নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে দুদকের পৃথক পাঁচ মামলায় পৃথক পৃথক ধারায় নড়াইল সদর ইউনিয়ন ভুমি অফিসের সাবেক কর্মকর্তার ৮৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সাজাপ্রাপ্ত আসামি নারায়ন চন্দ্র বিশ্বাস নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শুক্তগ্রামের মৃত প্রিয় নাথ বিশ্বাসের ছেলে। তিনি ভূমি তহশীলদার হিসেবে চাকরি করা কালে বিভিন্ন সময় ভূমি অফিসের উন্নয়ন কর আদায় করে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯শ’ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যা প্রমাণিত হওয়ায় আসামির উপপস্থিতিতে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সামছুল হক এ আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের পিপি আশরাফুল আলম বিপ্লব। তিনি আরও জানান, এছাড়া তাকে আত্মসাতকৃত টাকা রাষ্টের অনুকুলে জমা দিতে হবে। এবং এ পাঁচটি মামলার সাজা একই সাথে (কনকারেন্টলি) চলবে বলে সর্বোচ্চ সাত বছর সাজা খাটা লাগবে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর নড়াইল সদর উপজেলা ভুমি অফিসের কানুনগো হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে নারয়ন চন্দ্রের বিরুদ্ধে নড়াইল সদর থানায় সরকারী কর্মচারী কর্তৃক অসাদাচরন ও সরকারী টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করেন।
মামলায় তিনি উল্লেখ, ১৯৯৯-২০০০ ও ২০০০-২০০১ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের জাল ব্যাংক চালানের মাধ্যমে নারায়ন চন্দ্র ৪ লাখ ৫১ হাজার ৫শ’ ৯ টাকা আত্মসাৎ করেছে। পরে তিনি এ বিষয়ে তদন্ত করে এর সত্যতা পান। পরে তিনি মামলা করেন। আদালতে মামলার পর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক আমিনুর রহমান। তদন্তে সত্যতা পান তিনি। এ ঘটনায় তিনি পৃথক পৃথক ধারায় আদালতে পাঁচটি চার্জশিট জমাদেন। বিচারকালে পাঁচটি মামলায় (সিরিজ) রুপান্তরিত হয়।
প্রতিটি মামলায় চারটি করে ধারায় অভিযোগ প্রমানিত হয়। বৃহস্পতিবার মামলার রায় ঘোষনার দিনে ৭/১৭ নাম্বার মামলার ৪০৯ ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড, একই মামলার ৪৬৭ ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৫ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৪৬৮ ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে
আরও ৪ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৪৭১ ধারায় বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫হাজার টাকা জরিমানা ও ৪ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন। অথাৎ একটি মামলায় তাকে ২২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২৪ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৯ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন। এভাবে আরও দুইটি মামলা অর্থাৎ ৯/১৭ ও ১০/১৭ নাম্বার মামলার একই ধারাগুলোতে একই পরিমান সাজা প্রদান করেন। অর্থাৎ তিন মামলায় ৬৬ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৭২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৫৭ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন।
এছাড়া ৮/১৭ নাম্বার মামলার ৪০৯ ধারায় তিনবছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদন্ড, একই মামলার ৪৬৭ ধারায় দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও দুই হজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৪৬৮ ধারায় দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৪৭১ ধারায় দুই বছরের বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা ও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন। অথাৎ এ মামলায় নয় বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৯ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন। সর্বশেষ ১১/১৭ নাম্বার মামলায়ও এই চারটি ধারায় একই আদেশ দেন। অর্থাৎ এ দুই মামলায় আঠারো বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৮ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুদকের পিপি আশরাফুল আলম বিপ্লব জানান, এ পাঁচটি মামলায় পৃথক ধারায় অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় দুইটি আদেশে মোট ৮৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৯৪ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৭৫ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। তিনি আরও জানান, আত্মসাৎকৃত টাকা তাকে ফেরত দিতে হবে। এছাড়া প্রতিটি মামলার সাজা একসাথে চলবে। গত বৃহস্পতিবার আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন।