যশোর প্রতিনিধি:
যশোর জেলায় গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ও গ্রাম আদালতে নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি সংক্রান্ত গ্রাম আদালত জেন্ডার চ্যাম্পিয়ন বিষয়ক যুব কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দাতা সংস্থা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইউএনডিপি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত বাংলাদেশে গ্রাম সক্রিয়করণ তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতকে সক্রিয় করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন অদ্য ২৫.১১.২০২৪ খ্রি. তারিখ সোমবার সকাল ০৯:৩০ টায় এই সভার আয়োজন করে। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার মোঃ রফিকুল হাসান। সভার শুরুতে তিনি বলেন, এই সভার মূল উদ্দেশ্য হলো যুবকদের গ্রাম গ্রাম আদালত বিষয়ে অবগত করা, জেন্ডার বিষয়ে ধারনা প্রদান। যাতে তারা এলাকায় ফিরে গিয়ে তাদের পরিবার, শিক্ষপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের মানুষের মধ্যে গ্রাম আদালত বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে পারে। উচ্চ আদালতের মামলা জট কমানোর লক্ষ্যে সরকার গ্রাম আদালতকে সক্রিয়করণ করছে। অথচ গ্রাম আদালত সম্পর্কে মানুষ জানে না। মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রচারণা বৃদ্ধির জন্যই আজকের এই সমন্বয় সভা। সভায় বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ৩য় পর্যায় প্রকল্পের প্রোগ্রাম এনালিস্ট শরীফা পারভীন প্রকল্প পরিচিতি, প্রকল্পের অগ্রগতি ও জেলার গ্রাম আদালতের মামলার তথ্যচিত্র তুলে ধরেন। এ্যাড. মহিতোষ কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার গ্রাম আদালত আইন ও বিধিমালা বিষয়ে সেসন পরিচালনা করেন। শামীমা আক্তার শাম্মী, জেন্ডার স্পেশালিস্ট, ইউএনডিপি জেন্ডার, নারী-পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণ, অন্তভূক্তিমূলক গ্রাম আদালত নিশ্চিতকরণে যুব সমাজের ভূমিকা বিষয়ে সেসন পরিচালনা করেন। কর্মশালা উপস্থাপনা করেন ফারজানা ইসলাম, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, স্থানীয় সরকার, যশোর।
সভার উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে সহকারী জেলা তথ্য কর্মকর্তা বলেন, গ্রাম আদালতের বিচারিক সেবা বিষয়ে আজকের এই কর্মশালার মাধ্যমে আমি বিস্তারিত ধারনা পেলাম। জেলা তথ্য অফিস সরকারী সকল সেবা বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে। আমরা উঠান বৈঠক, নারী সমাবেশ, বায়োস্কোপ এবং একটি শিল্পী দলের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করি। আমরা এখন থেকে গ্রাম আদালতের বিষয়েও মানুষকে সচেতন করব।
উপপরিচালক, যুব উন্নয়ণ অধিদপ্তর, যশোর বলেন, গ্রাম আদালতকে অনেক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। মানুষ মামলায় গিয়ে অনেক টাকা খরচ করে কিন্তু বিচার পায়না। এক শতক জমির বিচারের জন্য মামলায় গিয়ে মানুষ এক বিঘা জমি হারায়, একটি মুরগীর জন্য একটি গরু হারায়। তারপরও মানুষ ন্যায়বিচার পায় না। অথচ গ্রাম আদালতে মানুষ স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে তার কাঙ্খিত বিচার পায়। সামাজিক হৃদ্যতা বুদ্ধি পায়।
উপপারিচালক, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, যশোর বলেন, গ্রাম আদালতের মাধ্যমে অসহায় নারীদের বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম হয়েছে। আমরা গ্রাম আদালত বিষয়ে প্রচার প্রচারণা চালাবো যাতে দরিদ্র অসহায় মানুষ তাদের কাঙ্খিত ন্যায় বিচার পায়।
এছাড়া অংশগ্রহণকারী যুবকবৃন্দ গ্রাম্ আদালত আইনের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন এবং তাদের ভূমিকা, দায়িত্ব ও করণীয় বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেন।
সমাপনী বক্তব্যে, সভার সভাপতি বলেন, স্বল্ব সময়ে, স্বল্প খরচে হয়রানিমুক্ত হয়ে স্থানীয় বিরোধ স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তির জন্য গ্রাম আদালত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাম আদালত সম্পর্কে অধিকাংশ জনগণ এখনো জানে না। সে কারণে আজ আমরা যুবক প্রতিনিধিদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করেছি। যুবকদের এই বিষয়ে ব্যাপকভাবে প্রচারণা করার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং আপনারা আপনাদের পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে গ্রাম আদালত বিষয়ে মানুষকে সচেতন করবেন। গ্রাম আদালতের স্টিকারগুলো জনসম্মুখে লাগিয়ে দিবেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন উপপরিচালক, যুব উন্নয়ণ অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও বেসরকারী সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন কর্তৃক মনোনীত ০৮ উপজেলার ৩০ যুব প্রতিনিধি, বেসরকারী প্রতিষ্টানের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও প্রকল্পের স্টাফবৃন্দ।
সভায় বলা হয়, প্রকল্প শুরুর পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত যশোর জেলায় গ্রাম আদালতে মামলা দায়ের হয় ১১৩৫ টি। এর মধ্যে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদে দায়ের হয় ৯৮৮ টি এবং জেলা আদালত থেকে পাঠানো হয় ১৪৭টি। এর মধ্যে দেওয়ানি ৫৮২টি ও ফৌজদারি ৫৫৩ টি। দায়েরকৃত মামলার মধ্যে আবেদনকারী পুরুষ ৮০৭ (৭১.১০%) এবং নারী ৩২৮ (২৮.৯০%) জন। নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ৯০৫ টি (৯০%)। মোট ক্ষতিপূরণ আদায় ১,৩৫,১০,৪২০.০০ টাকা যা ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষকে দেওয়া হয়েছে।