গাইবান্ধা প্রতিনিধি: কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়মের কারণে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের পুনর্ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএমে।
কনকনে শীত আর ঠাণ্ডা হাওয়ার মধ্যে বুধবার সকাল ৮টা থেকে চলছে ভোট।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, তীব্র শীত আর কুয়াশার মধ্যেও বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় এ নির্বাচনী এলাকার ১৪৫টি কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়েই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, যা একটানা বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে।
নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি কেন্দ্র ও কক্ষে বসানো হয়েছে ১ হাজার ২৪২টি সিসিটিভি ক্যামেরা।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান ভোটের আগের দিন মঙ্গলবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘এতকিছুর পরও অনিয়মের পুনরাবৃত্তি হলে ছাড় দেওয়া হবে না।’
‘অনিয়মের গ্র্যাভিটি দেখে সেই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটুকু বলতে পারি, কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় একেবারেই দেব না আমরা।’ বলেন তিনি।
মঙ্গলবার সকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ইভিএমসহ নির্বাচনী সকল সরঞ্জাম। ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে এসব সরঞ্জাম সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ দুই উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। ১৪৫টি কেন্দ্রে এসব ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার সদস্যের নিরাপত্তার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে ১৪৫টি ভোট কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে ১২৪২টি সিসি ক্যামেরা। পর্যবেক্ষণের জন্য উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন।
এছাড়া নির্বাচনের দিন যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের কথা জানিয়েছেন পুলিশ সুপার কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ করতে মাঠে থাকবেন বিজিবি, র্যাবের মোবাইল টিম, পুলিশের মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
এই নির্বাচনে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাঠে সক্রিয় আওয়ামী লীগের মাহমুদ হাসান রিপন (নৌকা) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী (জাপা) এএইচএম গোলাম শহিদ রঞ্জু (লাঙল)। ভোটের মাঠে প্রচারণায় দেখা যায়নি বিকল্পধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম (কুলা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমানকে (ট্রাক)।
এছাড়া অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ গত ২৫ ডিসেম্বর বগুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে ভোট কারচুপির আশঙ্কায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আসনটিতে ১২ অক্টোবর উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালে প্রথমে গোপন কক্ষে একাধিক ব্যক্তি প্রবেশ করায় ভরতখালি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, ফুলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং সাঘাটা উপজেলার রামনগর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে দফায় দফায় ৫১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে ইসি।
অনিয়মের ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ৫১টি ভোটকেন্দ্রের ঘটনা তদন্ত করে গত ২৭ অক্টোবর ইসিকে প্রতিবেদন দেয়। পরে বাকি ৯৪টি ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম ছিল কিনা, তা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয় ইসি। ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় কমিটি ওই প্রতিবেদন জমা দেয়।
তদন্তে ১২৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পাঁচটি কেন্দ্রের পাঁচজন পুলিশ উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তদন্ত শেষে ৬ নভেম্বর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।