মাধঘোপা নিউজ ডেক্স: বছরের পর বছর ঘর না থাকা ভূমি ও গৃহহীন আরও ছয় লাখ পরিবাবরকে পাকা ঘর দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে এ পাকা ঘর পাচ্ছেন এসব মানুষ।
চলমান প্রকল্পের সময়-ব্যয় বাড়িয়ে দেশব্যাপী টিনের বদলে পাকা ঘর দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চলমান ‘আশ্রয়ণ-২ (চতুর্থ সংশোধিত) প্রকল্পের মাধ্যমে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটির মূল কার্যক্রম হিসেবে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৭ ভূমিহীন পরিবারকে টিনের বদলে পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় পরিবার বাছাইকরণের মাধ্যমে ৫ হাজার ১৪৯ টি পাকা ব্যারাক, চরাঞ্চলে ৫ হাজার ৭৮ টি সিআইসিট ব্যারাক, দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ৪ হাজার ৩৯৩ টি সেমিপাকা ব্যারাক নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ১২০ টি বহুতল ভবন ও ১ হাজার ১১০ টি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হবে।
সব প্রকল্প গ্রামে অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণসহ ৫৮০ টি বিশেষ ডিজাইনের ঘর নির্মাণ, সব প্রকল্প এলাকায় গ্রামে অগভীর, গভীর নলকূপ স্থাপন, ৫৬৪ টি ঘাটলা, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বক্স কালভার্ট, পাকা ড্রেন ও স্লোপ প্রটেকশন নির্মাণ, ইত্যাদি কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় করা হবে ১২ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা।
চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। নতুন করে প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ ‘আশ্রয়ণ-২ (চতুর্থ সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন আল রশীদ। এরপরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে এসেছে। প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা করেছি। প্রকল্পের আওতায় গৃহহীন মানুষকে পাকা ঘর দেওয়া হবে। প্রকল্পের কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি আছে। এগুলো সংশোধন করে প্রকল্পটি আমরা একনেক পর্যন্ত পৌঁছে দেবো।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পটি ১৯৯৭ সালে শুরু হয়ে বর্তমানে আশ্রয়ণ-২ নামে চলমান রয়েছে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর ১০ টি উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম মানবিক উদ্যোগ। ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রতি পরিবারকে ২ শতক খাসজমির বন্দোবস্ত করে সেমিপাকা গৃহনির্মাণ কার্যক্রম প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তকরণ করা হয়েছে। বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ও আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চলমান কাজসহ অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পটি চতুর্থবার সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে দেশের ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ করা দেওয়া নীতিমালা অনুমোদন করা হয়।
নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীন ‘ক’ শ্রেণি এবং জমি আছে কিন্তু ঘর নেই এরূপ ‘খ’ শ্রেণির সাড়ে ৩ লাখ পরিবারসহ মোট ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৭ টি পরিবার পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী একক গৃহনির্মাণের মাধ্যমে পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ছিন্নমূল, গৃহহীন/ভূমিহীন পরিবারকে জমি, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, বিদ্যুৎ ও চলাচলের জন্য পাকা রাস্তা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। পুনর্বাসন করা এবং এসব মানুষদের ঋণ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সাল থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র পরিবার পুনর্বাসন, ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা-নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণসহ তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়ণ-২ মূল প্রকল্পটি ৭০০ টি আশ্রয়ণ গ্রাম স্থাপন করে ৫০ হাজার পরিবার পুনর্বাসন করে। এর পরে আড়াই লাখ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।
এরমধ্যে কক্সবাজারের খুরুশকুল মৌজায় ১৩৯ টি ভবনের মধ্যে ২০ টি ভবনের কার্যাদেশ দেওয়া সম্ভব হয়। অবশিষ্ট ১১৯ টি ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ’ শীর্ষক একটি পৃথক প্রকল্প হিসেবে অনুমোদিত হয়। কক্সবাজার জেলায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র খুরুশকুল আশ্রায়ণ প্রকল্পের প্রথম ধাপে নির্মিত ২০টি ভবনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম ধাপে উদ্বোধন হওয়া ভবনগুলোতে ফ্ল্যাট পেয়েছেন ৬০০টি পরিবার। ১০০১ টাকা নামমাত্র মূল্যে এসব ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর তীর ঘেঁষা বৃহৎ এ প্রকল্পে নির্মিত ২০টি পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবনে ৬০০টি পরিবার নতুন ফ্ল্যাট পেল। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট। পর্যায়ক্রমে ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার এখানে ফ্ল্যাট পাবে। এবার নতুন করে আরও প্রায় ছয় লাখ ভূমিহীন পরিবারকে পাকা ঘর দেওয়ার জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গৃহহীন মানুষকে পাকা ঘর দেওয়ার কাজ চলমান। নতুন করে প্রকল্প সংশোধন করা হচ্ছে। ফলে আরও বেশি গৃহহীন মানুষ পাকা ঘর পাবেন। সারা দেশের গৃহহীন মানুষ এ প্রকল্পের আওতায় ঘর পাবেন। ’