স্যাটেলাইট নিয়ে লুকোচুরি, রাশিয়া কি মহাকাশযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে?

Share

রাশিয়ায় ‘মাত্রিওশকা’ নামের চমৎকার একধরনের পুতুল পাওয়া যায়। কাঠের ওই পুতুলটি মাঝ বরাবর খুলে ফেললে ভেতরে পাবেন আরেকটি পুতুল।

তার ভেতরে থাকে আরেকটি পুতুল। তার ভেতরে আবার আরেকটি, এভাবে করে মোট ১০টি পুতুলও থাকতে পারে। যেন স্তরে স্তরে রহস্য আর বিস্ময়ের প্রতীক। রাশিয়া যে এই বুদ্ধি মহাকাশেও ব্যবহার করবে, তা কে জানত!
কল্পনা করুন তো, মহাকাশে ভাসছে এমন কৃত্রিম উপগ্রহ, যার পেটের ভেতর লুকিয়ে আছে আরও ছোট ছোট উপগ্রহ। কক্ষপথে গোপনে শত্রুপক্ষের কৃত্রিম উপগ্রহের ওপর নজর রাখছে, আর অপেক্ষা করছে। মোক্ষম সময়ে আঘাত হেনে লক্ষ্যবস্তু অচল করে দেবে। মহাকাশে এমন কৃত্রিম উপগ্রহই রাশিয়া পাঠিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত ২৮শে জুন, রাশিয়ার কৃত্রিম উপগ্রহ কসমস-২৫৫৮ হঠাৎ করেই একটি রহস্যময় বস্তু পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করেছে। কসমস স্যাটেলাইটটি মার্কিন গুপ্তচর স্যাটেলাইট ইউএসএ-৩২৬-কে অনুসরণ করে বলে রটানো আছে। ‘অবজেক্ট-সি’ নামের ছোট্ট কৃত্রিম উপগ্রহটি সম্ভবত শুধুই একটি পর্যবেক্ষক নয়। মার্কিন কর্মকর্তাদের ভয়, এটি স্যাটেলাইট-বিধ্বংসী অস্ত্র বহন করতে পারে।

অবজেক্ট-সি যে সময়ে দেখা দিয়েছে, তা মার্কিনিদের আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে। কসমস-২৫৫৮ প্রায় তিন বছর ধরে মার্কিন উপগ্রহটির পিছে নিখুঁতভাবে লেগে আছে। এ যেন শীতলযুদ্ধের মহাকাশ সংস্করণ। আধুনিক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মহাকাশ যেভাবে একটি রেষারেষির ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, সেখানে এমন গোপন প্রযুক্তি আর তার সম্ভাব্য সামরিক ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের ঘাম ঝরাচ্ছে।

ইউএসএ-৩২৬ কোনো সাধারণ মহাকাশযান নয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ রকেট দিয়ে তা মহাকাশে পাঠানো হয়। কৃত্রিম উপগ্রহটির উদ্দেশ্য গোপন রাখা হয়েছে। তবে, প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের বিশ্বাস, এটি একটি আগাম প্রজন্মের কেএইচ-১১ স্যাটেলাইট, যা সরাসরি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তাৎক্ষণিক উচ্চ-রেজোলিউশনের ছবি পাঠাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কথিত ওই চোখ যখন সম্ভাব্য অস্ত্রধারী রাশিয়ান কৃত্রিম উপগ্রহের নজরবন্দী, তখন যুক্তরাষ্ট্রের মাথা খারাপ তো হবেই।

নেদারল্যান্ডসের ডেলফ্ট টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপগ্রহ-ট্র্যাকিং বিশেষজ্ঞ এবং প্রভাষক মার্কো ল্যাংব্রোক আরও তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, রাশিয়ার সামরিক উপগ্রহ মহাকাশে যাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে এটি তৃতীয় ঘটনা। অভিযানগুলো খুবই গোপনীয় ‘প্রজেক্ট নিভেলির’-এর অংশ।

বছরের পর বছর ধরে রাশিয়া নাকি এমন অনেক কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়েছে। সেগুলো নাকি কাছে থেকে নজরদারি বা আক্রমণ করা, এমনকি প্রজেক্টাইলও ছুড়তে পারে। পশ্চিমাদের দাবি, রাশিয়ার এসব কর্মকাণ্ড উপগ্রহ-বিধ্বংসী গোপন অভিযানের অংশ।

রাশিয়া কি মহাকাশে পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছে? গত ১২ এপ্রিল ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রাশিয়া নাকি কক্ষপথে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের চেষ্টা করছে।

কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস করতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হলে ভয়াবহ পরিণতি হবে। বিশ্বজুড়ে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বিকল হয়ে যাবে। পৃথিবী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা অন্ধ হয়ে যাবে। সামরিক কমান্ড থেকে শুরু করে বেসামরিক জিপিএস, সবকিছু ভেঙে পড়বে বলে রুট সতর্ক করেন।

এমন কোনো অস্ত্র বলে-কয়ে মোতায়েন করা হয়নি। কিন্তু জুজুর ভয় দ্রুত বাড়ছে।

Read more