ঢাকা অফিস: রাজধানী ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ করতে চলেছে বিএনপি। এক্ষেত্রে তাদের পছন্দ নয়াপল্টন। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ- ডিএমপি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে।
তবে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করতে নারাজ বিএনপি। তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অনড়। দলটির নীতিনির্ধারকরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এ কথা সাফ জানিয়েও দিয়েছেন। এমনকি, সরকার যাতে এ নিয়ে কোনো সংঘাত-উস্কানির পথে না যায়, সেই আহ্বানও রেখেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কিন্তু কেন বিএনপি সোহরাওয়ার্দীর মতো একটি ঐতিহাসিক জায়গায় সমাবেশ করতে চায় না? কী সমস্যা সেখানে?
এই বিষয়টা খোলাসা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। কেন বিএনপি নোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করতে নারাজ, তার তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন দলটির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
ড. মোশাররফ বলছেন, সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের জন্য ছোট প্রবেশ গেট, সংকীর্ণ জায়গা এবং আওয়ামী লীগের স্থায়ী মঞ্চ থাকাটা হচ্ছে প্রধান বাধা। তার যুক্তি, সমাবেশে অনেক মানুষ আসবে। এত মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছোট গেট দিয়ে ঢোকা এবং বের হওয়া কঠিন। এটি প্রথম কারণ।
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বিএনপির এই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নেতা বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বনায়ন ও বিভিন্ন স্থাপনার কারণে সমাবেশস্থলের জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে।
আর তৃতীয় কারণ হিসেবে খন্দকার মোশাররফ বলেন, সমাবেশের পাঁচ-ছয় দিন আগে থেকে মঞ্চ তৈরির কাজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগের কাউন্সিল ৬ তারিখ হলেও পরবর্তী তিন দিনে বিএনপির সমাবেশের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা অসম্ভব।
এই তিন কারণে বিএনপি সোহরাওয়ার্দীর বদলে নয়াপল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয় এলাকায় গণসমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অনড়।
এদিকে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশের স্থান নির্ধারণ নিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গন। যদিও ২৬ শর্তে বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশ করতে অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ- ডিএমপি।
মঙ্গলবার পুলিশের পক্ষ থেকে শর্তযুক্ত এই অনুমতির খবরের পরপরই নয়াপল্টনে সমাবেশ করার পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের হুঁশিয়ারি, ‘বাড়াবাড়ি’করলে বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরের কিছু বেশি সময় বাকি। এত আগেই প্রধান দুই দলের মুখোমুখি অবস্থান দেশের রাজনীতিকে কোথায় নিয়ে যায়— এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে জল্পনাকল্পনা। রাজনৈতিক উত্তাপের আঁচ লাগছে জনমনেও।
ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের স্থানকে কেন্দ্র করে সপ্তাহ দুয়েক ধরে প্রধান দুই দলের নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে। এ নিয়ে গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নয়াপল্টনেই গণসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি।
পরদিন (মঙ্গলবার) ডিএমপি তাদের সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে বিএনপিকে জানিয়ে দেয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বিএনপিকে সমাবেশ করতে ২৬টি শর্ত উল্লেখ করে চিঠি দেওয়া হয়।
এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভীসহ কয়েকজন নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচিকে ঘিরে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যেসব বক্তব্য এসেছে, তাতে ক্ষমতাসীন এই দল এবং বিএনপির মধ্যে মুখোমুখি অবস্থানেরই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপিকে যে সহজে ছাড় দেওয়া হবে না, সে ইঙ্গিত পাওয়া যায় আওয়ামী লীগের নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে।
ইতোমধ্যে ‘সতর্ক পাহারার’ নামে আওয়ামী লীগ ঢাকাকে মোটামুটি অবরুদ্ধ করে ফেলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোর বিষয়টিও প্রকাশ্যে এসেছে। ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে থাকবেন। বিএনপিকে শান্তি নষ্ট করার সুযোগ দেওয়া হবে না।
ঢাকার বাইরের বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে বাধার মুখেও বেশ বড় জমায়েত দেখাতে সফল হয়েছে বিএনপি। এসব সমাবেশ দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙা ভাব তৈরি করেছে।
তবে ঢাকায় ব্যর্থ হলে বিএনপির কর্মীদের সেই চাঙাভাবে ভাটা পড়বে বলেই ধারনা করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সেটাই করতে চায় বলে কানাঘোষা চলছে। এ জন্য কয়েক স্তরের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলটি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সর মিলিয়ে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকও বলেছেন, বিএনপি ঢাকায় কোনো ঝামেলা করলে হেফাজতে ইসলামকে মতিঝিল থেকে যেভাবে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তার চেয়ে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া মঙ্গলবার সচিবালয়ে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ঢাকায় বিএনপির নির্বিঘ্ন সমাবেশের সুবিধার্থে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ এগিয়ে আনা সত্ত্বেও তারা যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়, যদি বাড়াবাড়ি করা হয়, তাহলে সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে গণসমাবেশ করতে মঙ্গলবার বিএনপিকে দেওয়া পুলিশের ২৬টি শর্তের মধ্যে প্রথম শর্তেই বলা আছে—‘এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।’
পুলিশের শেষ বা ২৬ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে—‘জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।’
ডিএমপি থেকে চিঠি পাওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলটি নয়াপল্টনেই ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ করবে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেকে জনস্বার্থের সমাবেশ উল্লেখ করে রিজভী বলেন, এটি হারানো গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সমাবেশ। নয়াপল্টনেই বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে বলে জানান বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা।
দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। আমরা নয়াপল্টনেই গণসমাবেশ করব। নয়াপল্টনে আগেও সমাবেশ হয়েছে, এখনো হবে। এমনকি ভবিষ্যতেও নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশ করবে।’
এদিকে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, ‘বিএনপি অনুমতি চেয়েছে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সমাবেশের জায়গাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যদি তারা তা মানতে না চায় সেটা তাদের ব্যাপার।’