মাধঘোপা নিউজ ডেস: দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ পর্যন্ত বহু নারী তারকার পদধূলি পড়েছে বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনে। তাদের কেউ বড় পর্দায়, কেউ ছোট পর্দায় কেউ বা গানের জগতে দ্যুতি ছড়িয়েছেন। নাটক বা সিনেমায় গল্পের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত করেছেন চরিত্র বদল। বাস্তব জীবনে তেমন বদল করেছেন সংসারও। চলুন জেনে আসি তাদের সম্পর্কে-
রুনা লায়লা: উপমহাদেশের প্রখ্যাত এ সংগীতশিল্পী এ পর্যন্ত তিনবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। তার প্রথম বিয়ে খাজা জাভেদ কায়সার নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। দ্বিতীয় বিয়ে করেন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক রন ড্যানিয়েলকে। সর্বশেষ তিনি ঘর বাঁধেন বাংলা চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান নায়ক আলমগীরের সঙ্গে।
সাবিনা ইয়াসমিন: বাংলাদেশের সংগীতের আরেক কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমিন প্রথমে বিয়ে করেছিলেন এক ব্যাংক ম্যানেজারকে। সেই সংসারে তাদের একটি মেয়ে রয়েছে। বেশিদিন টেকেনি সে সংসার। এরপর গায়িকা বিয়ে করেন কলকাতার গায়ক সুমন চট্টোপাধ্যায়কে। যিনি পরে ধর্মান্তর হয়ে কবির সুমন নাম ধারণ করেন।
সামিনা চৌধুরী: এই শিল্পী প্রথমে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন গায়ক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক নকীব খানকে। মতের মিল না হওয়ায় ভেঙে যায় সে সংসার। পরে সামিনা চৌধুরী বিয়ে করেন অনুষ্ঠান নির্মাতা এজাজ খান স্বপনকে।
সুবর্ণা মুস্তাফা: ১৯৮৪ সালে কিংবদন্তি খল অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীকে বিয়ে করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। ২৪ বছর সংসার করেন তারা। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০০৮ সালে হুমায়ুন ফরিদীকে ডিভোর্স দেন সুবর্ণা। এরপর তিনি বিয়ে করেন নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদকে। সুর্বণার চেয়ে ১৪ বছরের ছোট সৌদ। তার সঙ্গেই বর্তমানে ঘর করছেন।
সূচরিতা: এই নায়িকা প্রথমে বিয়ে করেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অ্যাকশন হিরো নায়ক জসিমকে। অল্প কিছুদিন সংসার করেছিলেন তারা। জসিমের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর সূচরিতা বিয়ে করেন প্রযোজক কে এম আর মঞ্জুরকে।
শমী কায়সার: ১৯৯৯ সালে কলকাতার চিত্রনির্মাতা রিঙ্গোকে বিয়ে করেন শমী কায়সার। দুই বছর টিকেছিল সে সংসার। এরপর শমী বিয়ে করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনীতিক মোহাম্মদ এ. আরাফাতকে। বর্তমানে তার সঙ্গেই সংসার করছেন ছোট পর্দার একসময়ের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।
বিজরী বরকত উল্লাহ: ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী বিজরী বরকত উল্লাহ ও সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন। তাদের ঘরে আসে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। বেশি দিন স্থায়ী হয়নি সে সংসার। ইমনের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বিজরী বিয়ে করেন অভিনেতা ইন্তেখাব দিনারকে।
