কেশবপুরের ভালুকঘর ফাযিল মাদ্রসার গভণিংবডির প্রথম সভা বয়কট করলেন অভিভাবক সদস্যরা

যশোর প্রতিনিধি: ভালুকঘর ফাযিল মাদ্রসার প্রশ্নবিদ্য গভণিংবডির প্রথম সভা বয়কট করেছেন নির্বাচিত অভিবাবক সদস্যরা।এ সভায় অনপস্থিত ছিলেন আরো দুই সদস্য। রোববার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) এর সভা কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগসহ বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কমিটির প্রথম সভা যারা বয়কট করেছেন তারা হচ্ছে অভিভাবক সদস্য হায়দার আলী, মানজুরুল ইসলাম ও রেজাউল ইসলাম। অন্য যে দু’জন সদস্য অনপস্থিত ছিলেন তারা হলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, মিটিং’র বিষয় তাঁকে অবহিত করা হয়নি। তাছাড়া তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারীকে সহসভাপতি সহসভাপতি মনোনীত করার পর থেকে তিনি মিটিংএ অংশ নিচ্ছেন না বলে জানান। এব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলে রবিবারের মিটিংএর বিষয় আমি অবগত নই। তাছাড়া বড়ভাই মারা যাবার কারণে শনিবার থেকে কর্মস্থলে ছিলাম না
নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য হায়দার আলী জানান, তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানে দু’বার অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে তিনি ভালুকঘর হাইস্কুল এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হয়ে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু বর্তমানে ভালুকঘর মাদ্রসায় যে অরাজগতা চলছে তা তিনি কখনও দেখেননি। তিনি বলেন, মিটিং হওয়ার অনন্ত ৩ দিন আগে নোটিশে স্বাক্ষর করানো হয়। নোটিশে এজেন্ডা থাকে। এখন মনে হয় এসব আর প্রয়োজন হয় না। ”নাকি সরকারি কোন কর্মকর্তা সভাপতি হলে এসব লাগে না”।
 তিনি বলেন, এবার অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের পর থেকে প্রতিষ্ঠানে শনির আছর পড়েছে। শিক্ষকরা পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে লবিং গ্রুপিং এবং নিয়োগ বানিজ্য নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যে কারণে এবার বোর্ড পরীক্ষায় পাশের হার অর্ধেকের নীচে নেমে এসেছে।
হায়দার আলী বলেন,অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের পর ”আমরা আশা করেছিলাম একজন যোগ্য সভাপতি মনোনয়নের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে।কিন্তু কয়েকজন বির্তকিত শিক্ষকের কারণে তা সম্ভব হয়নি। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সর্বশেষ অনুমোদিত কমিটিতে ৪ নং ক্রমিকে যার নাম বিদ্যোৎসাহী সদস্য করা হয়েছে প্রথমে তার নাম সভাপতি মনোনয়ন চেয়ে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে কিভাবে তিনি নীচে নেমে সদস্য হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনুরুপ শিক্ষক প্রতিনিধি কোটায় ৬ ও ৮ নং ক্রমিকে যাদের মনোনীত করা হয়েছে। তারা আদেও শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত হননি। শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনী সভায় তৎকালীন আরবি প্রভাষক মুজিবর রহমান এবং ইংরেজির প্রভাষক রানা নির্বাচিত হন। কিন্ত তাদের কমিটিতে নাম নেই। রাতারাতি কিভাবে তাদের নাম পাল্টানো হলো তা কেউ জানেন না।
 তিনি দাবি করেন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিশ^বিদ্যালয়ের যে বিধি বিধান রয়েছে তার কোনটি অনুস্বরণ করা হয়নি।
 এবিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ে দায়ের করা অভিযোগ তদন্ত হওয়ার আগেই একটি ভুয়া তদন্ত রিপোর্টের স্মারক দিয়ে এডিসিকে সভাপতি মনোনয়ন দেয়া হয়। বিষয়টি বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পর সেই অবৈধ সভাপতিকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োজন করেন। তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন চেয়ে লিখিত আবেদন করা হলেও কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেননি।
 এদিকে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন না হলেও এলাকার অভিভাবক মহল আশা করেছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা যেহেতু বিষয়টি তদন্ত করবেন তাতে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। কিন্ত ক্ষমতালোভী ওই কর্মকর্তা নিজের বিরুদ্ধের অভিযোগ নিজেই তদন্ত করে পুর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি হয়ে তড়িঘড়ি নিয়োগ বানিজ্যে নেমেছেন।
 হায়দার আলী বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের পত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে সরেজমিন তদন্ত করতে হবে। কিন্ত তিনি সরেজমিন না গিয়ে তার অফিসে বসে নিজের ইচ্ছেমত তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। হায়দার আলীর প্রশ্ন বিধি বিধান কি শুধু সাধরণ মানুষের জন্য? এডিসি বা সরকারি কর্মকর্তদের ক্ষেত্রে কি এসব প্রযোজ্য নয়?
হায়দার আলী বলেন, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্ত তারা যদি অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে ইতরের পদাংকা অনুস্বরণ করে তা হলে তাদের কাছ থেকে আমাদের সন্তানরা কি শিখবে?। বা তারা কি শিখাবেন। আবার সেই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা প্রতিষ্ঠনপ্রধান যদি হন ওই দলের তা হলে সেই প্রতিষ্ঠানে কি হবে তা অনুমেয়।
 প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্র মনিরুজ্জামান জানান, এমন কোন অনিয়ম নেই যা অত্র প্রতিষ্ঠানে হচ্ছেনা। তিনি সভাপতির দিকে আঙ্গুল তুলে বলেন গাছের মূলে যদি পচন ধরে তাহলে অন্য অংশ পচে দুগন্ধ ছড়াবে এটিই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালরের বিধি অনুযায়ী পুনাঙ্গ কমিটি অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত সভাপতি মিটিং করা রেজুলেশন বা অন্যান্য বিষয়ে ক্ষমতা প্রাপ্ত হবেননা। অর্থাৎ তিনি বেতনবিলে স্বাক্ষর ছাড়া অন্য কোন সিদ্ধান্ত নিতে পাবনে না। কিন্তু তিনি নিয়ম না মেনে একাধিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেছেন।
মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতিষ্ঠানের জমি লিজ সংক্রান্ত একটি অনিয়মের অভিযোগ তার কাছে দেয়া হয়। তিনি তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের আশ^াস দিলেও প্রায় ৬ মাস গড়িয়ে গেলেও তদন্ত হয়নি।
এসব ব্যাপারে মাদ্রসার ভার প্রাপ্ত অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ”আমি সদ্য দায়িত্ব পেয়েছি। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। তবে প্রথম সভায় অভিভাবক সদস্যদের বয়কট এবং অপর দুই সসদস্য অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এবিষয়ে মাদ্রসার সভাপতির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাঁর অফিসে গিয়ে কথা বলার আহবান জানান।