ঢাকা অফিস: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী একই অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার রুবিনা খানম মিলে গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। এমন অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন আবজাল হোসেন। এছাড়া তার স্ত্রী রুবিনা খানম অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে গেছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ জুন জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে এ দম্পতির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। একটি মামলায় অবৈধভাবে অর্জিত ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার ১৭৫ টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়। অপরটিতে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৩২ টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া আরও ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। তবে তিন বছর পার হলেও এসব মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি দুদক।
মামলা দুটির আলাদা তদন্তের দায়িত্ব পান দুদকের উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম। কিন্তু তৌফিকুল ইসলাম সম্প্রতি অবসরে গেলে তার তদন্তে থাকা এ মামলার তদন্তের ভার যায় আরেক উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলামের কাছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, মামলা দুটির কোনোটিতেই তদন্ত কাজ এখনও শেষ হয়নি। তৌফিকুল ইসলামের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার তদন্ত কাজ শেষের দিকে। এই অবস্থায় তিনি অবসরে গেছেন। আর শহিদুল ইসলামের মামলার তদন্তও শেষ করতে পারেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিচারের অপেক্ষায় কারাগারে দিন কাটছে আবজাল হোসেনের। তবে তার স্ত্রী অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে গেছেন। সেখানেও তাদের বাড়ি রয়েছে। করোনার কারণে কারাগারে দেখা স্বাক্ষাৎ একেবারে বন্ধ হওয়ায় আবজালকে দেখতে কেউ কারাগারে যাননি। কিন্তু তিনি নিয়মিত কারাগার থেকে মুঠোফোনে পরিবার ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন।
আবজাল হোসেন ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার। তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ব্যবসা করেছেন।
এদিকে মামলার এজাহারে বলা হয়, আবজাল হোসেন একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে জমি, প্লট, বাড়িসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। এ অভিযোগে আবজাল ও তার স্ত্রীকে সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার নোটিশ দেয় দুদক। নোটিশ পেয়ে আবজাল ও তার স্ত্রী দুদকের কাছে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেন।
আবজাল সব মিলে ৩০ হাজার টাকার মতো বেতন পেতেন। অথচ চড়তেন নিজস্ব দামী গাড়িতে। ঢাকার উত্তরায় তার ও স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি।
মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের উপ-পরিচালক আরিফ সাদেক ঢাকা টাইমসকে বলেন, এই মুহূর্তে আবজালের বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য নেই।
আবজাল হোসেনের আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, তিনি (আবজাল হোসেন) এখন কাশিমপুর কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
কে এই আবজাল:
আবজাল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুরে। ১৯৯২ সালে তৃতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তার। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঁচটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে অফিস সহকারী পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন তিনি। ২০০০ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন।
জানা গেছে, উত্তরায় ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের একটি ভবন স্ত্রীর নামে ২০১০ সালে কিনেছিল আবজাল। এ ভবনের ছয় তলায় থাকতেন এ দম্পতি। উত্তরায় একই সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কেও আরেকটি ভবন রয়েছে তার।