রিকশাচালককে জুতা লাঠিপেটা করেছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা ভিডিও ভাইরাল

Share

রাজশাহী প্রতিনিধি: এক রিকশাচালককে জুতা ও লাঠিপেটা করেছেন রাজশাহীর পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেল। এ সংক্রান্ত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে রীতিমতো চলছে তোলপাড়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, কেবল ওই কর্মকর্তা জুতাপেটা করেই ক্ষান্ত হননি চালককে লাঠি দিয়েও প্রহার করেছেন।

শুক্রবার ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে অনেকেই ওই কর্মকর্তার শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। ঘটনাটি গত ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরের। ঘটনার ২৬ দিন পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় জুতা ও লাঠিপেটা ভিডিওটি।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি রিকশায় চড়ে জাহিদ হাসান বাসার সামনে নামেন। ৩০ টাকা ভাড়া দেন। তখন ওই রিকশাচালক তাকে বলেন, ‘বলে উঠবেন’ (ভাড়া ঠিক করে)। এ সময় জাহিদ হাসান বলেন, ‘বলে উঠবোনি, কিন্তু ভাড়া ৩০ টাকার বেশি কেউ চায় না।’ এ সময় রিকশাচালক কিছু একটা বলেন। তখন পেছনে ঘুরে এসে জাহিদ হাসান বলেন, ‘…আরেকবার বলতেছো কেন? আরেকবার বল।’ এরপরই তিনি পায়ের জুতা খুলে রিকশাচালকের মাথায় ও গালে মারতে থাকেন।’ এ সময় হতবিহ্বল রিকশাচালক রিকশার ওপরেই বসে থাকেন।
এরপর জাহিদ হাসান পাশেই রাখা তার প্রাইভেটকারের দিকে যান। গাড়ির ব্যাকডালা থেকে লাঠি বের করে রিকশাচালককে মারতে থাকেন। কয়েকটি আঘাত রিকশায় লাগে। এ সময় তিনি বলতে থাকেন, ‘আগা, আগা (চলে যা)। তখন রিকশাচালক রিকশা নিয়ে দ্রুত চলে যান।
বিষয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসানের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে পবা উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে খোলা একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রæপে জাহিদ হাসান নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন।
জাহিদ হাসান লেখেন, ‘আমি জাজেস কোয়ার্টার ফাল্গুনির ৩ তলায় থাকি। রাজশাহীর লক্ষীপুর থেকে বাসায় গেটে এসে ৩০ টাকা ভাড়া দিয়েছি। সে আরও ১০০ টাকা চায় লুঙ্গি কিনবে। আমি তাকে নাই বলে নিষেধ করি। সে বার বার বলে। শেষে ভাড়া দিয়ে নেমে আসার সময় আমাকে ছোট ছোট করে লাট সাহেব বলে গালি দিলে আমি পরবর্তী ঘটনা ঘটায়। যা আমার অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে। পরবর্তীতে আমি রিকশায় বেত দিয়ে আঘাত করি। তারপরও সে ভয় পাই নাই।

জাহিদ হাসানের স্ত্রী রাজশাহীর একজন বিচারক। মহানগরীর রাজপাড়া থানা এলাকার ওই কোয়ার্টারে বিচারকেরা পরিবারসহ থাকেন। ওই ঘটনার ফুটেজ একজন বিচারক তার ব্যক্তিগত সিসি ক্যামেরা থেকে ফাঁস করেছেন বলে জাহিদ হাসান দাবি করেন। তিনি লেখেন, ঘটনার ফুটেজ ওই বিচারক সমাজসেবা অধিদপ্তরকে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টি ব্যক্তিগত ইস্যু বলে ‘ডিপার্টমেন্ট’ এগোয়নি। ওই বিচারক এটি ভাইরাল করেছেন বলে জাহিদ হাসান দাবি করেন।
এবিষয়ে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত আমিন আজিজ বলেন, বিষয়টা অবশ্যই দুঃখজনক। সমাজসেবা অফিস অন্য ডিপার্টমেন্টে। তারপরও বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। এখন তারা যেভাবে চিন্তা করে সেভাবে করবে।
রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ রকম কোনো বিষয় তার জানা নেই। রিকশাচালক কোনো অভিযোগ করেননি।
সমাজসেবা অধিদফতরের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনিরা খাতুন বলেন, ‘ভিডিওটা একটু আগেই দেখলাম। বিষয়টা নিয়ে জাহিদ হাসানের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এখনও কথা বলিনি।’ এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখি, আগে কথা বলি। আমাদের বিভাগীয় পরিচালক স্যারও আছেন। আলাপ করে দেখি।’

Read more