খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে যশোরে গণসমাবেশ বিএনপি’র

যশোর প্রতিনিধি
সরকার চায় বিএনপির উপর অত্যাচার করতে হবে, বিএনপিকে ধ্বংস করতে হবে। সুতরাং তারা মনে করে, একমাত্র খালেদা জিয়াকে ধ্বংস করতে পারলেই বিএনপি ধ্বংস হবে। জিয়ার পরিবার নিয়ে, খালেদা জিয়ার পরিবারের একটি শিশু বাচ্চাকে নিয়েও কথা বলেছে এই সরকারের মন্ত্রীরা। রাস্তা থেকে ধরে এনে মন্ত্রী বানিয়ে দেবেন, দেশের লোকেরা মান্য করবে, এটা ভাবার দরকার নাই। আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার সুসন্তান। এই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যারা মুমুর্ষূ মানুষকে নিয়ে কথা বলেন তারা কখনোই সভ্য মায়ের সভ্য সন্তান নয় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে যশোর টাউন হল ময়দানে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মির্জা আব্বাস এ কথা বলেন।
বিএনপির চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী “মাদার অব ডেমোক্রেসি” খ্যাত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত সমাবেশ সফলে প্রশাসনিক বাঁধা ও সৃষ্ট হরতাল পরিস্থিতি ভেঙেছে যশোর জেলা বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে দলের দু’সহস্রাধিক নেতাকর্মী সকাল পৌনে আটটায় শহরে ঝটিকা মিছিল করে পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে মাঠ দখল করে। দুপুর দুইটায় অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশের এই ময়দান বেলা ৯টার মধ্যেই জনতার দখলে চলে যায় এবং শুরু হয় অনানুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশের কার্যক্রম। ফেসবুক লাইভে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে ওই সকালেই পাড়া-মহল্লার নেতাকর্মীরা দলে দলে মাঠে জড়ো হন। রাতভর পালিয়ে ও জেগে থাকা হাজারো কর্মী মাঠে বসেই বিস্কুটে নাস্তা এবং শুকনো রুটিতে মধ্যাহ্ন ভোজ সারেন। নেতাকর্মীদের একইঞ্চি দখল না ছাড়ার এই দৃঢ়তা দেখে প্রশাসনের কোন পর্যায়ের লোকজন আর মাঠেই আসেননি। এমনকি তারা সমাবেশের নিরাপত্তায় যে স্বাভাবিক ডিউটি করে তাও করেননি। দলের নেতাকর্মীরা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নির্দেশনায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ সফল করে। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস। তিনি অর্ধলক্ষাধিক মানুষের সুশৃঙ্খল সমাবেশ দেখে ব্যপক প্রশংসা করেন। প্রশাসনের অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন এটা তাদের কল্পনায় ছিল না।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ জানান, এই সমাবেশের জন্য তারা অনুমতি চেয়ে ১৫ডিসেম্বর জেলা ও পুলিশ প্রশাসকে চিঠি দিয়ে বারবার অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়েছেন। পৃথক দুটি স্থানের নাম দিয়েও সাড়া পাননি তারা। এদিকে এই সমাবেশ বানচালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সড়কে যন্ত্রচালিত সকল যানবাহন বন্ধ করে দেয়া হয়। পুলিশ নানাবিধ অভিযান চালিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। ফলে সকালেই হরতাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। জনগন তা ভেঙে মাইলকে মাইল হেটে সমাবেশে যোগ দেন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাঠ দখল করে সমাবেশের খবর ছড়িয়ে পড়লে পার্শবর্তী উপজেলা, জেলা থেকেও দুর্ভোগ পাড়ি দিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। স্বতঃস্ফূর্ত এমন সমাবেশ গত নয় বছরে যশোরে আর হয়নি বলে শহরের সর্বস্তরের মানুষ জানিয়েছেন। তারা এরজন্য জনতার এমপি খ্যাত অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “জননেতা তরিকুল ইসলামের সন্তানের কাছে মানুষ এমন বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতা প্রত্যাশা করে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মির্জা আব্বাস বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে হত্যা করতে চায়। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে আন্দোলন এখন দুর্বার হয়ে উঠেছে। সরকার তা সহ্য করতে পারছে না। আর এ কারণে ইস্যু অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে, দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বুধবার যশোর টাউন হল ময়দানে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি আরোও বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য আমরা দয়া চাচ্ছি না। এটা তার অধিকার। জাতি জানতে চায় আপনি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাবেন কিনা? যদি না পাঠান তাহলে আমরা আপনার পতনের আন্দোলন শুরু করব। এই জালিম সরকার আমাদের দৃষ্টিকে, মুখের কথাবার্তাকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না। আমাদের দৃষ্টি একটাই দেশনেত্রীর সুচিকিৎসা, দেশনেত্রীর মুক্তি। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠিত হবে। আর আজ যশোর থেকেই সেই আন্দোলন শুরু হলো। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির নেতা কর্মীরা ঘরে ফিরে যাবে না।

দলের স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছেন, বেগম জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র দিয়েছেন, দেশের উন্নয়নে কাজ করেছেন, মানুষের কথা বলার অধিকার দিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমরা তার কল্যাণে মন্ত্রী-এমপি হয়েছি। তার নাম নিয়ে, তার দলের পতাকা নিয়ে আমরা নির্বাচনে পাস করেছি। এবার আমাদের দেওয়ার পালা, নেওয়ার নয়। তাকে এখন দেওয়ার চেষ্টা করবো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে দেশ আজ সরব। তাই সরকারের উচিত হবে খালেদা জিয়াকে মুক্তি ও বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আলহাজ্ব মশিউর রহমান। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।