পরাজিত ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর নেতাকর্মীরা এখনও আত্মগোপনে

পটুয়াখালী প্রতিনিধি: ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর পটুয়াখালী-৪ আসনের মহিপুর থানার কয়েকটি ইউনিয়নে ছড়িয়ে পরে সহিংসতা। নির্বাচনের ১৯ দিন পার হলেও সহিংসতার রেশ রয়ে গেছে। পরাজিত ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থিত নেতাকর্মীরা এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন। হামলা এবং লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে বাজার ঘাটে উঠতে পারছেন না অনেকে। খুলতে পারছেন না নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে ঈগল সমর্থিত ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে।

তাদের মতে, এখন পর্যন্ত অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী বিভিন্নভাবে হামলার শিকার হয়েছেন। হামলার শিকার হলেও অনেকে মামলা করতেও সাহস পাচ্ছেন না। যার ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ফলে জিমিয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের মাঠ পর্যায়ের রাজনীতি।

সর্বশেষ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় লতাচাপলী ইউনিয়নের ডংকুপাড়া গ্রামের বটতলা নামক স্থানে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন বরিশাল বিএম কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র আসাদ মোল্লা। প্রতিপক্ষরা তাকে কুপিয়ে জখম করে। গুরুতর আহত আসাদ বর্তমানে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আসাদ মোল্লা লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা এবং কুয়াকাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লার ভাতিজা। তবে এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

একইদিন আলীপুর থ্রিপয়েন্ট এলাকায় হামলার শিকার হন ইসমাইল ফরাজী নামের এক যুবক। প্রতিপক্ষরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তার দুই পায়ের হাঁটু পর্যন্ত থেঁতলে দিয়েছে। ইসমাইল ফরাজী বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সে লতাচাপলী ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের পান্না মিয়া ফরাজীর ছেলে।

এর আগে নির্বাচনের পরদিন ৮ জানুয়ারি আলীপুর চৌরাস্তায় হামলার শিকার হন মোশাররফ মোল্লা। তাকেও হাতুড়ি পেটা করে প্রতিপক্ষরা। সপ্তাহখানেক বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাসায় আনা হয়েছে তাকে। মোশাররফ মোল্লা লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা এবং কুয়াকাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লার ছোট ভাই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি (রোববার) রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে আজ সোমবার (২২ জানুয়ারি) পর্যন্ত পটুয়াখালী-৪ আসনের মহিপুর থানার লতাচাপলী, মহিপুর, ধুলাসার, ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন ও কুয়াকাটা পৌর এলাকায় অন্ততপক্ষে অর্ধশত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ৫০জন আহত হয়েছেন। তারা জানান, স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের সমর্থক বেশ কয়েকজন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলতে পারছেন না। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান স্থানীয়রা।

লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, প্রতিনিয়ত আমার হাত, পা কেটে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি চাই প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করা হোক। সুষ্ঠু ধারায় রাজনীতি চলুক।

লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমান বিশ্বাস বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার বিষয়গুলো উপজেলা নেতাদের অবহিত করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব তালুকদার বলেন, নির্বাচন পরবর্তী যারা সহিংসতা করছে তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচনী পরবর্তী কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে স্বীকার করে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধে মহিপুর থানা পুলিশ সবসময় সতর্ক আছে। যারা সহিংসতা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, পটুয়াখালী-৪ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে টানা দ্বিতীয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যক্ষ মহিববুর রহমান মহিব। তিনি বর্তমানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান তালুকদার।