যশোর প্রতিনিধি: যশোরের বেনাপোল কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা (সুপার) জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে লাগামহীন ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। কাস্টমসের চেকিং নামে সাধারণ মানুষদের নানাভাবে হয়রাণি করা হচ্ছে। তার চাহিদামত ঘুষ না দিলে সাধারণ মানুষের মালামাল কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ। ঘুষ নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই অনেকের মাল ডিএম করা হচ্ছে। দিনের পর দিন হয়রানি করায় সিঅ্যান্ডএফ মালিক ও কর্মচারীদের মাঝে চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সূত্র জানায়, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারে দোসর ছাত্রলীগ ক্যাডার রাজস্ব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল কাস্টমসে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। দোসর সরকারে আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার আসার পরও বন্ধ হয়নি তার ঘুষ বাণিজ্য। একের পর এক চালিয়ে যাচ্ছে তার সকল অপকর্ম। শুধু তাই নয়, পতিত স্বৈরাচার সরকারের আমলে নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের টটস্থ করে রাখতেন এই দোসর।
জাহাঙ্গীর আলম বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশনে দীর্ঘদিন ধরে শক্তিশালী ল্যাগেজ সিন্ডিকেট তৈরি করে এবং ল্যাগেজ প্রতি মোটা টাকা উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ করছেন সুপার জাহাঙ্গীর আলম। টাকা না দিলেই পাসপোর্ট আটক করে মানুষ জিম্মি করে অর্থবাণিজ্য অসদাচরণ ও হয়রানিসহ বিস্তর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
রাজস্ব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সম্পর্কে একাধিক মানুষ অভিযোগ করেন, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তানিয়া হোসেন দুজন মিলে ভারত ফেরত যাত্রীদেরকে লাগেজ চেকের নামে জিম্মি করে। একজন পাসপোর্ট যাত্রী ২০ কেজি পণ্য নিয়ে আসলে তার কাছে মোটা অংকের অর্থ দাবি করেন। দাবিকৃত অর্থ না দিলে তাকে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখেন। এরপর সেখানে থাকা কর্মচারিদের দিয়ে লেনদেন করতে বাধ্য করেন। টাকা দেওয়ার পর ওই যাত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আবার টাকা না দিলে সেসব পণ্য ডিএম করে দেন।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টম্বর) কমলেশ নামে এক ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে তার খালার বাড়ি বেড়াতে আসছিলেন। তিনি কিছু খাবার ও ৪টি কম্বল নিয়ে আসেন। তার কাছে মোট ১৫ কেজি মসালামাল ছিলো। তার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে অস্বীকার করায় রাজস্¦ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীরের নির্দেশে সহকারী রাজস্ব কমকর্তা তানিয়া হোসেন তার মালামাল আটক করে তাকে নি:স্ব করে ছেড়ে দেয়। পরে তিনি কান্না করতে করতে ইমিগ্রেশনের বাইরে আসেন।
একই দিন ভারত থেকে চিকিৎসা করে দেশে ফিরছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন নামে খুলনার এক নাগরিক। তিনি বাড়ি স্ত্রী-সন্তানের জন্য চকলেট, বিস্কুট, সাবান, শ্যাম্পুসহ বাড়ির ব্যবহারের কিছু পণ্য নিয়ে আসেন। ইমিগ্রেশনে আসার পর তার কাছে থাকা সব মালামাল কেড়ে নেন ওই দুই কাসটমস কর্মকর্তা।
কাস্টমসের একটি সূত্র জানায়, সুপার জাহাঙ্গীর আলম যেদিন ডিউটি করেন। সেদিন আটক পণ্য কর্মচারি দিয়ে বস্তায় ভরে মালামাল নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। এসব পণ্য তিনি নিজে ব্যবহার করেন, আত্মীয় স্বজনকে দেন এমনকি বিক্রিও করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জানান, সুপার জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে কাস্টমস কমিশনার মনে করেন। তিনি সকলের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। ছাত্রলীগ করার কারণে কাউকে মানুষ মনে করেন না। এখনো তার একই রকম অবস্থা। কেউ তার সাথে কথা বলতে গেলে এমন ভাব করেন যে তিনি ছাড়া আপর কেউ নেই কস্টমস কর্মকর্তা। তার দুর্ব্যবহার শিকার হয়নি এমন লোক খুব কম আছে।
সুপার জাহাঙ্গীর আলমের রুমে গিয়ে এ প্রতিবেদক নিজের পরিচয় দিলে তিনি বলেন, আপনার জন্য কি করতে পারি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কারো কাছ থেকে টাকা নিই না। আমার বিষয়ে যে সকল অভিযোগ সব মিথ্যা। কিছু মানুষ এখানে সুযোগ সুবিধা চায় আমি না দেওয়ায় তারা এসব অভিযোগ করছে।