ঢাকা অফিস: ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন বাংলাদেশের পূর্ব ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ভারত ‘অমানবিকতার পরিচয়’ দিয়েছে। আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও বন্যার জন্য ভারতের ‘বাঁধ খুলে দেওয়াকে’ দায়ী করে বলেছেন, এর কারণে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন নাহিদ। আগের রাতে আসিফ তার ফেইসবুক পাতায় এক পোস্টে এই প্রতিক্রিয়া জানান।
নাহিদ বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি-উজানের পানি বাংলাদেশে ধেয়ে এসে এ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করছে। কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে এ যে বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে; এটির মাধ্যমে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে এবং বাংলাদেশের সাথে অসহযোগিতা করছে।
কুমিল্লা ও ফেনী অঞ্চলে বন্যার পর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে যে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বন্যা নিয়ে বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছে এক দল শিক্ষার্থী, যারা এই দুর্যোগের জন্য ভারতকে দায়ী করেছে। আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নূর। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে।
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “ত্রিপুরায় গোমতী নদীর উজানে ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়াকে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির কারণ হিসাবে বর্ণনা করে বাংলাদেশে যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে, তা আমরা দেখেছি। এটা তথ্যগতভাবে সঠিক নয়।
দেশের উত্তর পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলে বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করছেন নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতে গোমতী নদীর সংলগ্ন এলাকায় গত কয়েকদিনে চলতি বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বাঁধের ভাটি এলাকার পানির কারণে বাংলাদেশের বন্যা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে উজানে ১২০ কিলোমিটার নদীপথে তিনটি পানির পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থাকার কথা বলা হয়েছে বিবৃতিতে। যার মধ্যে অমরপুর স্টেশন থেকে দ্বিপক্ষীয় প্রটোকলের আওতায় বাংলাদেশকে বন্যার হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হয়।
পানি বৃদ্ধি পাওয়ার উর্ধ্বমুখী প্রবণতার তথ্য ২১ অগাস্ট বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় বন্যার কারণে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় যোগাযোগে সমস্যা তৈরি হয়।
নাহিদ বলেন, “বাংলাদেশ মানুষ, শিক্ষার্থী ও জনগণ এ বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ এবং বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের পানি ন্যায্য হিস্যা নিয়ে আন্দোলন করছে, কথা বলে আসছে।
আমরা আশা করব, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের ভেতরে কোনো টানাপড়েন যাতে না হয়। ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভারত-বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক প্রতিস্থাপন করা হয়।
উপদেষ্টা বলেন, “আমরা আহ্বান করব, আমরা আশা করব দ্রুত সময়ের মধ্যে ভারত বাংলাদেশের ‘জনগণবিরোধী’ এ ধরনের নীতি থেকে সরে আসবে। আমরা কীভাবে একত্রে বাংলাদেশের জনগণ ও ভারতের জনগণকে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারি-সে বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের পথ বের করতে হবে।
বন্যা মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বানও জানান নাহিদ। বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে যেভাবে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, একইভাবে একত্রে সরকারি-বেসরকারি সবাই বন্যা পরিস্থিতি যেন মোকাবিলা করতে পারি।”