ঢাকা টাওয়ার ডেস্ক —
জাতীয়তাবাদী মহিলা দল যশোর উপশহর ইউনিয়ন শাখার আহবায়ক কমিটি বাতিলের জোর দাবি উঠেছে। এই কমিটির আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়কের গুরুত্বপূর্ণ পদে দুই গৃহপরিচারিকা স্থান পাওয়ায় দলের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া কমিটির বেশিরভাগ সদস্যও অশিক্ষিত এবং বিতর্কিত।
অভিযোগ রয়েছে, যশোর কোতয়ালী থানা মহিলা দলের নেত্রী মনোয়ারা খাতুন ও তার স্বামী মো. মোস্তফা ওরফে বেড়ে মোস্ত উপশহর ইউনিয়ন বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আলী কদরের মগজ ধোলাই করে অতি গোপনে উক্ত দুই নারীসহ (গৃহপরিচারিকা) তাদের পছন্দের বেশ কয়েকজনকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এর মধ্যে ফারজানা ইয়াসমিন পায়রা উপশহর ইউনিয়নের বাসিন্দা নন। তিনি অন্য একটি ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ভোটার। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। তবে অবাক ব্যাপার হচ্ছে,এই কমিটি গঠনের বিষয়টি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবু হোসেনকে মোটেও জানানো হয়নি।
উপশহরে যেখানে শিক্ষিত মানুষের সবচেয়ে বেশি বসবাস,সেখানে অশিক্ষিত এবং বাসাবাড়ির কাজের মেয়েদের মহিলা দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সকলে হতবাক হয়েছেন। এ নিয়ে দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ। বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। প্রথম থেকেই দাবি উঠে, বিতর্কিত উক্ত কমিটি বাতিল করে শিক্ষিত ও গ্রহণযোগ্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করার। এ নিয়ে একাধিক পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপশহর মহিলা দলের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক (১ নম্বর) পদ পেয়েছেন যথাক্রমে মিনা বেগম ও ফারজানা ইয়াসমিন পায়রা বেগম। এদের মধ্যে মিনা বেগম বস্তির বাসিন্দা। লেখাপড়া বাদ দিয়ে তিনি শিশুকাল থেকেই মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি মহিলা দলের যশোর জেলা শাখার সাবেক সহ-সভাপতি খাদিজা আলীর বাড়িতে কাজ করেন। এখানে তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে কাজ করছেন। অপরদিকে পায়রা খাতুন যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি উক্ত ইউনিয়নের ভোটারও।বর্তমানে তিনি উপশহরের সি-ব্লকে ভাড়াবাড়িতে বসবাস করেন। এখানে তিনি আশপাশের কয়েকটি বাড়িতে কাজ (নিয়মিত অনিয়মিত) করেন। যা প্রতিবেশীদের জানা। এছাড়া তিনি মহিলা দলের নেত্রী মনোয়ারা খাতুনের বাড়িতেও কাজ করেন বলে জানা গেছে। অশিক্ষিত পায়রা খাতুন আওয়ামী পরিবারের সদস্য। উক্ত দুজনের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করলে অভিযোগের সত্যতা মিলবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা দলের কয়েকজন জানান, মনোয়ারা খাতুন ও তার স্বামী মো. মোস্তফা নিজেদের স্বার্থের জন্য উক্ত দুই গৃহপরিচারিকাকে গোপনে উপশহর মহিলা দলে পদ দিয়েছেন।
এজন্য উপশহর ইউনিয়ন বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আলী কদরকে (সদ্য প্রয়াত) ভুল বুঝানো হয়েছে। নিরক্ষর উক্ত দুই মহিলাকে মনোয়ারা খাতুন বিভিন্ন স্থানে শিক্ষিত বলেও পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। তারা জানান, মনোয়ারা খাতুন নিজেও অশিক্ষিত। স্কুলের গন্ডি পার হতে পারেননি। যে কারণে তিনি অশিক্ষিতদের নিয়ে দল করেন। তার হীন মনের কারণে লেখাপড়া জানা ভাল মেয়েরা দল করতে আসেন না। তিনি উপশহরে মহিলা দলকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। মহিলাদের আরও অভিযোগ, শুধু মনোয়ারা খাতুন নন, তার স্বামী মো. মোস্তফাও উপশহর মহিলা দলে নানাভাবে হস্তক্ষেপ করছেন। যারা তার স্ত্রীর পক্ষ নেন না, তাদেরকে মোস্তফা বাড়িতে ডেকে নিয়ে বকাঝকা ও চাপ প্রয়োগ করেন। যা নিয়ে মহিলা দলে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা অভিযোগ করেন, ইতিপূর্বে উপশহর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মহিলা মেম্বার পদে মহিলা দলের নেত্রী আলেয়া সিদ্দিকী আলো ও শাহানারা পারভীন মনির নির্বাচনের সময় মনোয়ারা খাতুন ও তার স্বামী মোস্তফা ওরফে বেড়ে মোস্ত তাদের বিপক্ষে কাজ করেন এবং আওয়ামীলীগের প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে গোপনে কাজ করেছেন। যা দলের অনেকেই জানেন। এরপরও এলাকায় জনপ্রিয় হওয়ার কারণে বিএনপির প্রার্থী আলো ও মনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। জনশ্রুতি রয়েছে, একবার ইউপি নির্বাচনে মেম্বার পদে অংশ নিয়ে মনোয়ারা খাতুন শোচনীয় বা লজ্জাজনকভাবে পরাজিত (তিন প্রার্থীর মধ্যে তৃতীয়) হন। এরপর থেকে নিজ দলের কেউ নির্বাচন করলে তিনি বিরোধিতা করেন। যদিও জনপ্রিয়হীন মনোয়ারা খাতুনের প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে।
বিএনপির কতিপয় নেতা জানান, উপশহর ইউনিয়ন বিএনপির ঘাঁটি। এখানে শিক্ষিত মানুষের বসবাস সব থেকে বেশি। অথচ কমিটিতে স্থান পায় অশিক্ষিতরা। বর্তমানে মহিলা দলে এই চিত্র ভয়াবহ। এখানে বাসাবাড়িতে কাজ করা অশিক্ষিত মেয়েদের মহিলা দলের কমিটিতে স্থান দেয়া মানে বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করা। এতে ধানের শীষের সমর্থকও দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা উপশহরের বাসিন্দা ও বর্তমানে যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি এড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু এবং জেলা মহিলা দলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উল্লেখ্য, এক সময় মহিলা দলের নেত্রী ফাতেমা ইয়াসমিন টুটুন, নুরুন্নাহার লাকি ও আলেয়া সিদ্দিকী আলো ছিলেন খুব জনপ্রিয়। তাদের অকাল মৃত্যুর পর মহিলা দলে আর কোন ভাল নেত্রী তৈরি হয়নি। এছাড়া খাদিজা আলী ব্যক্তিগত কারণে দল থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে উপশহর মহিলা দলে চরম ধস নামে। বর্তমানে যার অবস্থা চরম ভয়াবহ।
এই বিষয়ে উল্লেখিত মহিলা নেতৃত্বে সাথে যোগাযোগ করে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তাদেরকে ফোনে পাওয়া যায়নি যে কারণে তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।