যশোর শিক্ষাবোর্ডের আড়াই কোটি টাকার ১৫ লাখ টাকা ফেরত

যশোর প্রতীনিধি

যশোর শিক্ষাবোর্ডের আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ‘মূল অভিযুক্ত’ দাবিদার হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম ১০ অক্টোবর সন্ধ্যায় ১৫ লাখ টাকা ও একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি অর্থ জালিয়াতির গোটা ঘটনার সাথে নিজেকে ‘একমাত্র দায়ী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, পলাতক হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম রোববার সন্ধ্যায় তার স্ত্রীর মাধ্যমে গেটে থাকা একজন নিরাপত্তা কর্মীর কাছে ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা পে অর্ডারের সাথে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে আব্দুস সালাম লিখেছেন ‘অফিসের চেক জালিয়াতির ঘটনার জন্যে আমি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। শিক্ষাবোর্ডে কর্মরত অন্য কেউ বা ভেনাস প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং এবং শাহীলাল স্টোরের কেউ চেক জালিয়াতি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। পূর্ব পরিচিতির সূত্রে বর্ণিত দুটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে আমি উক্ত টাকা গ্রহণ করেছি এবং আমার নিজ প্রয়োজনে খরচ করে ফেলেছি। আজ ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা ফেরত দিলাম। বাকি টাকাও পর্যায়ক্রমে আমি ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করছি। এজন্য আপনার কাছে ক্ষমা ও টাকা পরিশোধের সময় প্রার্থনা করছি।’
এই ঘটনার মাধ্যমে আব্দুস সালাম তার এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের আড়াল কিংবা রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
চলতি অর্থবছরে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড সরকারি কোষাগারে জমার জন্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ দশ হাজার ৩৬ টাকার নয়টি চেক ইস্যু করে। এই নয়টি চেক জালিয়াতি করে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে এক কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার দশ টাকা এবং শাহীলাল স্টোরের নামে ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। সরকারি ছুটি থাকায় ঘটনা প্রকাশ্যে আসার দুইদিন পর রোববার বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা দুদক কার্যালয়ে গিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর একইদিন বেলা ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা বোর্ডে গিয়ে তদন্ত এবং কাগজপত্র সংগ্রহ করেন।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর পালিয়ে যান হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম।
যশোর শিক্ষাবোর্ড অ্যামপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবুল বলেন, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম এর আগেও অনেক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১২ লাখ টাকার একটি দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেই সময় তদবির করে তিনি সেখান থেকে রক্ষা পান। এরপর আড়াই কোটির টাকা দুর্নীতির সঙ্গেও তিনি জড়িত হয়েছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে উপশহরে দুটি আলীশান বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি এলাকায় দশ বিঘা জমি, যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি বেসরকারি ক্লিনিকের মালিকানা রয়েছে তার।
ঘটনা জানাজানি হয়ে পড়লে অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু টাকা ফেরত দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কিন্তু এখন কর্মচারী আব্দুস সালাম গোটা জালিয়াতির দায় একাই নিলেন। এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে কি না তা অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন বলেন, ঘটনা জানাজানির পর থেকেই হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় সালামের স্ত্রীর মাধ্যমে একটি পে অর্ডার ও একটি চিঠি তিনি পাঠিয়েছেন।
টাকা ফেরত ও চিঠিতে নিজের একক সম্পৃক্ততায় অন্যদের রক্ষা করা হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং বোর্ড একটি তদন্ত কমিটিও কাজ করছে- সেকারণে এ বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচিন হবে না। তবে, আজ আমরা মিটিংয়ে বসছি। এসব ঘটনা সেখানে আলোচনা হবে। মিটিংয়ে তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হতেও পারে।’
যোগাযোগ করা হলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, ‘আব্দুস সালাম গেল সন্ধ্যায় বোর্ডে একটি পে-অর্ডার ও একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বলে শুনেছি। কিন্তু এতে অন্যদের রক্ষা করা যাবে না। আমরা কাগজপত্র দেখছি; সেখানে কার কার সিগনেচার রয়েছে- বিহাইন্ড দি সিন যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।