ডলি সায়ন্তনী: এক সময়ে জনপ্রিয় এই গায়িকা প্রথমে বিয়ে করেন বিশিষ্ট গীতিকার রিজভীকে। সেই ঘরে ডলির দুটি কন্যাসন্তান। তারপরও সংসার টেকেনি। এরপর ডলি বিয়ে করেন গায়ক রবি চৌধুরীকে। টেকেনি সে সংসারও। বর্তমানে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ঘর করছেন গায়িকা।
অপি করিম: ২০০৭ সালে জাপান প্রবাসী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার তাসির আহমেদকে বিয়ে করেন অপি। বছর না গড়াতেই ভেঙে যায় তাদের সংসার। এরপর অপি প্রেম করে বিয়ে করেন নাট্যনির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বলকে। দ্বিতীয় সংসারকেও বিদায় জানিয়ে আপাতত সিঙ্গেল অপি করিম।
সাদিয়া জাহান প্রভা: সমালোচিত মডেল ও অভিনেত্রী প্রভার প্রথম বিয়ে হয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্বর সঙ্গে। বিয়ের পর সাবেক প্রেমিক রাজিবের সঙ্গে করা কয়েকটি পর্ন ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে প্রভাকে তালাক দেন অপূর্ব। পরে মাহমুদ শান্ত নামে এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন প্রভা। বিয়ে করে সংসারী হন অপূর্বও।
নওশীন নেহরিন মৌ: এই অভিনেত্রী মিডিয়ায় কাজ শুরু করার আগেই একবার বিয়ে করেছিলেন। টেকেনি সে সংসার। অভিনয়ে আসার পর নওশীন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অভিনেতা হিল্লোরের সঙ্গে। একপর্যায়ে হিল্লোল তার প্রথম স্ত্রী অভিনেত্রী তিন্নিকে ডিভোর্স দিয়ে বিয়ে করেন নওশীনকে।
সুজানা জাফর: মডেল ও অভিনেত্রী সুজানা ২০০৬ সালে প্রথম বিয়ে করেন একটি বায়িং হাউজের কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদকে। চার মাসের মাথায় ভাঙে সে সংসার। এরপর তিনি ২০১৫ সালে নিজের থেকে সাত বছরের ছোট গায়ক হৃদয় খানকে বিয়ে করেন। মাত্র চার মাস পরে ভাঙে সে সংসারও।
নাদিয়া হোসেন: ২০০৮ সালে অভিনেত্রী নাদিয়া বিয়ে করেন অভিনেতা মনির খান শিমুলকে। পাঁচ বছর পর তারা আলাদা থাকতে শুরু করেন। ২০১৫ সালে হয় ডিভোর্স। এরপর ২০১৬ সালে নাদিয়া বিয়ে করেন অভিনেতা নাঈমকে। বর্তমানে তার সঙ্গেই সংসার করছেন।
নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি: ২০০৬ সালে গায়িকা ন্যান্সি বিয়ে করেন ব্যবসায়ী আবু সাঈদ সৌরভকে। ২০১২ সালে তাদের সংসারজীবনের ইতি ঘটে। পরে ২০১৩ সালে নাজিমুজ্জামান জায়েদ নামে এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন ন্যান্সি। টেকেনি সে সংসারও। গত বছরের এপ্রিলে তাদের ডিভোর্স হয়। এরপর আগস্টের শেষ সপ্তাহে গীতিকার মহসিন মেহেদীকে বিয়ে করেন গায়িকা।
নায়িকা ময়ূরী: ২০০৯ সালে ময়ূরী টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মিলনকে বিয়ে করেন। ২০১৫ সালে মিলন মারা যান। এরপর তিনি শ্রাবণ শাহ নামে এক অভিনেতাকে বিয়ে করেন। কিছুদিনের মধ্যে ভাঙে সে ঘর। এরপর ২০১৭ সালে শফিক জুয়েল নামে এক মাদ্রাসাশিক্ষককে বিয়ে করেন ময়ূরী। বর্তমানে টঙ্গীতে তার সঙ্গেই সংসার করছেন নায়িকা।
মুনমুন: এই নায়িকা প্রথম বিয়ে করেন ২০০৩ সালে লন্ডনপ্রবাসী সিলেটের এক ব্যবসায়ীকে। সে সংসার ভাঙে ২০০৬ সালে। সেখানে মুনমুনের একটি ছেলে সন্তান আছে, নাম যশ। প্রথম সংসার ভাঙার চার বছর পর ২০১০ সালে রোবেন নামে এক শৌখিন মডেলকে বিয়ে করেন নায়িকা। টেকেনি সেই সংসারও। ২০১৯ সালে হয় বিচ্ছেদ। আপাতত একাই আছেন মুনমুন।
