যশোর রেজিস্ট্রি অফিস ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমরুলকে রক্ষা করে রেকর্ড কিপার ভৈরবের বিরুদ্ধে তদন্ত

যশোর প্রতিনিধি
অবশেষে যশোর রেজিস্ট্রি অফিসের মহাফেজ খানার রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে । তবে মহাফেজ খানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমরুল হাসানকে রক্ষার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। একই সাথে ক্যাশিয়ার নকল নবিশ নূর নবীকেও রক্ষা করতে মাঠে নেমেছে ওই সব দুর্নীতিবাজরা।
সূত্র জানায়, ইমরুল হাসান তার অবৈধ আয়ের জন্য সহকারী রেকর্ড কিপার রমা প্রসাদ চক্রবর্তী ও ক্যাশিয়ার নকল নবিশ নূর নবীকে বহাল তবিয়াতে রেখে অনিয়ম-দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। ভৈরব চক্রবর্তী যেভাবে মানুষকে জিম্মি করে টাকা নিতেন একইভাবে রমা প্রসাদ ও নূর নবী এখনো পর্যন্ত একই ভাবে ঘুষ আদায় করে চলেছেন।
সূত্র জানায়, জেলা রেজিস্ট্রার, যশোর ২২/০৮/২০২৩ ইং তারিখের ৫২০ নং স্মারক এবং ১০/০৯/২০২৩ ইং তারিখের ৫৬৫ স্মারকে বলা হয়, মহাফেজ খানার রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীর  বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযোগগুলো হলো বেআইনি ও অনৈতিকভাবে সদর মহাফেজ খানা বন্ধ রাখা, আর্থিক অনিয়ম, জন হয়রাণি, গুরুতর অসদাচারণ, স্বেচ্ছাচারিতা, সরকারি রাজস্ব আদায়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, নোটিশ ছাড়াই রেকর্ড বন্ধ রাখা, নকল সরবরাহ না করা, গ্রাহকদের সম্মানহানি করা এবং ২৬/০৭/২০২৩ থেকে ৩১/০৭/২০২৩ তারিখ পর্যন্ত কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই অর্থাৎ উধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত সদর রেকর্ড রুমের নকল সরবরাহ ও তল্লাশী কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।
পত্রে আরো বলা হয়, জনবান্ধব অফিস ব্যবস্থপনা ক্ষেত্রে যেমন প্রতিবন্ধক, তেমনি নিরন্ত্রর সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে চরম স্বেচ্ছাচারিতার সামিল। এহেন শৃঙ্খলা পরিপন্থি, স্বেচ্ছাচারি কর্মকান্ড এবং অসদাচারণের বিষযে আগামী ৩ অক্টোবর সকাল ১০ টায় সদর সাব রেজিস্ট্রিার অফিসে তদন্ত হবে।
সূত্র জানায়, যশোর রেজিস্ট্রি অফিসে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি চলে আসছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। সদরের সাব রেজিস্ট্রার ইমরুল হাসানকে মহাফেজ খানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব দেওয়ার পর এখানে অনিয়ম-দুর্নীতির মহাউৎসব শুরু হয়। ঘুষের বিনিময়ে রেকর্ড রুমে ভূতুড়ে ঘটনার নজির বিহীন। ভৈরব চক্রবর্তীকে দিয়ে সাব রেজিস্ট্রার ইমরুল হাসান ভলিউমে ঘষামাজা, দলিলে দাগ ফেলা বা পাতা হারানোর ঘটনা অহরহ ঘটেছে। এমনকি বড় অঙ্কের লেনদেন হলে পুরো ভলিউম গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। আর এ থেকে দুর্নীতিবাজ ইমরুল হাসান লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে আয় করেছেন। বছর জুড়ে ভলিয়ম বইয়ের পাতা ছেড়া, ছবি পাল্টিয়ে জাল সই দেওয়া, রেজিস্ট্রি করা দলিলের মধ্যের অংশবিশেষ পাল্টিয়ে সুবিধামতো পাতা লাগিয়ে ভুয়া দাগ ও খতিয়ান লিখে রাখা, মূল দলিল ফেরত না দিয়ে হয়রানি করাসহ রেজিস্ট্রার অফিসের এমন নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ঘটনায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এসব অহরহ ঘটনা ঘটলেও সাব রেজিস্ট্রার ইমরুল হাসান সব সময়ই ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যান। অবশেষে মহাফেজ খানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমরুল হাসান ও তার ক্যাশিয়ার নকল নবিশ নূর নবীকে বাদ দিয়ে রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। সাব রেজিস্ট্রার মহাফেজ খানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমরুল হাসান ও তার ক্যাশিয়ার নকল নবিশ নূর নবীকে বাদ দিয়ে তদন্ত শুরু হওয়ায় দলিল লেখক, নকল নবিশসহ রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মচারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
তারা বলছেন, পালের গোদাকে বাদ রেখে এই তদন্ত কখনো সুষ্ঠু হবে না। আগে পালের গোদা মহাদুর্নীতিবাজ ইমরুল হাসানকে তার পদ থেকে সরিয়ে তার বিরুদ্ধে আগে তদন্ত করতে হবে। তা না হলে এই তদন্ত কখনো সুষ্ঠু হবে না।
তারা আরো বলছেন, ভৈরব চক্রবর্তী এবং তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণ ম-ল একই সম্প্রদায়ের মানুষ। ভৈরব চক্রবর্তী ঠাকুর বংশের লোক। আর নারায়ন মন্ডল তার চেয়ে নিচু বংশের মানুষ। এ কারণে ঠাকুরের বিরুদ্ধে কখনো সুষ্ঠু তদন্ত হবে না। এই তদন্ত দায়সারাভাবে সম্পন্ন হবে। দোষিদের কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে না। হয়রাণির শিকার ভুক্তভোগিরা কখনো ন্যায় বিচার পাবে না।