আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরের মৃত্যুতে উত্তাল রয়েছে ফ্রান্স। তিন দিন ধরে চলছে সহিংস বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ দেশটির অনেক শহরে বিক্ষোভ হয়। এসময় বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। দাঙ্গা ও লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগ এ পর্যন্ত ৮৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও আরও ৫০০ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্যারিসের উপশহরে জারি করা হয়েছে কারফিউ। খবর এএফপি, আল-জাজিরা ও বিবিসির।
একটি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নোট অনুসারে, সামনে শহরের সহিংসতা আরও নাটকীয় রুপ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং রাষ্ট্রীয় বিষয়বস্তুতে লক্ষ্যবস্তু করা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে একটি পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, প্যারিসের একটি উপশহর ক্ল্যামার্টে ইতোমধ্যেই কারফিউ ঘোষণা করেছে। এখানে বৃহস্পতিবার থেকে আগামী সোমবার পর্যন্ত রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ চলবে।
গত মঙ্গলবার প্যারিসের নান্টেরে শহরে গাড়ি চালানো অবস্থায় নাহেল এম নামে নাইজেরিয়ান ও আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করে পুলিশ। এতে কিশোরের মৃত্যুর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি বিধ্বস্ত হয়।
নিহত কিশোর নাহেলের মা ফরাসি টিভি ফ্রান্স ৫ কে বলেন, ‘আমি পুলিশকে দোষ দিই না, আমি একজনকে দোষ দেই যে আমার ছেলের জীবন নিয়েছে।’
নাহেলকে হত্যার জন্য অভিযুক্ত অফিসার বলেছেন, তিনি গুলি চালিয়েছিলেন কারণ তিনি অনুভব করেছিলেন যে তার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। তার আইনজীবী ফরাসি রেডিও স্টেশন আরটিএলকে জানিয়েছেন, তার মক্কেল তার আগ্নেয়াস্ত্রটি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন।
এদিকে নাহেলের মৃত্যুর জন্য ওই ফরাসি পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তাকে হেফাজতে রাখা হয়েছে।
তার হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে সহিংসতার জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বিক্ষোভকারারী। সহিংসতার সময় নান্টেরে শহরে একটি বিল্ডিংয়ের নিচতলায় ভয়াবহ ধরনের আগুন লাগে। এই বিল্ডিংয়ে এক ব্যাংক ছিল। বিক্ষোভের সময় দোকান ও গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। তিন দিন ধরে চলছে বিক্ষোভ-সহিংসতা।
এর আগে বুধবার রাতে প্যারিসের আশেপাশে এবং অন্যান্য শহরগুলিতে গাড়ি, বিন, স্কুল এবং সরকারি অফিসে অগ্নিসংযোগ করার কারণে দেশব্যাপী প্রায় ১৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
অস্থিরতার তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার বিকালে হাজার হাজার মানুষ নাহেলের জন্য একটি শ্রদ্ধা মিছিলে উপস্থিত হয়েছিল। কয়েক ঘণ্টা পর সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়। লিলি এবং মার্সেইতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বেশিরভাগ বিক্ষোভ-সহিংসতা রাজধানী প্যারিসকে কেন্দ্র করে। ২৪২টি সহিংসতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
বিবিসি জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে দাঙ্গাকারীরা সেন্ট্রাল প্যারিসের রু ডি রিভোলি বরাবর দোকানে ঢুকে পড়ে। চলে ভাঙচুর-লুটপাট। হাই-অ্যান্ড রাস্তাটি লুভর এবং জার্ডিন দেস টুইলেরির পাশে। এসব ঘটনার অনেক ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, দাঙ্গাকারীরা বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড জারা কাপড়ের দোকানে ঢুকছে এবং পণ্যদ্রব্য নিয়ে দোকান থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এই রাতে লুটপাটের আরও কিছু ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে। এর একটিতে দেখা যায়, প্যারিসের ওয়েস্টফিল্ড ফোরাম ডেস হ্যালেসের নাইকির শোরুমের বাইরে এক ঝাঁক লোক চেঁচামেচি করছে এবং স্টোরের সামনের জানালা ভাঙছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন জাতীয় পুলিশের কমান্ড সেন্টারে রয়েছেন। রাতভর কেন্দ্রীয় কমান্ডে ছিলেন তিনি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার রাতে ফ্রান্স জুড়ে ৪০ হাজার পুলিশ অফিসার মোতায়েন করার আদেশ দেন। মঙ্গলবার এবং বুধবার রাতে বেশ কয়েকটি ফরাসি শহরে দাঙ্গায় গাড়ি এবং ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে, অস্থিরতা মোকাবিলায় ফ্রান্স জুড়ে তাদের মোতায়েন করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড জানিয়েছেন, শুধু বুধবার রাতের সংঘর্ষে ১৭০ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন এবং ১৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালেও কর্মকর্তারা আহত হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও এবং ছবিগুলিও দেখা যায় সহিংসতার সময় বেশ কয়েকটি জায়গায় আবর্জনার স্তূপ জ্বলছে।
এ অবস্থায় প্যারিস এবং বিস্তৃত অঞ্চলে বাস এবং ট্রাম পরিষেবাগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু শহরতলীতে রাতের সময় কারফিউ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। লিল এবং ট্যুর শহরেও পরিবহন পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এলিসাবেথ বোর্ন কিশোরের মৃত্যুর পরে সবার আবেগের বহিঃপ্রকাশকে সম্মান জানিয়েছেন। তবে তিনি দাঙ্গার নিন্দা করেছেন। বলেন, ‘কোনো কিছুই এই সহিংসতাকে সমর্থন করে না।’