নিউজ ডেস্ক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত পলাতক খুনি কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদের বড় মেয়ে খন্দকার মেহনাজ রশিদকে উচ্চপদে নিয়োগ দিয়েছে রাজধানীর গুলশান ক্লাব। মেহনাজ ক্লাবটির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এডমিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গেল অক্টোবরে চাকরি নেওয়ার পর মেহনাজ গুলশান ক্লাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার সমন্বয়ও করেছেন। এমনকি তিনি বেশ দাপটের সঙ্গে ক্লাবে চলাফেরা করেন। বঙ্গবন্ধুর খুনির মেয়েকে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি অল্পবিস্তর জানাজানির পর ক্লাব সদস্যদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
প্রশ্ন উঠেছে, জাতির পিতার একজন আত্মস্বীকৃত খুনির মেয়েকে দেশের স্বনামধন্য একটি ক্লাব এভাবে জেনেশুনে চাকরি দিতে পারে কী না? এর পেছনে যাদের যোগসাজশ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থারও দাবি উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান ক্লাবের সভাপতি রফিকুল আলম হেলাল ঢাকাটাইমসের কাছে দাবি করেন, মেহনাজের বিষয়টি জানার পরপরই তিনি ব্যবস্থা নিয়েছেন।
কি ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। পরে শুক্রবার দিবাগত রাত ১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে অভিজাত ক্লাবটির এই সভাপতি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তাকে টারমিনেট (বরখাস্ত) করেছি।’
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদের মেয়ে মেহনাজ রশিদ গুলশান ক্লাবে চাকরি করেন এমন কোনো তথ্য জানা নেই বলে ভাষ্য স্থানীয় থানা পুলিশের। ঢাকাটাইমসকে তারা বলছে, এবিষয়ে খোঁজ খবর নিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দুই দফায় ছয় জনের ফাঁসি কার্যকর হলেও মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া রশিদসহ পাঁচ খুনি এখনো অধরা। রশিদের মেয়ে মেহনাজ ২০০৯ সালে তৎকালীন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসকে হত্যাচেষ্টা মামলার অন্যতম আসামি। একই বছরের অক্টোবরে এই মামলায় কারাগারেও যেতে হয়েছে তাকে। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে দেশে ফিরে মেহনাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কুমিল্লা থেকে দুইবার সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন। এছাড়া মেহনাজ তার বাবা রশিদের দল ২০১৯ সালে নিবন্ধন হারানো ফ্রিডম পার্টির রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত।
অনুসন্ধানে ঢাকাটাইমস জানতে পেরেছে, গুলশান ক্লাবে গত বছরের অক্টোবরে ডিজিএম এডমিন পদে চাকরি নেন খন্দকার মেহনাজ রশিদ। ক্লাবটির সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমানের মেয়াদের শেষ সময়ে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তবে বঙ্গবন্ধুর একজন খুনির মেয়ে উচ্চপদে চাকরি নিলেও ক্লাবটির সাবেক ও বর্তমান কমিটির কেউ তার চাকরির বিষয়ে প্রশ্ন তোলেননি। ফলে বীরদর্পেই মেহনাজ আটমাস ধরে সেখানে চাকরি করছেন।
গত বছর গুলশান ক্লাব থেকে ‘দি ক্লাব দি প্রেসিডেন্ট’ নামে একটি বই প্রকাশ হয়। এই বইটির সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন মেহনাজ রশিদ।
জাতির পিতার খুনির মেয়ে কীভাবে স্বনামধন্য অভিজাত ক্লাবে উচ্চপদে চাকরি করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।
ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উচিত খোঁজ খবর নেওয়া। সত্য হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।’
মেহনাজ রশিদ গুলশান-২ নম্বরের ৫৫ নম্বর রোডের বাড়িতেই বসবাস করেন। সেখান থেকে তিনি প্রতিদিন অফিস করেন। গত বৃহস্পতিবারও তিনি যথাসময়ে অফিস করেছেন। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে অফিসে যাননি।
এদিন ঢাকাটাইমসের পক্ষ থেকে মেহনাজের বিষয়ে ক্লাবে খোঁজ নেওয়া হয়। এসময় ক্লাবটির হেল্পলাইনের দায়িত্বে থাকা রিয়া নামে একজন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ম্যাম আজ সাপ্তাহিক ছুটিতে আছেন। কালকে (শনিবার) অফিসে আসবেন।’
একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মেহনাজের গতিবিধি নজরদারি করা হচ্ছিলো। গোয়েন্দারা জানতে পারেন মেহনাজ রশিদ দেশেই আছেন এবং একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন।
মেহনাজ কীভাবে গুলশান ক্লাবে চাকরি নিলেন আর কে বা কারা তার জন্য সুপারিশ করেছেন; বেতন কত, পরিচয় জানার পরও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি—এসব তথ্য গোয়েন্দারা বিশ্লেষেণ করছেন।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশান ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মেহনাজ রশিদ আগের কমিটির আমলে ক্লাবে যোগ দেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এখানে কাজ করছেন। তিনি ক্লাবের ডিজিএম এডমিন পদে আছেন, পদটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তার সঙ্গে অনেক কাজ করতে হয়েছে। পরে জানতে পেরেছি তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশিদের মেয়ে।’
বঙ্গবন্ধুর খুনি কে এই রশিদ?
১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে বর্বরোচিত ও নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন। এ হত্যাযজ্ঞ পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমদ। আর কিলিং মিশনে অংশ নেয়াদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তারই ঘনিষ্ঠ সহচর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও বিদেশে পলাতক কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ।
রশিদের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ছয়গড়িয়া গ্রামে। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়ের করার আগে মারা গিয়ে খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দায় থেকে রেহাই পেলেও ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে বর্তমানে বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ফ্রিডম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা খন্দকার রশিদ।
খুনি রশিদের চাচা মুশাররফ হুসাইন ছিলেন মোশতাকের বন্ধু। চাচার মাধ্যমেই মোশতাকের সঙ্গে রশিদের পরিচয় হয়েছিলো। তাদের কুচক্রান্তে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে খুন হন।
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে অবস্থা বেগতিক দেখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান রশিদ। তবে মেয়ে মেহনাজের সঙ্গে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
সূত্র: ঢাকাটাইমস