নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ যশোর শহরের জেল রোডস্থ কুইন্স হাসপাতালে অপারেশনের ৩দিন পরে মাহমুদা বেগম(৫০)নামে এক রোগীকে কর্তৃপক্ষ ছাড়াপত্র দিয়ে ছিলেন। এ সময় রোগীর দু’মেয়ে কর্তৃপক্ষকে জানান অসুস্থ মাকে নিয়ে বাড়ির ৫তলায় উঠতে পারবে না ভাই। আপনাদের হাসপাতালের একটি কেবিন বুক করেদেন। এই বলে কেবিনেই ৫৪দিন পার করছেন তারা। এমনকি ক্লিনিক, ফার্মেসির ওষুধেরর খরচও দিচ্ছেন না তারা। বাধ্য হয়ে রোগীকে প্রতিষ্ঠান থেকে নামাতে আইনী সহযোগীতা চেয়ে জেলা সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন দিয়েছেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। তার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সিভিল সার্জন অফিসের একটি প্রতিনিধি দল ক্লিনিক তদন্ত করতে যান। এ সময় হাসপাতালে গোলযোগ হলে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে যান।
এদিকে রোগীর বড় মেয়ে রাবেয়া বসরি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘২০১৭ সাল এই কুইন্স হাসপাতালের ডাক্তার মাহবুবল আলমের তত্বাবধায়নে মায়ের অপারেশন করানো হয়। ঐ সময় ভুল অপারেশনের কারনে মা শারীরিক ভাবে বিভিন্ন অসুস্থতায় দেখা দিয়েছে। ঢাকা-যশোর বিভিন্ন চিকিৎসক দেখিয়ে কোন ফল পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন ঐ ডাক্তারের কারণে বর্তমানে আমার মা মাহমুদা বেগম লিভার, হার্ড, ডায়াবেটিসসহ নানাবিধ জটিলতায় ভুগছেন। তাই ডাক্তার মাহবুবল আলমের বিচারের দাবি জানান।
কুইন্স হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘‘চলতি বছরের ১৬ মে মাহমুদা বেগমের ইনফেকশন জনিত জটিলতা নিয়ে দুই মেয়ে কুইন্স হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরদিন ১৭ই মে হাসপাতালের ডাক্তার মাহবুবুল আলম রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষ করে রোগীর তলপেটের চামডার নিচে সিপাসিচ সিষ্ট পান। এদিন রাতে রোগী মাহমুদা বেগমকে লোকাল এ্যান্সেথেসিয়া দিয়ে বহিঃবিভাগে অপারেশন করেন। পরবর্তীতে রোগীর ঘা শুকিয়ে গেলে চিকিৎসক ৩দিনের দিন ছাড়পত্র প্রদান করেন। কিন্তু রোগীর দুই মেয়ে মাকে নিয়ে হাসপাতালে থেকে যান।” মাহমুদা বেগম যশোর শহরের বকচর এলাকার মৃত মতিয়ার রহমানের স্ত্রী। বর্তমানে রোগী মাহমুদা হাসপাতালের সপ্তম তলায় ৭০৩নম্বর কেবিনে ভর্তি আছেন।
অপরদিকে, দীর্ঘদিন তিনি হাসপাতালের কেবিনটিতে অবস্থান করছেন। কর্তৃপক্ষ বলছেন যে সমস্যা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সে সমস্যা পুরোপুরি ঠিক হয়ে গেছে। এখন তিনি সুস্থ। অথচ তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করছেন না।
এদিকে রোগীর স্বজনদের দাবি, ২০১৭ সাল মাহমুদা বেগমের কুইন্স হাসপাতালের ডাক্তার মাহবুবুল আলমের তত্বাবধায়নে অপারেশন করান। ঐ সময় ডাক্তারের ভুল অপারেশনের কারনে মাহমুদা খাতুনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। সে সময় ডাক্তার মাহাবুবুল আলমকে দেখিয়ে ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ দিয়ে কোন ফল পাননি রোগীর স্বজনরা। বর্তমানে রোগী লিভার, হার্ড, ডায়াবেটিসসহ নানাবিধ জটিলতায় ভুগছেন।
মাহমুদা বেগমের বড় মেয়ে রাবেয়া বসরি ও ছোট মেয়ে ফাতেমা তুজ জোহরা অভিযোগ করে বলেন, তাদের মা মাহমুদা খাতুনের শরীরে অন্য সমস্যা থাকার পরও ডাক্তার মাহবুবুল আলম তড়িঘড়ি করে অপারেশন করেছেন। অপারেশনের পর তাদের হাসপাতালে ভর্তি নিচ্ছিলো না। তারা অন্য চিকিৎসকের পরার্মশ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। এ সময় ক্লিনিকের অন্য চিকিৎসকের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন হার্ড, লিভার, ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে সে রোগীকে অপারেশন করা যায় না। এখন তারা তাদের মায়ের সাথে হওয়া ভুল চিকিৎসার খেসারত দিচ্ছেন। হাসপাতাল থেকে প্রতিনিয়ন তাদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। এমনকি তাদের বিষয়টা মিডিয়াতে না প্রকাশ করা ও গোপনে হাসপাতাল ত্যাগ করার জন্য নগদ মোটা অংকের টাকারও অফার করেছে।
এই সব বিষয়ে কুইন্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইটি অ্যাডমিন হাসান ইমান শিমুল বলেন, তারা একটি ফোঁড়া অপারেশনের জন্য আসেন। এই বিষয়ে সাধারণত আউটডোরে চিকিৎসা করানো হয়। তারা তাদের ৫ তলা বাড়িতে রোগী নিয়ে উঠতে পারবে না তাই বলে হাসপাতালের একটি কেবিন বুক করেন। দীর্ঘ দিন তারা কেবিনে থাকছেন। তাদের রোগী যে সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন সে সমস্যা পুরোপুরি ঠিক হয়ে গেছে । তারপরও তারা কেবিন ছাড়ছেন না হাসপাতালের বিল, এমনকি ফার্মেসির ওষুধের বিলও পরিশোধ করছেন না। তার সাথে দুই মেয়ে থাকেন। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টাই এক একজন করে বের হয়ে যান। গভীর রাতে হাসপাতালে ফেরেন। তাদের কেবিনে কাউকে প্রবেশ করতে দেন না। এমনকি দায়িত্বরত নার্সদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। তাদের ছাড়পত্র দেওয়ার পরও তারা যাচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, কোন গতি না দেখে আমরা যশোর সিভিল সার্জন অফিসসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করি। সিভিল র্সাজন অফিস থেকে লোক এসেছেন। রোগীর আনীত অভিযোগের বিষয়ে বলেন, তাদের স্পষ্ট ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে যদি মনে করেন ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে আপনারা মামলা করতে পারেন।
এবিষয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার নাজমুস সাদিক বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরে মঙ্গলবার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রথম দিনে আমরা দুই পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।###