বিনোদন ডেস্ক : কিছুদিনের বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয়েছে দুই ঢালিউড নায়িকা অপু বিশ্বাস ও শবনম বুবলীর ভার্চুয়াল বাকযুদ্ধ। ফের তারা ফেসবুক ও সংবাদ মাধ্যমে একে অন্যকে কথার তিরে বিদ্ধ করছেন। যদিও কেউ কারও নাম নিচ্ছেন না সরাসরি। তবে বুঝতে কারও বাকি নেই কে কাকে কী বলছেন। আর দুই নায়িকার এই বাকযুদ্ধে বরাবরের মতোই চুপ তাদের প্রাক্তন স্বামী শাকিব খান।
এর আগেও একাধিক বার কথার যুদ্ধে জড়িয়েছেন অপু ও বুবলী। প্রতিবারই নিজের মুখটা বন্ধই রেখেছেন ঢালিউড কিং। এবারও তিনি ‘স্পিকটি নট’। যখন অধিকার ছিল, তখনই বলেননি কিছু। আর এখন তো শাকিব খানের কথায়, অপু-বুবলী দুজনই তার জীবনে অতীত! তাহলে এখনই বা তাদের ব্যাপারে মুখ খুলবেন কেন।
তার পরও প্রাক্তন দুই স্ত্রীর একে অন্যকে নিয়ে তির্যক মন্তব্যে তার কী বক্তব্য, তা জানতে শাকিব খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল ঢাকা টাইমস। কিন্তু কিং খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, শুটিং করতে গিয়ে আহত হয়ে বর্তমানে পূবাইলে নিজের শুটিং বাড়ি ‘জান্নাত’-এ বিশ্রামে রয়েছেন শাকিব খান। সম্প্রতি ‘আগুন’ সিনেমার মারপিটের দৃশ্যধারণের সময় পায়ে চোট পান কিং খান। হাসপাতালে গিয়ে এক্স-রে করার পর জানা যায়, তার ডান পা মচকে গেছে। সে কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে কয়েক দিনের বিশ্রামে অভিনেতা।
তারই মধ্যে বাকযুদ্ধে নেমেছেন শাকিব খানের প্রাক্তন দুই স্ত্রী অপু বিশ্বাস ও শবনম বুবলী। গেল ভালোবাসা দিবসে ছেলে শেহজাদ খান বীরকে সঙ্গে নিয়ে পূবাইলের বাড়িতে শাকিবকে দেখতে গিয়েছিলেন বুবলী। সেখানকার একটি ভিডিও ফেসবুকে পোস্টও করেন। ওই ভিডিওতে ছেলের সঙ্গে নায়িকাকে বেশ হাস্যজ্জল দেখা যায়।
এরপর বুবলীকে ইঙ্গিত করে অপু বিশ্বাস সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘উনি যা যা করছেন বা করেন, তা তো আমার সন্তান দেখছেন। আমার সন্তানের তো বোঝার বয়স হয়ে গেছে। এখন জয়ের বয়সীরা অনলাইনে লেখাপড়া করে। আমি নাম বলব না, একজন তো একটা ভিডিও ছেড়েছেন। জয়ও সেই ভিডিও দেখেছে। সুতরাং এসব ভিডিওতে তার ওপরও তো প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আমি তো সেই কাজটি করব না। আমি আমার সন্তানকে সঠিক পথে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব।’
নায়িকা আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, আমার পারিবারিক শিক্ষা মানুষকে সম্মান দেওয়া, ক্ষতি করা নয় এবং আমি সেটা করার চেষ্টা করি। কে কাকে ছোট করছে, সেই বোধবুদ্ধি আমার আছে। আমি অনেক দিন থেকেই এসব বিষয় নিয়ে মিডিয়া এড়িয়ে চলতে চেয়েছি। কিন্তু সিনেমার মানুষ হওয়ায় মিডিয়ার সামনে কথা বলতে গিয়ে টুকটাক তা সামনে চলে আসে।
অপুর এই ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে এলে চুপ থাকতে পারেননি বুবলীও। রীতিমতো বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সোশাল হ্যান্ডেলে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে উগরে দেন ক্ষোভ। যদিও কারও নাম উল্লেখ করেননি তিনি। তবে দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে কারও বিন্দুমাত্র কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
শুরুতেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন বুবলী। তার স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, ‘আমি একটি কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, কারও নোংরা ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে আমাকে নিয়ে বা আমার ব্যক্তিজীবন নিয়ে কেউ কোনো বেফাঁস মন্তব্য করলে বা কোনো ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলার চেষ্টা করলে, তার বা তাদের বিরুদ্ধে আমি দেশের প্রচলিত আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
