বিশেষ প্রতিনিধি
যশোর জেলা পরিষদের অফিস সহায়ক পদে চাকুরী করে কোটি টাকা মূল্যের আলিশান বাড়ি নির্মাণের নজির সৃষ্টি করেছেন সরোয়ার উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি। প্রথমে এ দপ্তরে মাস্টার রোলে তার পর নিয়মিত করণ তারপর চেয়ারম্যানের আস্তাভাজনের সুযোগে ভাগ্যর চাকা খুলে এখন সে কোটিপতির তালিকায়। হঠাৎ করে দোচালা টিনের ছাউনী থেকে কনস্ট্রাকশনে নির্মিত কোটি টাকা ব্যয়ের টার্গেটে নির্মানাধীন ভবন দেেেখ সকলকে হতবাক করে দিয়েছে।
জেলা পরিষদ সূত্রের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাগেছে,১৯৯৪ সালে যশোর জেলা পরিষদে অফিস সহায়ক (পিয়ন) দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে (মাস্টার রোল) সরোয়ার উদ্দীনের যোগদান। দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে থাকা অবস্থায় যশোর সদর উপজেলার বাইরের উপজেলা চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদাহ গ্রামে বাড়ি হওয়ায় তিনি ১৯৯৮ সালে পরিবার নিয়ে জেলা পরিষদের অভ্যন্তরে বসবাস শুরু করেন। ২০০৫ সালে শহরের পুরাতন কসবা কাঁঠালতলা এলাকায় ব্যুরো বাংলাদেশ অফিসের পাশে এক মহিলার কাছ থেকে আড়াই শতক জমি কেনেন। ২০০৫ সালে তার চাকুরী নিয়মিত করন লাভ করেন। তিনি দোচালা টিনের ঘর তৈরী করে জেলা পরিষদ অভ্যন্তরের আবাসিক ভবন থেকে পরিবার নিয়ে ২০১১ সালে বেরিয়ে নিজের জমিতে নির্মাণ করা দোচালা টিনের ঘরে ওঠেন। টিনের ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করাকালীন সময় সরোয়ার উদ্দীন জেলা পরিষদে কর্মচারী পদে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। সে কর্মচারীদের নেতা হওয়ার সুবাদে অফিস সহায়ক পদে কর্মচারী হলেও তিনি চেয়ার টেবিল নিয়ে পরিষদের একটি কক্ষে অবস্থান নেন। এখানেই শেষ নয়। তিনি জেলা পরিষদে অফিস সহায়ক পদে চাকুরী করলেও চেয়ার টেবিলে বসে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। স্বপ্ন দেখেন বিশাল আলিশান বাড়ির। এক সময় জেলা পরিষদে সরকার কর্তৃক প্রথমে প্রশাসক পরে চেয়ারম্যান পদে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির পদ সৃষ্টি হয়। যশোর জেলা পরিষদে প্রথম পর্যায়ে প্রশাসক পদে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে প্রায়ত শাহ্ হাদীউজ্জামান অধিষ্ঠিত হন। শাহ্ হাদীউজ্জামানের পর চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি হওয়ার পর সাইফুজ্জামান পিকুল অধিষ্ঠিত হন। সাইফুজ্জামান পিকুল চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর অফিস সহায়ক সরোয়ার উদ্দীন জেলা পরিষদের কর্মসূচীর ফাইল নিয়ে আনা নেওয়া শুরু করেন। মূলত জেলা পরিষদের সেবা মূলক ও উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডর জন্য তৈরী করা ফাইল বোগলে করে চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুলের কক্ষে গিয়ে নিজেকে তার অনুগত হওয়ার প্রচেষ্টা। তখন চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল তার পিএস হিসেবে শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের এজাজকে নিয়োগ দেওয়ায় সরোয়ার উদ্দীনের উদ্দেশ্যে তেমনভাবে সফল হয়নি। এরপর চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুলের প্রথম ৫ বছরে মধ্যে এজাজ জেলা পরিষদের অধীনে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড কর্মসূচী পালনের নিশ্চিয়তা দিয়ে হাতিয়ে নেন কোটি টাকা। এরপর প্রথম ৫ বছরের শেষ হওয়ার আগেই এজাজ আত্মগোপনে চলে যান। তখন এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় দফা চেয়ারম্যান হওয়ায় সাইফুজ্জামান পিকুলের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন সরোয়ার উদ্দীন। জেলা পরিষদ থেকে সেবা মূলক প্রকল্প বিভিন্ন স্কুল,মাদ্রাসা,মসজিদ,মন্দিরসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে ১লাখে ৩০ শতাংশ সরোয়ার উদ্দীনকে দিতে হতো। সরোয়ার উদ্দীন জেলা পরিষদে চাকুরী করার সুবাদে চেয়ারম্যানের সাথে চুক্তি করে মাত্র আড়াই বছরে লাখে ৩০% টাকা হাতিয়ে নিয়ে কোটিপতি বনে যান। যশোর জেলা পরিষদের আওতাধীন সম্পত্তি নিজের সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করে কোটিপতি বনে যাওয়ার পর তার কেনা দোচালা টিনের ঘর থেকে ওই জমির পাশে এক বাড়িতে ভাড়া যান। এরপর ২০২৩ সালের শেষের দিকে নিজের আড়াই শতক কেনা জমিতে কনস্ট্রাশন দিয়ে ৫তলা ভবনের কাজ শুরু করেন। ৫ম তলা ভবনের দ্বিতীয় তলা ভবনের ছাদ সম্পূর্ন হয়েছে। এখন ওই ভবনের কক্ষ বসবাসের জন্য কাজ চলমান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, সরোয়ার উদ্দীন এখানে অফিস সহায়ক পদে চাকুরী করে জেলা পরিষদ থেকে প্রকল্প গ্রহনের চুক্তি করতো এ পরিষদের ঠিকাদার ও বিভিন্ন সামাজিক মূলক প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সাথে। তার সাথে চুক্তিতে আসলে নূন্যতম ৩লাখ টাকা থেকে তার উপরের অংকের কাজ অনায়াসে পেতে যেতেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।সরোয়ার উদ্দীনের বিরুদ্ধে চৌগাছাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানুষ ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ দিলেও আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। শুধু তাই নয় এ পরিষদের একজন কর্মচারী হয়ে তিনি প্রকল্পের নাম ফলকে তার নিজের নাম বসিয়ে রের্কড সৃষ্টি করেছেন। এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে।তিনি সামান্য নিন্ম পর্যায়ের কর্মচারী ফাইল নিয়ে কাজ করানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এ পর্যন্ত জেলা পরিষদের যে সব প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করে গেছেন,তারা সরোয়ার উদ্দীনের কর্মকান্ডে হতাশ। তার কারণ পরিষদের চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন থাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতেন না। বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান বলেন,সরোয়ার উদ্দীন সম্প্রতি বিদায় নেয়া চেয়ারম্যানের লোক হিসেবে পরিষদে যা ইচ্ছা তাই করেছেন।