যশোর প্রতিনিধি: মাদকাসক্ত থেকে মুক্ত সুস্থ জীবন ফিরে পাবার আশায় মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে এক যুবকের মুত্যু হয়েছে। এঘটনায় নিহতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পরিচালকসহ ১৪ জনকে আটক করেছে যশোর পুলিশ।
চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামানের ছেলে মাহফুজুর রহমানের (২০) এর মৃত্যুর খবর পেয়ে যশোরে আসেন পিতা মনিরুজ্জামান। হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন, ছেলের মরাদেহ রেখে যাওয়া হয়েছে অজ্ঞাত হিসেবে। আরও জানতে পারেন, ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন তার ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করে হাসপাতালে ফেলে গেছে।
এ ঘটনা জানতে পেরে যশোর কোতয়ালী থানার পুলিশ গেলরাত থেকে বিভিন্ন টিমে বিভক্ত হয়ে অভিযান চালায়। আজ সকালে বিভিন্ন স্থান থেকে পাকড়াও করেছে কেন্দ্রের পরিচালকসহ ১৪ জনকে। কেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ জেনেছে আরও কিছু তথ্য।
রোববার দুপুরে এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
যশোর শহরের রেল রোডে অবস্থিত মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুর্নবাসন কেন্দ্রটি। অভিযোগ, শনিবার দুপুরে কেন্দ্রের ভেতরে মারপিটসহ নানারকম নির্যাতনের ফলে মারা যান মাহফুজুর রহমান। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বিরুদ্ধে এই হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
নিহতের বাবা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মাহফুজ মাদক সেবন করতো। সে যাতে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে সেকারণে গত ২৬ এপ্রিল তাকে যশোরের মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে দিই। গতকাল শনিবার বিকেলে খবর পাই, তাকে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন মারপিট করে মেরে ফেলেছে। পরে তার মরদেহ অজ্ঞাত হিসেবে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেখে তারা চলে গেছে। আমরা যশোরে এসে মাহফুজের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে পাই।’
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার তন্ময় বিশ্বাস বলেন, গতকাল দুপুরে মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে একটি মৃতদেহ জরুরি বিভাগে আনা হয়। মরদেহ বহনকারী ও নিহত ব্যক্তির নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ না করে তারা কৌশলে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
যশোর কোতয়ালী থানার এসআই শংকর বিশ্বাস বলেন, সুরাতহাল রিপোর্ট করার সময় মৃতের পিঠ, ঘাড় ও পশ্চাদ্দেশে বেশকিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে কোতয়ালী থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনা জানার পরে রাতে প্রতিষ্ঠানটির সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জানা যায়, মাহফুজকে মারপিট করে হত্যা করা হয়েছে। মারপিটের কারণে সে মলত্যাগ করে ফেলে। তখন মাহফুজকে দিয়েই ওই মল পরিস্কার করানো হয়।
তিনি বলেন, পুলিশের পৃথক কয়েকটি টিম সারারাত অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক পূর্ববারান্দীপাড়ার বাসিন্দা আবুল কাসেমের ছেলে মাসুম করিম ও অপর পরিচালক বারান্দীপাড়া বটতলা এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে আশরাফুল কবির, রেজাউল করিম, ওহেদুজ্জামান, ওহিদুল ইসলাম, আল শাহরিয়া, শাহিন, ইসমাইল হোসেন, শরিফুল ইসলাম, এএসএম সাগর আলী, অহেদুজ্জামান সাগর ,নুর ইসলাম, হৃদয় ওরফে ফরহাদ ও আরিফুজ্জামানকে আটক করা হয়েছে