পাঁচ বছর আগে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনা ভাইরাস ফের নতুন রূপে ফিরে আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও বেড়েছে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন একটি ঢেউয়ের মুখে রয়েছে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) পরিচালিত সর্বশেষ কোভিড-১৯ সার্ভিলেন্স ‘ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিলেন্স ও পিএইচওসি’ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে শুরু করেছে।
জুন মাসে ১ হাজার ৪০৯ জন সম্ভাব্য কোভিড-১৯ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৩৪ জন পজিটিভ শনাক্ত হন, যা পরীক্ষার ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। এটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মে সময়কালে সর্বোচ্চ হার। এর আগে ২০২৩ সালের মে-আগস্ট এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারি-আগস্টে সংক্রমণের হার ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি।
সর্বশেষ পাওয়া করোনা ভাইরাসের নমুনাগুলোর জিনোম সিকুয়েন্সিং করে ‘ওমিক্রন বিএ ২.৮৬’ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, যা এর আগেও দেশে শনাক্ত হয়েছিল।
আইসিডিডিআরবি চলতি বছর সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে নতুন দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি এবং এক্সএফসি বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরেছে।
জুন মাসের প্রথম ১০ দিনে ১৪টি জিনোম সিকুয়েন্স করা হয়। এর মধ্যে ১২টিতেই এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, যা ওমিক্রন জেএন.১-এর একটি উপশাখা। সম্প্রতি যেসব নমুনা পাওয়া যাচ্ছে, এর প্রায় সবকটিতে এক্সএফজি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বিবৃতি থেকে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছর মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬৯ জন এবং এ যাবত দেশে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। চলতি বছরে করোনায় মোট ২২ জনের মৃতু্ হয়েছে। চলতি বছরে করোনায় মারা যাওয়া ২২ জনই জুন মাসে মারা যান। দেশে এযাবৎ করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার পাঁচ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ যাবত শনাক্তের হার মোট ১৩ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে করোনা বাড়ছে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, ছোট কিংবা বড় হোক আমরা করোনার আরেকটি ঢেউয়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। যে প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমরা যে সংখ্যক করোনা আক্রান্ত রোগীর তথ্য পাচ্ছি, তা প্রকৃত সংখ্যা নয়, আক্রান্তের একটা মাত্র অংশের তথ্য আমরা জানতে পারছি। বরফ খণ্ড যখন সমুদ্রের পানিতে ভাসমান থাকে, তখন বরফের ১২ ভাগের এক ভাগ পানির উপরে থাকে বাকিটা পানির নিচে থাকে। করোনার যে রোগীগুলোকে আমরা নির্ণয় করতে পেরেছি, সেটা হচ্ছে সেই ভাসমান অংশ। প্রকৃত সংখ্যা অনেক। আমরা নথিবদ্ধ মৃত্যু যে ২২ জন বলছি, আমাদের ধারণা এর বাইরেও অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। সবমিলে বলা যায়, ছোট বড় কিংবা মাঝারি যাই হোন না কেন, একটি ঢেউয়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি।
চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন এই ধরনটির সংক্রামিত করার ক্ষমতা বেশি হলেও রোগের তীব্রতা কম। তবে অসাবধানতা এবং অচেতনতায় ধরনটি যেকোনো সময় শক্তিশালীও হয়ে উঠতে পারে। তাই সবাইকে যথেষ্ট সচেতন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।