বুবলী লেখেন, ‘কিছুদিন পর পর যে ব্যক্তি এসব নোংরা খেলা শুরু করেন বা যাদের দিয়ে করান, তাদের সমস্ত কিছু সোশাল মিডিয়া, পত্রিকা এবং ইউটিউবে রয়েছে; যা ডকুমেন্ট হিসেবে যথেষ্ট এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে অপুর খোঁচার বিপরীতে বুবলীর জবাব, ‘আমার পারিবারিক শিক্ষা আমাকে কখনোই দুমুখো সাপের আচরণ করতে শেখায়নি, সুবিধাবাদী হতে শেখায়নি, ধর্ম নিয়ে একেক বার একেক মিথ্যা কথা বলে সাধারণ জনগণের আবেগ নিয়ে খেলা করে বোকা বানাতে শেখায়নি, গিরগিটির মতো রঙ বদলাতে শেখায়নি, কাউকে ছুরি মেরে পরক্ষণেই নিজের কোনো সুবিধা হবে ভেবে সেই ছুরি মারা জায়গায় ব্যান্ডেজ করতে শেখায়নি।’
বুবলীর অভিযোগ, তার সন্তান শেহজাদ খান বীরকে নিয়েও ইঙ্গিতপূর্ণ কটূক্তি করেছেন অপু বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘কত বাজে, নিচু মানসিকতার হলে সে এক নিষ্পাপ বাচ্চাকেও কটূক্তি করতে ছাড়েনি। কিছু দিন আগে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে আমার সন্তানের গেটআপ নিয়ে ক্যামেরার সামনে বানরের মতো মুখ ভেংচি কেটে বাজে মন্তব্য করতে ছাড়েনি।’
অপুকে উদ্দেশ্যে বুবলী আরও লেখেন, ‘সারাক্ষণ নানা মিথ্যা, বানোয়াট, উসকানিমূলক ব্যক্তি বিষয়ে কথা বলে; অথচ পরে আবার বলবে, সে ব্যক্তি বিষয়ে কথা বলে না। সারাক্ষণ মানুষকে ছোট করে কথা বলবে, কিন্তু পরে বলবে, সে মানুষকে ছোট করে কথা বলে না! কী অদ্ভুত! একেক সময় একেক রঙ ধারণ করে মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার নগ্ন খেলা এসব বহুরূপী নিচু মানসিকতার ব্যক্তিই পারে। লজ্জা!’
এরপর একই দিন রাতে একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘জীবন মানে যুদ্ধ। ব্যক্তি জীবনে যখন ১০০ সিনেমা পার করেছি, তারপরও আমাকে যুদ্ধ করতে হয়েছে। যুদ্ধের বিপরীতে কেউ যেতে পারে না। আমাদের বাংলাদেশটা যুদ্ধের মাধ্যমেই পেয়েছি। সুতরাং যাদের জীবনে যতটুকু যুদ্ধ আসবে, তাদের মনে রাখতে হবে আপনি সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন; যার কারণে পেছন থেকে আক্রমণ আসছে। কখনোই বিচলিত হবেন না। সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাবেন আপন গতিতে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে শাকিব খানের সঙ্গে তার বিয়ে এবং সন্তান শেহজাদের জন্মের কথা প্রকাশ্যে আনেন বুবলী। সে সময়ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অপু বিশ্বাসের সঙ্গে তার তর্যা চোখ এড়ায়নি কারও। এছাড়া বুবলীর ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তো অপুর সঙ্গে তার বাকযুদ্ধ লেগেই থাকতো। সে সময় শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে ধারাবাকিভাবে কাজ করছিলেন বুবলী।
ওই সময় অপু বিশ্বাস ছিলেন শাকিব খানের স্ত্রী। তিনি নাকি নিজের স্বামীকে বুবলীর সঙ্গে কাজ করতে নিষেধ করতেন। কারণ, তখন কিং খানের সঙ্গে তার নতুন নায়িকা বুবলীর প্রেমের খবরে এফডিসিপাড়া সরগরম। যদিও শাকিব বা বুবলী কখনো সেই সম্পর্কের কথা সে সময় স্বীকার করেননি।
পরে তো অপুর আশঙ্কাই সত্যি হয়। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি তাকে তালাকের নোটিশ পাঠান শাকিব। পরের বছরই বুবলীকে বিয়ে করেন। কিন্তু টেকেনি শাকিব-বুবলীর সংসারও। গত বছরের শুরুতেই নাকি তাদের ডিভোর্স হয়েছে। দুই সংসারে কিং খানের দুই ছেলে আব্রাম খান জয় ও শেহজাদ খান বীর। স্ত্রীরা অতীত হলেও সন্তানরা এখনো বর্তমান তার জীবনে।