট সাংবাদিকদের সাথে দেন দরবারে বসে বলে জানা গেছে। অবৈধ পন্থায় ভারত থেকে পণ্য আমদানি করে এনে হাসানুজ্জামান হাসান টাকার কুমির বনে গেছে। বেনাপোলে হাসানুজ্জামানের দুটি আলিশান বাড়ি ছাড়াও নামে বেনামে গড়ে তুলেছে বিপুল সম্পদের পাহাড়। একইভাবে তার বিতর্কিত সিএণ্ডএফ এজেন্ট এই অবৈধ পণ্য ভাড়ার লাইসেন্সে ছাড় করিয়ে কোটি-কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। দুদকে অভিযুক্ত সদ্য সাবেক কমিশনার মোঃ কামরুজ্জামানসহ কাস্টমসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সাথে অর্থের বিনিময়ে সখ্যতা গড়ে লাইসেন্স ভাড়া করে সিএণ্ডএফ এজেন্ট সহ শুল্কফঁাকিবাজ হাসান-আজিম ও আজিমের ভাই সামাদ শুল্ক ফাঁকির সিন্ডিকেট গড়ে তোলো। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই সিন্ডিকেটের সাথে কাস্টমসের বর্তমান আরওসহ আইআরএমের টিম ও শুল্ক গোয়েন্দার কয়েকজন কর্মকতার্র যোগসাজসে ৫আগস্ট পরবতর্ীতে বিভিন্ন নামে আমদানি ও ভাড়াকৃত লাইসেন্সে শুল্কায়ন করেছে। ভাড়া লাইসেন্সে সিএণ্ডএফ এজেন্ট সাজা ব্যক্তিটিও যশোর শহরে চার কোটি টাকার বাড়ি কিনেছে বলে বেনাপোল বন্দর জুড়ে চাউর আছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, ভাজা বিক্রেতার এই ছেলে অবৈধ টাকায় কোটি টাকার গাড়ি চড়ে বেড়ায়। বেনাপোলের আলোচিত এই সিন্ডিকেটের একটি চালান ভারত সরকারের অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ও কাস্টমস যৌথভাবে আটক করে। সেই মালামালের চালানের বস্তার গায়েও রয়েছে আজিমের নাম। এছাড়াও এসআর ইন্টারন্যাশনাল, এসআর পারভেজ, রাজন সেন, জেজে সোহেল, শাকিল এইসপি, সিধু, আবু সাইদ ইত্যাদি সংকেত ব্যবহার করা হয়েছে। এ সংক্রান্তে পেট্টাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়িক মহল সূত্রে জানা যায়, রফতানিজন্য আটকৃত ৫ ট্রাকপণ্য চালানটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স জামান ট্রেডার্স ও ভারতীয় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মন্ডল গ্রুপ। জব্দকৃত ভারতীয় ৫টি ট্রাকে মোটরসাইকেল পার্টসের নামে ভূয়া লাইসেন্সে মিথ্যা ঘোষণায় বাংলাদেশে বিভিন্নপণ্য রপ্তানি করা হচ্ছিল। স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘ দিন যাবৎ বেনাপোলের হাসানুজ্জামান হাসানসহ চিহ্নিত একটি চক্র সরকারের রাজস্ব ফঁাকি দিয়ে অবৈধ এই বাণিজ্যে লিপ্ত রয়েছে। হাসানুজ্জামান হাসান ভিন্ন-ভিন্ন সিএন্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স ব্যবহার করে এই রাজস্ব ফাঁকির কাজ করে। হাসানুজ্জামান হাসানের অধিকাংশ পণ্য ভাড়াকৃত লাইসেন্স ওমর এন্ড সন্স এবং নিরা এন্টারপ্রাইজ নামের লাইসেন্সে ছাড় করানো হয় বলে বন্দরের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেন। ঢাকার ইউনুস আলীর মালিকানাধীন ওমর এন্ড সন্স এবং নজরুল ইসলামের মালিকানাধীন নিরা এন্টারপ্রাইজ নামের লাইসেন্স দুটি ভাড়া নিয়ে কাজ করে দুই ভাই বেনাপোলের আলোচিত আব্দুস সামাদ ও আজিম উদ্দীন। আব্দুস সামাদের অবৈধ ব্যবসায়ের কারণে তার নিজো লাইসেন্সসহ অন্ততঃ ৮ টি লাইসেন্স সাসপেণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কদর আলীর লাইসেন্সটিসহ কয়েকটি ছাড় করাতে সমর্থ হয়েছে। সামাদ এখনও কদর আলীর লাইসেন্স ভাড়া করে পণ্য ছাড় করানোর কাজ করছে। সামাদ-আজিম সরাসরি আওয়ামী ঘরাণার হওয়া সত্বেও ৫ আগষ্টের পর রং পাল্টে চুটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের ইনভেজটিকেশন রিসার্স ম্যানেজমেন্ট (আইআরএম)-এর উপ কমিশনার রাফেজা সুলতানার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ইতোপূর্বে বলেন, বাংলাদেশে প্রবেশকালে ভারতের পেট্রোল বন্দরে বড় একটি পণ্য চালান আটকের খবর পেয়েছি। তবে এই ঘটনাটি আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। কাস্টমসের কর্মকর্তাদের সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। যাতে পণ্যের চালান শতভাগ পরীক্ষণ করা হয় অবৈধ ভাবে কোন চালান চলে না যায়। কিন্তু কাজীর গরু কেতাবে থাকলেও বাস্তবে তার দেখা মিলছে না। অভিযোগ রয়েছে, এই দ্বৈব-দুর্বিপাকের মধ্যেও থেমে নেই হাসানের কথিত মোটর পার্টসের মধ্যে অবৈধ পণ্য পাচারের ব্যবসা। সূত্র জানায়, বেনাপোল বন্দরে ৩৯ নম্বর শেডে রক্ষিত আছে আলোচিত হাসানের একটি পণ্য চালান। এই পণ্য চালানটি স্বল্প সময়ে পরীক্ষণেরও অভিযোগ উঠেছে। এই পণ্য চালানটি ছাড় করার কথা ছিল ওমর এণ্ড সন্সের লাইসেন্সে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট একজন একজন কর্মকতার্ ওমর এণ্ড সন্সের লাইসেন্সে পণ্য ছাড় না করার পরামর্শ দেন। যার প্রেক্ষিতে হাসানুজ্জামান হাসান এবং তার অপকর্মের দোসর অন্য একটি লাইসেন্সে পণ্য ছাড় করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। সেই কর্মকতার্র তদারকিতে পণ্য চালানটি দ্রুত পরীক্ষণের অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার পণ্য চালানটি ছাড় করণের চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। মোটর পার্টেসের এই পণ্য চালানেও ঘোষণা বহিভূত বা ঘোষণার অতিরিক্ত পণ্য আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানানোর জন্য কাস্টমস কমিশনারকে মুঠো পোনে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। ক্ষুদে বাতার্ দেয়া হলেও তিনি কোন জবাব দেননি। এই পণ্য চালানটি ছাড় করণের পূর্বে পরীক্ষণের জোর দাবি উঠেছে।