আসামীদের স্বীকারোক্তির পরও চার বছরে শেষ হয়নি যশোরে ইজিবাইক চালক আব্দুল্লাহ হত্যা মামলা আসামীদের অব্যহত হুমকিতে চরম বিপাকে বাদী

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে ইজিবাইক চালক আব্দুল্লাহ হত্যাকান্ডের চার্জশিটভুক্ত আসামিদের পরিবার ও সন্ত্রাসীদের  অব্যহত হুমকির ভয়ে দিনাতিপাত করছেন মামলার বাদী মৃতের বাবা মোজাদ্দাদুজ্ঝামানসহ  তার পরিবার।

উল্লেখ গত ১০ নভেম্বর ২০২১ যশোর সদরের ঘুরুলিয়া গোপালপুর গ্রামের কাচা রাস্তায় আব্দুল্লাহ (১৮) নামের ইজিবাইক চালক তরুনের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে যশোর কোতয়ালী থানা পুলিশ। ভিকটিম একাদশ শ্রেনীর ছাত্র ছিল। বাড়িতে অভাব অনটনের জন্য সে ইজিবাইক চালাত। মৃতের বাবা মোজাদ্দাদুজ্ঝামান বাদী হয়ে যশোর কোতয়ালী থানায় মামলা করেন ওই সময়ে।

হত্যাকান্ডের পরপরই আসামী জাকির হোসেন (১৯), আব্দুল্লাহ আল মামুন (১৯), হাসিবুর রহমান হাসিব (২০) আসামীদের আটক করে পুলিশ ও কোর্ট হাজতে প্রেরণ করে। আসামীরা ৩ জনই ইজিবাইক চালক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ট বন্ধু ছিল। আসামীরা মৃতের মোবাইল ও ইজিবাইক ছিনতাই করে আব্দুল্লাহকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। পুলিশ আসামীদেরকে যশোর শহরের শেখহাটি তরফ নওয়াপাড়া থেকে  ইজিবাইকসহ গ্রেফতার করে ও তাদের কাছ থেকে  আব্দুল্লাহর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।

ধৃত আসামীরা সকলেই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ও হত্যার দায় স্বীকার করে।

এই মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত যশোর কোতয়ালি থানার কর্মকর্তা এসআই আনসারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মামলা চার্জশিট দেওয়া হয়েছে গত ২০২২সালের গত ৩১ জানুয়ারী।  এরপর সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ২০২৪ সালের ২৩ জুন। যার মামলা কোর্টে চলমান। এসআই আনসারুল ইসলাম আরো জানান ,এই মামলায় তিনি শুরু থেকেই তদন্ত করেছেন।

মামলার আসামী পক্ষের এ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন এই মামলার আসামী তিনজনের একজন কোর্টে শিশু হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছে। এরমধ্যে জাকির হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন জামিনে আছে। প্রধান আসামী হাসিবুর রহমান এখনও জেল হাজতে আটক আছে। আগামী ৭ আগষ্ট মামলার শুনানী দিন ধার্য্য আছে।

এদিকে দ্রুত বিচার আদালতে মামলা চললেও জামিনে থাকা আসামী জাকির, আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তাদের পরিবার ও হাসিবুরের পরিবারের পক্ষের লোকজন বাদীপক্ষকে প্রতিনিয়ত প্রাননাশের হুমকি ধামকি দিচ্ছে। তাদের অব্যহত প্রাণনাশসহ নানা হুমকিতে বাদিসহ তার পরিবারের অন্যান্যরা প্রানহানির আশঙ্কায় রয়েছেন। এজন্য ভুক্তভোগী পরিবারটি এখন বিচারহীনতায় ভুগছে। তিনি এই মামলার অগ্রগতিসহ দোষীদের বিচার চান।

তিনি আরো জানান,এই মামলাটি দ্রুত বিচার চলছে। গত বছর মামলার চার্জশীট প্রদান করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা তবুও আমরা এখনও এর কোন বিচার পাইনি উপরোন্ত আসামীদের অব্যাহত হুমকিতে বিচার পাবো কিনা বুঝতে পারছিনা। আসামীপক্ষ খুনের স্বীকারোক্তি দেওয়ার পরও নিজেদেরকে শিশু প্রমান করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে ও প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। এমনকি একজন আসামীকে তারা শিশু প্রমান করেছে কোর্টে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে। অথচ তাদের বয়স ঐ সময়েই ১৯ বছর ছিল। আমি কোর্টের কাছে আমার পুত্রের খুনের সঠিক বিচার চাই।

বাবি বলেন,আমার পুত্র আব্দুল্লাহ একাদশ শ্রেনীর ছাত্র ছিল অভাব অনটনের কারনে সে পড়াশোনার পাশাপাশি ইজিবাইক চালাত। সে হত্যার শিকার হয়েছে নিজেরই ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের হাতে। এর চেয়ে দুখেঃর আর কি কিছু হতে পারে?

স্থানীয়র জানিয়েছেন, বাবা মায়ের সংসারে সাহায্য করতে এবং নিজের পড়ার খরচ যোগাতে ইজিবাইক চালাতো আব্দুল্লাহ। গেল বছরের ৯ নভেম্বর উঠতি তিন সন্ত্রাসীর হঠাৎ পরিকল্পনা ইজিবাইক ছিনতাইয়ের। তার বলি হয় আব্দুল্লাহ। এদিন রাত সাড়ে ৮ টায় আব্দুল্লাহ নিখোঁজ মর্মে থানাকে অবহিত করা হয়। এরপর ঘড়ির কাটায় রাত সাড়ে ১১ টা। পাশের ঘুরুলিয়া মাঠের একটি ধানক্ষেতে মেলে রক্তাক্ত লাশ। পুলিশ তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে শনাক্ত করে আটক করে উপরে উল্লেখিত ওই ৩ জনকে।

এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, মামলার তিন আসামিকেই আটক করে এখন জেল হাজতে পাঠনে হয়েছে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। এখন বয়স বেশি কমের বিষয় বা তাদের জামিনের বিষয়টি পুলিশের নয়। এছাড়া এসব বিষয় এখন আদালতের এখতিয়ারে। আমাদের কাছে বাদি ও তার পরিবার আসামীদের অব্যহত হুমকির বিষয়ে জানিয়েছেন, আমরা এ ব্যাপারে সকর্ততার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পুলিশ প্রকৃত দোষীদের শান্তি পাইয়ে দিতে বদ্ধ পরিকর ।