দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে যশোরে পটকা আতশবাজি  ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া ॥ নিষিদ্ধ পটকাবাজি মজুদ

বিশেষ প্রতিনিধি
সারা দেশে দুর্গাপূজায় পটকা ও আতশবাজি ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও যশোর শহরের বড়বাজারে ভারতীয় মার্কেট বলে খ্যাত হাটচান্নিতে ব্যাপকভাবে মজুদ করার অভিযোগ উঠেছে। বড়বাজার এলাকার হাটচান্নির অঞ্জন সাহা ও শিহাব সেলিম মিম আরজুর নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশত চোরাকারবারি ও ব্যবসায়ীরা গড়ে  তুলেছে ভারতীয় মালামাল বিক্রির সিন্ডিকেট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় তারা দীর্ঘদিন ভারতীয় এসব অবৈধ পণ্য মজুদ ও বিক্রি করছে। সারা বছর অবৈধ মালামাল বিক্রির পাশাপাশি এবার পূজায় ব্যাপকভাবে পটকা বাজি ও আতশবাজি মজুদ করেছে। অবৈধ কারবারি ও সিন্ডিকেটের সদস্যরা দূর্গোৎসবকে সামনে রেখে মজুদ করেছে কয়েক কোটি টাকার বাজিসহ অন্যান্য মালামাল। অবাধে চলছে তাদের পাইকারি ও খুচরা বিক্রি। এবার পূজায় এই সিন্ডিকেট যশোর অঞ্চলে কোটি টাকার উপরে পটকা ও কসমেটিক্স বিক্রির টার্গেট নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে,যশোরের গোহাটা রোড, হাটচাঁদনী মার্কেট ও বড় বাজার এলাকায় অঞ্জন সাহা ও সিহাবের নেতৃতে সেলিম, মিম, আরজু, সাকিব, তন্ময় ইসলাম মিম, আমির,খোকন, কালু ,আবু তালেব,সরদার, ছাত্তার, মিন্টু, শহিদুল মহিউদ্দিন, জয়নাল, ইকমল, জাফর মাষ্টারের সিন্ডিকেটটি দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় কসমেটিক্স এবং চকলেটবাজি ও বিস্ফোরক ব্যবসার সাথে জড়িত। আর এই চোরাকারবারীদের প্রশাসনের হাত থেকে রক্ষা করে কথিত পুলিশের সোর্স টুটুল। ঈদ পুজার মৌসুমে এরা সীমান্তত দিয়ে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় কসমেটিক্স, চকলেটবাজি ও পটকা তৈরির মসলা আনে। চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকার সেলিম সিন্ডিকেট বড় বড় চালান নিয়ে এসে যশোর স্টেশন এলাকায় মাল রেখে ব্যবসা চালাচ্ছে বড় বাজার কেন্দ্রিক। মিম মাল এনে মজুদ করছে তার বারান্দিপাড়া কদমতলার আস্থানায়, আরজু তার বকচরের ডেরায় মাল রেখে অর্ডার অনুযায়ী বাজারে ঢোকাচ্ছে। তালবাড়িয়া স্টোরের আবু তালেবও এই পটকাবাজি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে ওই সিন্ডিকেটের ১৫/ ২০ জন সদস্য শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্পটে মাল রেখে যশোরের গোহাটা রোড, হাটচাঁদনী মার্কেট ও বড় বাজার এলাকায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই চক্রের কয়েকটি দোকানে মহিলা ও পুরুষ চোরাকারবারীদের আনা গোনা থাকে। আর বিভিন্ন পয়েন্টে সাঙ্গপাঙ্গরা ব্যবসা দেখভাল করে। সীমান্তেও নিয়োগ করা আছে লোকজন। যশোরের চৌগাছার মাসিলা,পুড়াপাড়া, শাহজাদপুর, শার্শা, বেনাপোলের শালকোনা, গাতীপাড়া, পুটখালী, সাদীপুর,বড় আঁচড়া,ছোট আঁচড়া ও সাতক্ষীরার কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে সিন্ডিকেটের চকলেট বোমা ও বিস্ফোরক আমদানি করে থাকেন। ঈদ পূজা ও বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে ব্যবসা জোরদার হয়। এ সিন্ডিকেটের নির্দিষ্ট কয়েকজন চোরাকারবারী চকলেটবাজি ও বিস্ফোরক আনা নেয়ার সাথে জড়িত রয়েছে। মালামাল নির্দিষ্ট ডেরায় পৌঁছানোর পর হাত বদল হয়। মালামাল নড়াইল, লোহাগড়া, ফরিদপুর, টেকেরহাট, ভাঙ্গা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, বরিশাল, ঢাকার চকবাজার ও নবাব-পুরে পাঠানো হয়।
