নরম কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি

Share

জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে কোনো বিরোধে যেতে চায় না বিএনপি। তবে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা বিলম্বের কারণে সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট না হওয়ায় দলটির ভেতরে উদ্বেগ বাড়ছে। এ অবস্থায় কিভাবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা যায়, সেই পথেই হাঁটবে। সেজন্য সরকারের ওপর দৃশ্যমান চাপ তৈরি করতে নরম কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি। আর এ উদ্যোগের অংশ হিসাবেই মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সমন্বিতভাবে নির্বাচনি ঐকমত্য করতে চায়। এরই অংশ হিসাবে ঈদুল আজহার পর রাজধানীতে সেমিনার বা কনভেনশন ধরনের কোনো সর্বদলীয় মতবিনিময়ের আয়োজন করবে। পাশাপাশি সরকারের কার্যক্রম এবং সচিবালয়ে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের দিকের নজর রাখবে বিএনপি। সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব ইস্যু নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়। এতে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে নিজ অবস্থান তুলে ধরেন নেতারা।

স্থায়ী কমিটি মনে করে, জাপান সফরে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে মর্মাহতও বিএনপি। এটা ছিল অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক। প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরের বক্তব্য যে সঠিক নয়-তা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও প্রধান উপদেষ্টা নিজেও রাজনৈতিক দলের বক্তব্যে শুনে অনুধাবন করতে পেরেছেন বলে মনে করে বিএনপি।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এ সময় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে সংস্কার ইস্যুতে গত সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ‘শুধু একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়’-ড. ইউনূসের এ বক্তব্যের শক্তভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বলে স্থায়ী কমিটিকে অবহিত করা হয়। এছাড়া ওই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘জাপানে আপনি যে কথা বলেছেন, সেটি ঠিক নয়। আপনার এ বক্তব্য বিএনপিকে আহত করেছে।’ এই বিষয়টিও বিএনপির স্থায়ী কমিটিকে অবহিত করা হয়।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সরকারের সঙ্গে এখন পর্যন্ত বিএনপির যে আলোচনা, পর্যালোচনা কিংবা বৈঠক হয়েছে; সেখানে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ নিয়ে তাদের প্রত্যাশার যে জায়গা, সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে তারা কোনো কিছু পায়নি। দেশে গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনই যে বিএনপির মূল দাবি, সে ইস্যুতে এখন পর্যন্ত এসব বৈঠকের ফলাফল বলতে গেলে শূন্য। এ পরিস্থিতিতে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়, সেটি দেখার অপেক্ষায় রয়েছে দলটি। অবশ্য ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিএনপির তরফ থেকে সরকারকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দলটি আশা করে, সরকার খুব দ্রুতই সে রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।

সূত্রমতে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএনপি নেতারা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, তারা এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন চান। সুতরাং সরকারের সঙ্গে এখনই তাদের সরাসরি কোনো দ্বন্দ্বে যাওয়া ঠিক হবে না। তবে সুস্পষ্ট রোডম্যাপের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সরকারকে অব্যাহতভাবে চাপে রাখতে হবে।

বৈঠকে পুনরায় সিদ্ধান্ত হয়, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং দেশের স্থিতিশীলতা ফেরাতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যে জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন, বিভিন্ন ফোরাম থেকে সেটা তারা অব্যাহতভাবে তুলে ধরবে। আর ঈদুল আজহার পরে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তারা পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।

উচ্চ আদালতের রায়ের পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসাবে ইশরাক হোসেনকে এখনো শপথ না পড়ানোর বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে। দলটি মনে করে, সরকার শপথের প্রক্রিয়াটি ঝুলিয়ে দিয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ বলেছেন, এটি (শপথ) নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়। তাই বিএনপি এখন অপেক্ষা করছে, ইসি কী সিদ্ধান্ত নেয়। একইসঙ্গে মেয়র পদে ইশরাককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে তার কর্মী-সমর্থক ও ঢাকাবাসী নগরভবন প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে যে কর্মসূচি পালন করছে, সেটির প্রতিও বিএনপির সমর্থন রয়েছে।

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-কে ‘কালো আইন’ উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবিতে ১০ দিনের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। আন্দোলন চলার মধ্যেই অধ্যাদেশটি জারি করে সরকার। এরপর থেকে বিক্ষোভ, কর্মবিরতি ও স্মারকলিপি দেওয়ার মতো কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারী কর্মচারীরা। আইনটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এমনকি ঈদুল আজহার পরে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ বিষয়টি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। দলটি সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, বিষয়টি সরকার সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে পারছে না। তারা এও মনে করেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে।

Read more