আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বের প্রথম দেশ যারা গর্ভপাতকে সাংবিধানিক অধিকারের স্বীকৃতি দিলো ফ্রান্স। এ বিষয়ে সংবিধান সংশোধন করার জন্য একটি বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। সেখানেই গর্ভপাতের অধিকারকে সাংবিধানসম্মত করা হলো।
সোমবার গর্ভপাতের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করতে দেশটির সংবিধানে একটি সংশোধনী আনা হয়েছে। পরে এটি পাসের জন্য পার্লামেন্টে তোলা হয়। দেশটির ৭৮০ জন আইনপ্রণেতা এর পক্ষে ভোট দেন। আর বিলটির বিপক্ষে ভোট দেন ৭২ আইনপ্রণেতা।
২০২২ সালের নভেম্বরে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তখন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। গত বুধবার সেনেট এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।
গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়টি ফ্রান্সে আগেই জনপ্রিয় ছিল। এমনকী দক্ষিণপন্থি রাজনীতিকরাও এর বিরোধিতা করেননি। তারাও গর্ভপাতকে সংবিধানসম্মত অধিকার করার প্রস্তাব সমর্থন করেছেন।
প্রায় পাঁচশ জন সাংসদ ভোটাভুটিতে অংশ নেন। তার মধ্যে ৩০ জন রক্ষণশীল ও নির্দল প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফ্রান্সের জনমতও এর পক্ষে ছিল। ২০২২ সালে ফরাসি সংস্থা আইএফওপি যে সমীক্ষা করেছিল, তাতে ৮৬ শতাংশ মানুষ গর্ভপাতকে সাংবিধানিক অধিকার করার পক্ষে রায় দেন।
অতি-দক্ষিণপন্থি ন্যাশনাল রেলি পার্টি সাধারণত গর্ভপাতকে সমর্থন করে। তবে এই দলের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে প্রবল বিতর্ক হয়েছে। তাদের ৮৬ জন পার্লামেন্ট সদস্যের মধ্যে ৪৬ জন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এর মধ্য়ে লে পেনও আছেন। ১২ জন বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। বাকিরা ভোটদানে অংশ নেননি।
২০২২ সালের আগে এই অধিকারকে সংবিধানসম্মত করার কথা ভাবা হয়নি। কারণ, তখনো মেয়েদের গর্ভপাতের অধিকার ছিল এবং তারা তা করতে পারতেন।
১৯৭৫ সালে আইন পাস করে ফ্রান্সে গর্ভপাতের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। গর্ভধারণের ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত করার অধিকার সেই আইনে দেয়া হয়েছিল। পরে ২০০১ সালে তা বাড়িয়ে ১২ সপ্তাহ করা হয়। ২০২২ সালে তা ১৪ সপ্তাহ করা হয়। ১৯৮০ সাল থেকে ফ্রান্সের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পে গর্ভপাতের বিষয়টি ঢোকানো হয়েছে।
গর্ভপাতের পক্ষে থাকা মানুষরা ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, এটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।
২০২২ সালের ২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট জাতীয় স্তরে গর্ভপাতের অধিকার বাতিল করে দেয়। তারপরই ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ গর্ভপাতকে সংবিধানস্বীকৃত করার প্রয়াস শুরু করেন।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের পর অ্যামেরিকায় অনেক রাজ্যই গর্ভপাতকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে।
ইউরোপে গর্ভপাতের আইনকে আরো উদার করার একটা প্রবণতা আছে। নেদারল্য়ান্ডসে গর্ভধারণের ২৪ সপ্তাহ, সুইডেনে ১৮ সপ্তাহ, লুক্সেমবুর্গে ১৪ সপ্তাহ, আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্কে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত করা যায়।
ইইউ-র অনেক সদস্য রাষ্ট্রে দক্ষিণপন্থিরা গর্ভপাতের অধিকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। তার প্রভাবে গর্ভপাতের অধিকারও কাটছাঁট করা হয়েছে।
মাল্টায় মায়ের শরীরে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পোল্যান্ডেও নানান কড়াকড়ি করা হয়েছে। হাঙ্গেরিতে আইন আরো কড়া করা হয়েছে। ইটালির দক্ষিণপন্থি প্রধানমন্ত্রী মেলোনি গর্ভপাতের বিরোধিতা করলেও বলেছেন, তিনি আইন পরিবর্তন করবেন না।
২০২৩ সালে ইইউ-তে জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭১ শতাংশ মানুষ। গর্ভপাতের সমর্থক, ২১ শতাংশ বিরোধিতা করছেন। এই পরিস্থিতিতে ফ্রান্স গর্ভপাতের অধিকারকে সংবিধানসম্মত করার পক্ষে রায় দিলো।