ক্রিয়া নিউজ ডেস্ক: ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে উড়তে থাকা ভারতকে অবশেষে টেনে মাটিতে নামালো অস্ট্রেলিয়া। ভারতের মাটিতে ভারতকে হারিয়ে নিজেদের হেক্সা মিশন পূর্ণ করলো অজিরা। আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসেরর ফাইনালে ট্রাভিস হেডের সেঞ্চুরি ও মার্নাস লাবুশেনের অর্ধশতকে ভর করে ভারতকে ৬ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুললা অস্ট্রেলিয়া।
কথায় বলে শেষ ভালো যার সব ভালো তার। ভারতের ক্ষেত্রে যেনো একদম কাটায় কাটায় মিলে গেলো কথাটা। ২০২৩ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ৯ ম্যাচ ও সেমিফাইনালসহ ১০ ম্যাচে অপরাজিত থেকে ফাইনালে পা রাখে ভারত। কিন্তু ফাইনালে পৌঁছেই খেই হারিয়ে ফেললো তারা। ফাইনালে অজিদের বিপক্ষে টিস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স এবং জশ হ্যাজেলউডের বোলিং তোপে মাত্র ২৪০ রান তুলতে সক্ষম হয় তারা। ভারতের ব্যাটাররা সবাই আজ ছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলে। বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল অর্ধশতক তুলে নিলেও তা কাজে লাগেনি।
ভারতের দেওয়া ২৪১ রানের লক্ষে ব্যাটিং করতে নেমে অজিরাও পড়ে ব্যাটিং ব্যর্থতায়। মাত্র ৪৭ রানেই ৩ উইকেট হারায় তারা। তবে দলটার নাম অস্ট্রেলিয়া। পাহাড়সম চাপ সামলে লড়াই করতে জানেন তারা। গ্রুপ পর্বে ৯১ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ২০১ রান করে দলকে জয় উপহার দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। আর আজ ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ে দলকে জয় উপহার দেন ট্রাভিস হেড ও মার্নাস লাবুশেন। ট্রাভিস হেডের ১২০ বলে ১৩৭ রান আর মার্নাস লাবুশেন অপরাজিত ৫৮ রানে ভর করে ৪৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া।
ভারতের দেওয়া লক্ষ তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই তাণ্ডব চালাতে থাকেন অজি ব্যাটাররা। প্রথম ওভারেই নেন ১৫ রান। কিন্তু এর পরের ওভারেই ঘটে ছন্দপতন।
৩ বলে ৭ রান করা ডেভিড ওয়ার্নারকে ফেনার মোহাম্মদ শামি। মোহাম্মদ শামির বলে স্লিপে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান তিনি। তার বিদায়ে ১৬ রানেই ওপেনিং জুটি ভাঙে অস্ট্রেলিয়ার।
ডেভিড ওয়ার্নারের বিদায়ের পর ট্রাভিস হেডকে নিয়ে জুটি গড়েন মিচেল মার্শ। এই জুটি দলের বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হন তারা। দলীয় ৪১ রানে মিচেল মার্শের ভেঙে যায় এই জুটি।
১৫ বলে ১৫ রান করে জাসপ্রিত বুমরাহর বলে উইকেট রক্ষক লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে। তার বিদায়ে ৪১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার বিপদ আরও বাড়িয়ে দলীয় ৪৭ রানে ফিরে যান স্টিভেন স্মিথও। ৯ বলে ৪ রান করে জাসপ্রিত বুমরাহর বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি।
৪৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন ট্রাভিস হেড ও মার্নাস লাবুশেন। দেখেশুনে খেলতে থাকেন এই দুই ব্যাটার। উইকেট ধরে রেখে সিঙ্গেল নিয়ে খেলতে থাকেন তারা। এই জুটিতে ভর করে ১৯ ওভার ১ বলে দলীয় শতক পূর্ণ করে অস্ট্রেলিয়া।
এর পরেই বিশ্বকাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি তুলে নেন ট্রাভিস হেড। ৫৮ বলে অর্ধশতক তুলে নেওয়ার পর ৯৫ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। যার মধ্যে রয়েছে ১৪ টি চার ও ১ টি ছয়ের মার।
ট্রাভিস হেডের পর অর্ধশতক তুলে নেন মার্নাস লাবুশেন। ৯৯ বলে ৫০ রান করেন তিনি। দলীয় ২৩৯ রানে ট্রাভিস হেডের বিদায়ে ভেঙে যায় এই জুটি। শেষ পর্যন্ত ৪৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় অজিরা। ট্রাভিস হেড করেন ১২০ বলে ১৩৭ রান আর মার্নাস লাবুশেন অপরাজিত থাকেন ৫৮ রানে।
এর আগে অজিদের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৩০ রানেই প্রথম উইকেট হারিয়ে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে উপস্থিত লাখ খানেক দর্শককে কষ্টের ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় ভারত। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ভারত। বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল অর্ধশতক তুলে নিলেও অন্য ব্যাটাররা ছিলেন ব্যর্থ। শুভমান গিল, শ্রেয়াস আইয়ার, রবীন্দ্র জাদেজা, মোহাম্মদ শামি, জাসপ্রিত বুমরাহ দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতেই পারেননি। নবম উইকেট জুটিতে সূর্যকুমার যাদব ও কুলদ্বীপ যাদবের ১২ রানের জুটি ও দশম উইকেট জুটিতে কুলদ্বীপ যাদব ও মোহাম্মদ সিরাজের ১৪ রানের জুটিতে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৪০ রান তুলতে সক্ষম হয় ভারত।