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা: এই অভিনেত্রী-গায়িকা ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট ভালোবেসে বিয়ে করেন অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী তাহসান রহমানকে। ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল তাদের সংসারে আসে মেয়ে আইরা। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরে ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর কলকাতার চলচ্চিত্র নির্মাতা সৃজিত মুখার্জিকে বিয়ে করে তার সঙ্গে সংসার করছেন মিথিলা।
শবনম ফারিয়া: ছোটপর্দার এই অভিনেত্রী ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এশিয়াটিক জে ডব্লিউটির ব্র্যান্ড ম্যানেজার হারুনুর রশীদ অপুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ভালোবাসার বিয়ে ছিল সেটি। কিন্তু টেকেনি। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বরে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর চলতি বছরের এপ্রিলে নায়িকা পারিবারিক আয়োজনে ফের বিয়ে করেন। যদিও তার দ্বিতীয় স্বামীর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
মাহিয়া মাহি: জনপ্রিয় এই নায়িকা ২০১৬ সালে প্রথমে বিয়ে করেন সিলেটের ব্যবসায়ী পারভেজ মাহমুদ অপুকে। চার বছরের বেশি সময় সংসার করার পর ২০২১ সালের জুনে তারা ডিভোর্সের ঘোষণা দেন। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বরে নায়িকা বিয়ে করেন গাজীপুরের ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক রাকিব সরকারকে। বর্তমানে তার সঙ্গেই সংসার করছেন।
পরীমনি: আলোচিত এই নায়িকা সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। কাগজে-কলমে তার চারটি বিয়ের খবর সবাই জানে। আরেকটা বিয়ে লুকিয়ে করেছিলেন বলে গুঞ্জন। পিরোজপুরে নানাবাড়িতে থাকাকালীন খালাতো ভাই ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে পরীমনির বিয়ে হয়। সেই সংসার টেকে দুই বছর। এরপর ২০১২ সালের ২৮ এপ্রিল ফেরদৌস কবীর সৌরভ নামে ফুটবলারের সঙ্গে বিয়ে হয় নায়িকার।
দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে অভিনেত্রীর নাকি এখনও ডিভোর্সই হয়নি। কিন্তু তারা আলাদা হয়েছেন বহু আগে। নায়িকা হওয়ার পর ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল বিনোদন সাংবাদিক তামিম হাসানের সঙ্গে বাগদান সারেন পরীমনি। কিন্তু বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। তবে ঢালিউডে কান পাতলে শোনা যায়, পরীমনি আর তামিমের গোপনে বিয়েও হয়েছিল। কিন্তু তা টেকেনি।
এরপর গত বছরের মার্চে থিয়েটারকর্মী ও চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান রনিকে খুবই অল্প দিনের পরিচয়ে বিয়ে করেন পরীমনি। এই সংসার টেকেনি তিন মাসও। রনির সঙ্গে ডিভোর্সের কিছুদিন পরই গত ১৭ অক্টোবর অভিনেতা শরিফুল রাজকে বিয়ে করেন পরীমনি। এখন আবার রাজের সন্তানের মাও হতে চলেছেন। মাস দেড়েকের মধ্যে পৃথিবীর আলো দেখবে সেই সন্তান।
তবে শুধু নারী তারকারাই নন। পুরুষদের মধ্যে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, আলমগীর, শাকিল খান, ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, গায়ক হৃদয় খান, রবি চৌধুরী, বাপ্পা মজুমদারসহ আরও অনেকেই একাধিক বার কবুল বলেছেন। চুটিয়ে সংসারও করছেন।