আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার অভিযোগে চার ‘চরমপন্থি’ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। খবর বিবিসির।
সোমবার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ওই চারজনের বিরুদ্ধে আর্থিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও ইসরায়েলকে সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে দাঙ্গা-সহিংসতা ব্যাপক হারে বেড়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর থেকে পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরে বা ইসরায়েলে সংঘাত-সম্পর্কিত ঘটনায় কমপক্ষে ৩৮৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন। এছাড়া একই সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চার সদস্যসহ ১০ ইসরায়েলিও নিহত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকে জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর দখল করেছে ইসরায়েল, যা ফিলিস্তিনিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মূল হিসাবে চায়। সেখানে ইহুদিরা ব্যপক বসতি তৈরি করেছে যা বেশিরভাগ দেশ অবৈধ বলে মনে করে। তবে ইসরায়েল এর বিরোধিতা করে এবং জমির সাথে ঐতিহাসিক ও বাইবেলের সম্পর্ক রয়েছে বলে উল্লেখ করে।
কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা গেছে। প্রায়ই ফিলিস্তিনিদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণে এবং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরু করার পর থেকে সেখানে সংঘর্ষের তীব্রতা আরও বেড়েছে।
বসতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা পিস নাও-এর তথ্য অনুসারে, পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরের ১৬০টি বসতি এবং ১৪৪টি ফাঁড়িতে প্রায় ৭ লাখ ইহুদি বাস করে। ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করার পরে নানা সময়ে ক্ষমতায় আসা ইসরায়েলি সরকারগুলো এসব বসতি তৈরি করে। আর ছোট ফাঁড়িগুলো সরকারি কোনও অনুমোদন ছাড়াই নির্মিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগই ইহুদি এসব জনবসতি এবং ফাঁড়িগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিবেচনা করে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, বসতি এবং অননুমোদিত ফাঁড়ির কিছু বাসিন্দা ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের ওপর তাদের জমি ছেড়ে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হয়রানি, ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি সহিংসতাকে ব্যবহার করেছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ‘চরমপন্থি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের হুমকি দিচ্ছে এবং প্রায়শই বন্দুকের মুখে তাদের জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য করছে। এই আচরণ বেআইনি এবং অগ্রহণযোগ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলকে অবশ্যই আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রায়শই নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা পালন করা হয়নি।’
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের ৪ জন নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও পশ্চিম তীরে ‘চরমপন্থী’ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে কানাডা। এই অঞ্চলে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে চার ইসরায়েলির বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার একদিন পরে এই ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
গত শুক্রবার অন্টারিওর ওয়াটারলুতে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রুডো বলেন, ‘পশ্চিম তীরে সহিংসতা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য এবং এই অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং দুই রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে যেটি একেবারে অপরিহার্য।