মাশরাফি ভাইয়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন করবি! জামায়াতের আমিরকে ছাত্র লীগ নেতারা

নড়াইল প্রতিনিধি: জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বাচ্চু,নড়াইল-২ আসনে প্রার্থীতা ঘোষণায় হামলার শিকার হয়েছিলেন।

তার ফেসবুক আইডি থেকে করা এক পোস্টে তিনি লিখেছেন,সেইদিন তাদের মাথায় ও মুখের ভেতর পিস্তল ঢুকিয়ে গুলি করতে উদ্যত হয়েছিল ছাত্রলীগ নেতারা। এমনই অভিযোগ উঠে এসেছে। ওই পোস্টটি ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।

২০২২ সালের ২০ অক্টোবর শহরের পাশে সীমাখালী চিত্রা সেতু এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছিল।

‘মাশরাফি ভাইয়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন করবি’, বলে জামায়াত নেতা বাচ্চুর ওপর হামলা চালায় জেলা ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত) নেতাকর্মীরা। ঠেকাতে এসে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ওবায়দুল্লাহ কায়সারও হামলার শিকার হন।

ভয়ানক এ স্মৃতি উল্লেখ করে নড়াইল জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বাচ্চু সম্প্রতি তার ফেসবুক আইডিতে একটি লেখা পোস্ট করেছেন। এ পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে নড়াইলের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।

এ পোস্টে জেলা জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপ্নীল শিকদার নীল এবং সাবেক সভাপতি আশরাফুজ্জামান মুকুলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।

জামায়াত নেতা আতাউর রহমান বাচ্চুর ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

“মাশরাফি ভাইয়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন করবি!!!

২০২২ সালের ২০ অক্টোবর লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের একটি সীরাত মাহফিল থেকে জেলা সদরে ফেরার সময় রাত ৯টায় শহরের গা ঘেঁষে বহমান চিত্রা নদীর তীরে চা পানের উদ্দেশ্য বসলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি কিছু যুবক ছেলে এসে সিগারেট হাতে নিয়ে অস্বাভাবিক অবস্থায় আমার সামনে বসলো। একটি ছেলে বলল, আমাকে চেনেন? আমি ছাত্রলীগের জেলা সেক্রেটারি নীল।

আমি বললাম, ও আচ্ছা তোমার নাম শুনেছি কিন্তু সরাসরি দেখা হয়নি। তারপর সে নিজের ফেসবুক আইডিতে ঢুকে আমার একটি ছবি বের করে বললো আপনি কী এমপি নির্বাচন করবেন? আমি বললাম, হ্যাঁ আমার সংগঠন আমাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। পরিবেশ হলে অবশ্যই করব। সে বলল, আপনাদের নিবন্ধন নেই কিভাবে নির্বাচন করবেন?

আমি বললাম, নিবন্ধন ফিরে পাবো আশা করি। আর না হলে স্বতন্ত্র করব। তারপর ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি মুকুল ও অন্যরা কয়েকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বলতে লাগলো মাশরাফি ভাইয়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন করবি, এত সাহস কোথা থেকে আসে। তোকে অনেকদিন ধরে খুঁজতেছি, কিন্তু পাই না। এই বলেই হাত থেকে ফোনটা নিয়ে মাটিতে আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলল এবং আমাকে চায়ের দোকান থেকে ধরে নিয়ে পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে চললো। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হলো আঘাতের পর আঘাত। মুকুল অস্ত্র মাথায় ধরে বললো, আর নির্বাচনের কথা বলবি কিনা?

আমি বললাম, আমার সংগঠন যে নির্দেশ দেয়, আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। ইতোমধ্যে জেলা সেক্রেটারি ওবায়দুল্লাহ ভাই (সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান) সেখানে উপস্থিত হয়ে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করে তাদেরকে নিবৃত করার চেষ্টা করছে। তখন তারা ওবায়দুল্লাহ ভাইয়ের উপর আক্রমণ শুরু করল। এক পর্যায়ে মুখের ভেতর পিস্তল ঢুকিয়ে গুলি করতে উদ্যত হলো। অন্য আরেকজন পিস্তলের বাট দিয়ে ওবায়দুল্লাহ ভাইয়ের মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করল। বুঝে উঠার আগেই কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাগুলো ঘটে গেল। পরবর্তীতে স্থানীয় জনতা ও দোকানদারদের প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হটলো। রক্তাক্ত দেহ ও ছেড়া জামা কাপড় নিয়ে বাসায় এসে পৌঁছালাম।

এই ঘটনা তখন শুধুমাত্র জেলার কয়েকজন দায়িত্বশীল জানতেন। পরিবেশ এমন ছিল অন্য সকল জনশক্তি জানতে পারলে তারা হয়ত প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠতো এবং পুলিশ প্রশাসন ও ছাত্রলীগের রোষানলের স্বীকার হতো।

সেদিন শুধুমাত্র মহান রবের নিকট বিচার দিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আশার চেয়ে প্রাপ্তি একটু বেশিই হয়ে গেছে। নিশ্চয় মহান আল্লাহ ন্যায়বিচারক।”

এদিকে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে জেলা জামায়াতের আমির আতাউর রহমান বাচ্চু বলেন, এ বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে ছাত্রলীগ নেতারা আড়ালে চলে গেছেন। মাশরাফিসহ তাদের নামে একাধিক মামলাও হয়েছে।

তবে আত্মগোপনে থাকা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপ্নীল সিকদার নীল ও সাবেক সভাপতি আশরাফুজ্জামান মুকুল একটি গণমাধ্যমকে বলেন, জেলা জামায়াতের আমিরের ফেসবুক পোস্টটি ঠিক নয়। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করে নিজেদের পক্ষে বিভিন্ন ধরণের সাফাই বক্তব্য তুলে ধরেছেন।