এসব এলাকার ব্যবসায়ীর সাথে মোবাইল ফোনে চুক্তির পর সুন্দরবন, এসএ পরিবহন, আফজাল, রেইনবো, সোনারগাঁ ট্রান্সপোর্টে মালামাল বুকিং দেয় তারা। এক্ষেত্রে কার্টুনের গায়ে লেখা থাকে মাল ফেরৎ। ভুয়া ক্যাশ মেমো ও ভুয়া দোকানের নাম সংযুক্ত থাকে। রাস্তায় প্রশাসনিক ঝামেলা এড়াতে এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করে সিন্ডিকেট। যশোরে চকলেট ও পটকাবাজি বিকিকিনি বন্ধে পুলিশের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করা হচ্ছে।
চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে বড় বাজারে র‌্যাব ৬ ক্যাম্পের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে জামিরুল এন্টারপ্রাইজের কালু ও মা এন্টারপ্রাইজ এর তন্ময়কে বিপুল অংকের ভারতীয় কসমেটিকসহ আটক করে। এই অভিযানে অঞ্জন সাহা, নুর ইসলাম, সরদার, মিন্টু, সাকিব, সাত্তার পালিয়ে গিয়েছিল। এদের নামে এখনো মামলা দায়ের করা হয়। স্থানীয় অনেক দোকানীর অভিযোগ, যশোর সদর পুলিশ ফাঁড়িসহ আরো একটি ইউনিটের সাথে সখ্যতা রেখে তারা এই কারবার চালাচ্ছে। সদর ফাঁড়ির পুলিশ ওই চক্রের সাথে ফাঁড়ির পক্ষে অনৈতিক লেনদেনের যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে তথ্য মিলেছে। সদর ফাঁড়ি পুলিশের নিরবতার কারণে সেলিম আরজু মীমসহ ১৫/২০ জনের সিন্ডিকেট সক্রিয় এই ব্যবসায়। পটকাবাজি ও বিস্ফোরক কিনে অপরাধীরা বিভিন্ন এলাকা আতংকিত করে, অনেকে এই পটকাবাজি আনন্দ অনুষ্ঠানে ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যবহার করে নানা অপরাধে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শব্দ দূষণে তটস্থ করা বাজি এ কারণে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ, এ ব্যাপারে যশোরে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হলেও এবারের দূর্গোৎসবকে সামনে রেখে যশোর শহরের বড় বাজার হাটচান্নি এলাকায় নিষিদ্ধ চকলেট বাজি ও বিস্ফোরকদ্রব্য বিকিকিনির ওই শক্তিশালী সিন্ডিকেট নড়েচড়ে বসেছে। এ সিন্ডিকেট রাস্তায় প্রশাসনিক ঝামেলা এড়াতে নানা কৌশল অবলম্বন করে চলছে। এবারের পূজায় এই সিন্ডিকেটটি কয়েক কোটি টাকার বাজি বিক্রির টার্গেট নিয়েছে। এর জন্য খুচরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের সাথে তারা সমন্বয় করে চলেছে।
এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক  জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ কসমেটিক্স এবং পটকাবাজির বিষয়ে তারা খোঁজখবর নেবেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। খোঁজ খবর নিয়ে নিষিদ্ধ ভারতীয় পন্য ও পটকাবাজির ব্যাপারে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান।