যশোর প্রতিনিধি
আর মাত্র একদিন পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিশেষ করে অন্যতম শীর্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণ ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠান সরকারে কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এবারের নির্বাচন দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। এলক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতির কথাও জানানো হয়েছে। মাঠে নামানো হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী ছাড়াও আধা সামরিক বাহিনী। রয়েছে পুলিশ, র্যাব এবং উপকূলীয় এলাকার জন্যে নৌবাহিনীর সদস্যরা। মাঠ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। খোদ সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পাশাপাশি সত্যিকার অর্থে একটি অর্থবহ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ আসছে বার বার। সে কারণে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্রিষ্ঠা পূর্ণ করতে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকেও উৎসাহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দল মনোনীত প্রার্থীদের বাইরেও যদি কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে চান তাহলে তার বিরুদ্ধে দলীয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। যার প্রতিফলন দেখা গেছে নির্বাচনে। প্রায় প্রতিটি আসনে দলের নেতাদের মধ্য থেকে একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে এসেছে এসব প্রার্থীদের মধ্য থেকে যারা তুলনামূলক জনপ্রিয় তারা মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নিজেদেরকে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। কোনো কোনো আসনে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সামনে এগিয়ে আসায় আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থীরা এক ফোটা দম ফেলারও ফুরসত পাচ্ছেন না। নৌকার এসব প্রার্থী এবার দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে ভোটারদের মন জয় করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। কেউ কেউ ভোটের মাঠে চোখের পানিও ফেলছেন। এই পরিস্থিতি যশোর জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে বেশি মাত্রায়। তবে শেষ মূহুর্তের প্রস্ততিতে নৌকার প্রার্থীরা স্বতন্ত্রদের হারাতে সর্বোচ্চ চেষ্টার কমতি করছেন না।
ছয়টি আসনের মধ্যে একমাত্র যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর-বসুন্দিয়া) আসনে বলা চলে নৌকা মার্কার প্রার্থী এনামুল হক বাবুল স্বস্তিতে রয়েছেন। যদিও তাকে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ পর্যায়ে আসতে হয়েছে। প্রার্থী হিসেবে তার বৈধতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। যে কারণে ইসি এবং হাইকোর্ট থেকে এনামুল হক বাবুলের প্রার্থিতা বাতিল হয়। কিন্তু, তিনি আপিল বিভাগে যেয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছিলেন। সেটাও পুণরায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। শেষ পর্যন্ত সেই চ্যালেঞ্জ জয় করেই ভোটের মাঠে ফিরে এসেছেন এনামুল হক বাবুল। এই আইনি প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার কারণে ভোটের মাঠে প্রথম থেকে থাকতে পারেননি তিনি। চূড়ান্ত রায় পক্ষে আসায় স্বতন্ত্র প্রার্থী রণজিৎ রায় তাকে সমর্থন জানিয়ে ভোটের মাঠ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার পর এনামুল হক বাবুলের জয়লাভ এখন সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করছেন এই আসনের ভোটাররা। যশোর-১ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিন। তিনি বর্তমানসহ টানা তিনবার এই আসনের এমপি। এর আগে মাত্র একবারই তাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল। নিজের প্রথম নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী থেকে মাত্র পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। এরপরের দুই নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেছেন সুস্পষ্ট ব্যবধানে। কিন্তু, এবারের নির্বাচনে তাকে চ্যালেঞ্জে ফেলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আক্তারুজ্জামান শুধু খাতাকলমেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। যশোর-১ আসনটি সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে রয়েছে ১১টি ইউনিয়ন। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল এই উপজেলাতেই অবস্থিত। এখানে রয়েছে দুটি পুলিশি থানা। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। এই খাত থেকে বেশি রাজস্ব আদায়ের রেকর্ডও বেনাপোল বন্দরের। সীমান্তবর্তী এলাকা হিসেবে এখানে রয়েছে চোরাচালানসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড। সবদিক বিবেচনায় যশোর-১ আসনের গুরুত্ব অপরিসীম। এর আগে কয়েকটি নির্বাচনে শেখ আফিল উদ্দিন প্রায় একতরফা ভোট করার সুযোগ লাভ করলেও এবার ট্রাক প্রতীকের আশরাফুল আলম লিটন সেই সুযোগটি দিচ্ছেন না বলেই মনে করেন শার্শাবাসী। অবশ্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় অংশ শেখ আফিল উদ্দিনের পক্ষে থেকে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। লিটনের সাথে যারা আছেন তারাও চষে বেড়াচ্ছেন মাঠঘাট। যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে কাছে। বসে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন না এমপি শেখ আফিল উদ্দিনও। তিনিও ছুটছেন কাকডাকা ভোরে। বাসায় ফিরছেন গভীর রাতে। তার আমলে এলাকার নানা উন্নয়ন ও নাগরিকদের জন্য কল্যাণকর সবকিছু মেলে ধরছেন ভোটারদের কাছে। আর সচেতন ভোটাররাও বিবেচনায় আনছেন এগুলো।
যশোর-২ আসনটিতে সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের পর অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম এছাড়া স্থানীয়ভাবে আর কোনো নেতা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন লাভ করেননি। এই আসন থেকে গত নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন লাভ করে এমপি নির্বাচিত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ডাক্তার নাসির উদ্দিন। এবার মনোনয়ন লাভ করেছেন আর একজন ডাক্তার মো. তৌহিদুজ্জামান তুহিন। এই দুইজনেরই জন্ম সংসদীয় আসনের ঝিকরগাছায়। কিন্তু, তাদের বর্তমান বাস ঢাকায়। কেউই এলাকায় থাকেন না দীর্ঘ বছর। সে কারণে এলাকার মানুষ বিশেষ করে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা হতাশা সবসময়ই রয়ে গেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে আবির্ভূত হন চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান এবং যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম। এসএম হাবিবুর রহমান শেষ পর্যন্ত আর নির্বাচনের ময়দানে প্রার্থী হিসেবে থাকেননি। তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে নৌকার সমর্থনে ভোটের ময়দানে সক্রিয়। এই শূন্যস্থান পূরণে তৎপর হয়ে উঠেছেন ট্রাক প্রতীকের অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম। তিনি ঝিকরগাছার পাশাপাশি চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের হতাশ নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে কঠিন চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছেন ডাক্তার মো. তৌহিদুজ্জামান তুহিনের বিরুদ্ধে। আসনটির অন্য তিনজন প্রার্থী জাতীয় পার্টির ফিরোজ শাহ, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আব্দুল আওয়াল এবং বিএনএফের শামছুল হক ভোটারদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি। ডাক্তার তৌহিদুজ্জামান তুহিনের এখন একমাত্র মাথা ব্যাথার কারণ স্বতন্ত্র অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির। সে কারণে তিনি ভোটের মাঠে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি দলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায়ও মনোনিবেশ করতে বাধ্য হচ্ছেন। নির্বাচনী বক্তৃতায়ও এই বিষয়টির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নিয়ম মেনে রোগীর সেবা করা এই প্রার্থী এবার কোনো নিয়মের ঘেরাটোপে আর থাকতে পারছেন না। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টাই যেনো তার কাছে কাজের সময়ে পরিণত হয়েছে। ভুলে গেছেন নাওয়া-খাওয়া। ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
একইভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন যশোর-৩ আসনের বর্তমানসহ পরপর দুই বারের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ। নৌকার এই প্রার্থীকে এবার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের যশোর জেলা সদস্য ও সদর উপজেলা সভাপতি মোহিত কুমার নাথ। মোহিত কুমার নাথ এক সময় যশোর জেলার রাজনীতিতে পরস্পরবিরোধী দুটি বলয়ের একটির নেতা এমপি কাজী নাবিল আহমেদের সাথেই ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এখনো তিনি সে বলয়েই সক্রিয়। দীর্ঘদিন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেও তার ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি পরিচিতি রয়েছে। সেইসব কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন মোহিত কুমার নাথ। নিজের ঈগল প্রতীকের সমর্থনে তিনি সাথে পেয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আরবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলামসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে। কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানও তার সাথে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। সবমিলিয়ে কাজী নাবিল আহমেদ এবার যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবর্তীর্ণ হয়েছেন তা তার নির্বাচনী প্রক্রিয়াই বলে দিচ্ছে। তিনিও ছুটছেন দিনরাত। যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। একের পর এক নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা করছেন। শোনাচ্ছেন তার সময়ে সম্পন্ন হওয়া উন্নয়নের কাহিনী। আগামীতে নির্বাচিত হতে পারলে এই উন্নয়ন আরও বিস্তৃত হবে বলেও দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি। তার এই নির্বাচনী ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনসহ দলের প্রায় সকল শীর্ষস্থানীয় নেতা অংশ নিচ্ছেন। মাঠে রয়েছেন স্ত্রী ডাক্তার মালিহা মান্নানও। ইতিমধ্যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপে তৃণমূলের ভোটারদের কাছে পৌঁছে গেছেন কাজী নাবিল। ফলে ভেদাভেদ ভুলে নিরব থাকা কর্মীরা কোমর বেধে মাঠে নেমে পড়েছেন। জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন নৌকার পক্ষে। এবারের নির্বাচনে যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়েছেন বর্তমানসহ পর পর দুইবারের এমপি ও প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। এবারও নৌকা নিয়ে ভোটের ময়দানে থাকা এই বর্ষিয়ান নেতা দিনরাত চষে বেড়াচ্ছেন সংসদীয় আসনের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে। সকাল থেকে গভীর রাত তিনি ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। ভোটারদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তার সময়ে করা কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের বিভিন্ন প্রকল্প, স্কুল, মাদ্রাসা, মন্দির, রাস্তাঘাটসহ নানা উন্নয়নের কথা। আহŸান জানাচ্ছেন অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করতে আগামীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করতে। কিন্তু,স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম-বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি এসএম ইয়াকুব আলী বড় ফ্যাক্টর। ঈগল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াকুব আলীও কম যাচ্ছেন না। তিনিও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। বলছেন, ‘শাসক নয়, সেবক হতে চাই’। দীর্ঘ সময় নানা সেবামূলক কাজের মাধ্যমে মণিরামপুরের মানুষের কাছে এসএম ইয়াকুব আলী আগে থেকেই পরিচিত। এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি নিজেকে আরও বেশি সক্রিয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। এই আসনে জাতীয় পার্টির এম এ হালিম, ইসলামি ঐক্যজোটের মাওলানা নুরুল্লাহ আব্বাসি এবং তৃণমূল বিএনপির মেজর বনিকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তেমন কোনো আলোচনাই শোনা যায়নি।
জেলার কেশবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত যশোর-৬ আসন। এই আসনের বর্তমান এমপি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। তিনি এবারও এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন লাভ করেছেন। তবে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আমির হোসেন এবং উপজেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল ইসলাম। এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে জিএম হাসান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তিনি তেমন একটা আলোচনাতে নেই। যশোর-৬ আসনের নির্বাচন মূলত নৌকার আর দুই স্বতন্ত্রের সাথে ত্রিমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন শাহীন চাকলাদারের নৌকা এবং আমির হোসেনের কাঁচি। এই আসনের সাবেক এমপি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর তৎকালীন সদস্য এএসএইচকে সাদেক ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক দলীয় মনোনয়ন লাভ করে এমপি নির্বাচিত হন। পরে তিনি প্রথমে গণশিক্ষা ও পরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর তার কন্যা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মনোনয়ন লাভে তৎপর হয়ে উঠলেও ভাগ্যের শিকে ছেড়ে শাহীন চাকলাদারের। দলীয় নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে গত নির্বাচনে তাকে জয়ী করতে নির্বাচনী ময়দানে ছিলেন। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন লাভ করায় তা সহজে মেনে নিতে পারেননি দলের একটি বড় অংশ। যার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এইচএম আমির হোসেন এবং আজিজুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়েছেন। এতে জমে উঠেছে যশোর-৬ আসনের নির্বাচন। ‘স্থানীয় এমপি চাই’-এমন শ্লোগান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠ চষলেও বিচলিত হননি শাহীন চাকলাদার। তিনিও সমানতালে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন জোরালোভাবে। স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি তিনি যশোর থেকেও নেতাকর্মীদের তার নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় সক্রিয় করে তুলেছেন। নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে এবার তিনি দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যশোরের পাঁচটি আসনে ভোটের মাঠকে উৎসব মুখর আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ করে তুলেছেন।