যশোর প্রতিনিধি
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মধ্যে চার দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শেষ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে যশোর শহরের একটি পাঁচতারকা হোটেলে বিজিবির রিজিয়ন কমান্ডারস (রংপুর ও যশোর রিজিয়ন) এবং বিএসএফের ফ্রন্টিয়ার ইন্সপেক্টর জেনারেলসের (সাউথ বেঙ্গল, নর্থ বেঙ্গল ও গৌহাটি ফ্রন্টিয়ার) মধ্যে সম্মেলনটি শেষ হয়। এবারের সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা নিরসন, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মাদক পাচার, মানব পাচার রোধ, স্বর্ণ ও অন্ত্র চোরাচালন রোধসহ বিভিন্ন ধরণের আন্তঃ সীমান্ত অপরাধ দমন, সীমান্তরে ১৫০ গজের মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি ও আস্থা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়। চারদিনব্যাপী সম্মেলন শেষে আজ যৌথ আলোচনার দলির স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে অত্যন্ত সৌহার্য্যপূর্ণভাবে সম্মেলনটি শেষ হয়েছে। এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর এই সম্মেলন শুরু হয়। বিএসএফের সাত সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের আইজি শ্রী আয়্যুষ মানি তিওয়ারি। অন্যদিকে ২১ সদস্যের বিজিবির নেতৃত্ব দিচ্ছেন রংপুর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলম।
মঙ্গলবার দুপুরে সম্মেলন শেষে দুই বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়া বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের আইজি শ্রী আয়্যুষ মানি তিওয়ারি ও বিজিবির রংপুর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলম সম্মেলনের সার্বিক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে বিজিবির যশোর সদর রিজিয়ন দপ্তরের পরিচালক অপারেশন মোহাম্মদ আনোয়ারুল মাযহারের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়-এবারের সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা নিরসন, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মাদক পাচার, মানব পাচার রোধ, স্বর্ণ ও অন্ত্র চোরাচালন রোধসহ বিভিন্ন ধরণের আন্তঃ সীমান্ত অপরাধ দমনসহ ৬টি বিষয়ে সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিন্ধান্তগুলো হলো-
বিজিবি সীমান্তে বিএসএফের নিরস্ত্র বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা/আহতের ঘটনা জোরালো ভাবে তুলে ধরে। এ প্রসঙ্গে বিজিবি বিএসএফকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃদ্ধির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সীমন্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনার জন্য আহ্বান জানায়। সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিএমএফের পক্ষ থেকে নন- লেথাল নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনরাক্ত করা হয়। উভয়পক্ষ সীমান্তে পেশাদারিত্বের সাথে যৌথভাবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত রাত্রিকালীন যৌথ টহল বৃদ্ধি, সীমান্তবর্তী এলাকার জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনসচেতনতা ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ, অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গরহণ এবং তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদানের ব্যাপারে সম্মত হয়। ২. আন্তঃ সীমার অপরাধ যেমন, মাদক পাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানব পাচার, স্বর্ণ, মুদ্রার নোট প্রভৃতি চোরাচালান রোধে সমন্বিত সীমার ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (Coordinated Border Management Plan CBMP) কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ওপর উভয় পক্ষ হতে শুরু করা হয়। সীমান্ত অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান এবং তাদের সম্পর্ক প্রা তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে মাঠ পর্যায়ে শেয়ার করতেও উভয়পক্ষ সম্মত হয়। ৩. আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে উভয় দেশের নাগরিকদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম রোধকল্পে সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ব্যাপারে উভয় পক্ষ কর্তৃক গুরুত্বারোপ করা হয়। ৪. উভয়পক্ষ পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও আস্থা বৃদ্ধির জন্য গৃহীত নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়নে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে একমত হন। উভয়পক্ষ আগামী দিনে যৌথ খেলাধুলা, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বিনিময়সহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে সম্মত হয়েছেন। ৫.উভয়পক্ষ পূর্বানুমতি ব্যতীত সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ না করার ব্যাপারে পারস্পরিক সম্মতি জ্ঞাপন করেন। এছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা উন্নয়নমূলক কাজসমূহ ডায়েন্ট ভেরিভিকেশনের মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে সম্মত হন। ৬. উভয়পক্ষ পরবর্তী সীমান্ত সম্মেলন সুবিধাজনক সময়ে ভারতে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।
সম্মেলনে বিজিবি রিজিয়নের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট সেক্টর কমান্ডার, বিজিবির স্টাফ অফিসার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এবং যৌথ নদী কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। অন্যদিকে ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফ নর্থ বেঙ্গল ও গৌহাটি ফ্রন্টিয়ারের আইজিরা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সেক্টরের ডিআইজি, বিএসএফের স্টাফ অফিসার, ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করেন।