তরুণীকে ভারতে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় পাচার চক্রের প্রধান আশরাফুল আটক

মাধঘোপা নিউজ ডেক্স: বাংলাদেশি তরুণীকে ভারতে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় পাচার চক্রের প্রধান আশরাফুল, তার স্ত্রী ও দুই ভাগ্নেকে আটক করেছে র‌্যাব।

ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যাদের চিহ্নিত করা গেছে, সেই চক্রের মূলহোতা আশরাফুল মন্ডল রাফির বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপাতে। বেঙ্গালুরুতে তার আস্তানাতেই টিকটক ও মডেল বানানোর আড়ালে নারী পাচারকারী চক্রের শক্ত ঘাটি গড়ে ওঠে।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এক তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনার সূত্র ধরে নারীপাচার চক্রের মূলহোতা আশরাফুলকে স্ত্রীসহ আটক করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব হেডকোয়ার্টার থেকে চালানো একাধিক অভিযানের পর স্ত্রীসহ তাকে আটক করেছে। আশরাফুলের বাড়ি ঝিনাইদহের প্রত্যন্ত এলাকায় হলেও সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে বিলাসী জীবন-যাপনের সব সামগ্রী। বাবার সম্পত্তি আছে মাত্র দুই বিঘা আর শিক্ষাগত যোগ্যতায় প্রাইমারীর গন্ডি পেরনো টিকটক আশরাফ রাফি।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নাদপাড়া গ্রামে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো আইনুদ্দিনের পরিবারে। তিন পুত্র আর মেয়ে নিয়ে তার অভাবের সংসার। তার ছোট ছেলে আশরাফুল মন্ডল রাফি অভাবের তাড়নায় এক যুগ আগে বাড়ি ছাড়ে। ঢাকায় গিয়ে কিছুদিন গার্মেন্টেস শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। কয়েক বছর আগ থেকে কৌতুক আর টিকটক করে পরে ইউটিউবে চ্যানেল খুলে কিছু তরুণীদের সঙ্গে মিউজিক ভিডিও তৈরি আপলোড করে। মডেল হবার লোভে আশরাফের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে অসংখ্য তরুণীর। এক পর্যায়ে পাড়ি জমায় ভারতে কিন্তু তার কোনও হদিস পাচ্ছিল না পরিবার। এক বছর পরে গ্রামে তাদের বাবা-মা কে জানায় সে ভারতের বেঙ্গালুরুতে বেশ ভাল আছে। সেখানে তার বাবা-মাকে বেড়াতেও নিয়ে যায়।

শৈলকুপার ৬নং সারুটিয়া ইউনিয়নের নাদপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, সাম্প্রতি একতলা বিল্ডিং নির্মাণ করেছে এই আশরাফুল। বাড়িতে বসিয়েছে এসি, ওয়াশিং মেশিন। টাইলসে মোড়ানো বাড়ি। দামি দামি আসবাব আর বিলাসী সামগ্রীতে মোড়ানো সব ঘর। রয়েছে দামি মোটরসাইকেল।

আশরাফুলের বাবা আইনুদ্দিন জানান, দু’এক মাস পর পরই ৫০-৬০ হাজার করে টাকা পাঠায় আশরাফুল। তা দিয়ে সাংসারিক খরচ চালানো হতো। আশরাফের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরিতে মিলেছে শত শত ভারতীয় নাগরিকের মোবাইল নম্বর। এছাড়াও রয়েছে পাসপোর্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক।

ডায়েরিতে আশরাফুলের স্ত্রী বন্যা খাতুন এক জায়গা লিখেছেন, ‘আজ নিজেকে বড়ই অসহায় মনে হচ্ছে। এত খারাপ মানুষের সাথে কিভাবে সংসার করব, আত্মহত্যা তো মহাপাপ, আমি কি করব’।

পরিবারের অভাব অনটনের কথা জানায় তার মা সখিনা খাতুন। তবে, নারী পাচারকারী বা কোনও চক্রের সাথে জড়িতের কথা জানেন না বলে তাদের দাবি করেন। তিনি জানান, তার ছেলে মাদ্রাসায় পড়েছে, নামাজ-কোরআন শরিফ পড়ে, সে খুবই ভাল ছেলে।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, গত ২১ মে ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। এই নির্যাতনের জড়িত অভিযোগে ৬ জনকে আটকের খবরও দিয়েছে গণমাধ্যমগুলো। আটক সবাই একই গ্রুপের এবং সবাই বাংলাদেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর মাধ্যমে নাম আসে আশরাফুল মন্ডল রাফির। সে এই চক্রের প্রধান বলে প্রচার হয়। টিকটক হৃদয় বাবু, আল-আমিনসহ এই চক্রটি ভারতের বেঙ্গালুরুর কোর্টলোর এলাকায় থাকে। সেখানে রাফি নামে একজনের আস্তানা রয়েছে। এই রাফির বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকায়। তার প্রকৃত নাম আশরাফুল মন্ডল। রাফিকে আল-আমিনরা বস বলে সম্বোধন করে।

এমন খবর জানাজানি হলে বিষ্মিত হয় স্থানীয়রা। তারা জানত এক সময়কার বেকার যুবক আশরাফুল ভারতে গিয়ে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করত, গাড়ি চালাত। প্রতিবেশী নুর আমিন, আব্দুর রাজ্জাক জানান আশরাফুল এলাকায় সবার সাথে ভাল ব্যবহার করে। ভারতে ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসা ও গাড়ি চালিয়ে অর্থ ইনকাম করে বলে জানিয়েছিল।

এদিকে ভারত ও বাংলাদেশে তোলপাড় হওয়া এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনার মূলহোতা আশরাফুলকে ধরতে অভিযানে নামে র‌্যাব। রবিবার ভোর রাত থেকে দু’দফা অভিযানে নামে। ঢাকা হেড কোয়ার্টারের বিশেষ টিম এই অভিযানে নেমে আশরাফুল ও তার স্ত্রীকে আটক করতে সক্ষম হয়। জব্দ করা হয় তার পাসপোর্ট, পেনড্রাইভসহ বেশকিছু ডকুমেন্ট।

র‌্যাব-৬ ঝিনাইদহের কোম্পানি কমান্ডার কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, ঢাকা হেড কোয়ার্টার থেকে বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে।