যশোর প্রতিনিধি
স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভার ছবির আলোকচিত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ রায়হানকে সম্মাননা জানিয়েছে যশোর ইনস্টিটিউট। ১১ রবিবার ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঐতিহাসিক ‘স্বাধীনতা উন্মুক্ত মঞ্চে’ তাকে সম্মাননা স্মারক, উত্তরীয় ও চাদর পরিয়ে দেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি।
সম্মাননাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ রায়হান তার অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, আমি অভিভূত! ঐতিহাসিক সেই জনসভার ৫১ বছর পর আপনারা আমাকে স্মরণ করেছেন, সেকারণে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যশোরবাসীকে আমার অনুভূতি প্রকাশ করা কঠিন।
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর দুই দফায় জনসভায় সশরীরে উপস্থিত এবং তাদের খাওয়ানোর দায়িত্বে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ রায়হান বলেন, ১৯৭০ এবং ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু কুষ্টিয়ার জনসভায় এলে আমি বাড়ি থেকে তার জন্যে গরুর দুধ নিয়ে গেছি। তিনি খেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু আমাকে খুব ভালবাসতেন। আজ তিনি নেই। তার কারণেই দেশ আজ অনেক দূর এগিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের দিকে জননেত্রী শেখ হাসিনা উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছিলেন সড়কপথে কুষ্টিয়া হয়ে। যাওয়ার সময় কুষ্টিয়ায় আমি তাকে গোলাপের মালা উপহার দিই। সেইসময় তিনি জেনেছিলেন, আমার বাড়িতে অনেক গোলাপ গাছ। জননেত্রী আমাকে বলেছিলেন, ‘চাচা, গোলাপ কি শুধু আপনার বাড়িতেই ফুটবে, বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ফুটবে না!’
তিনি জানান, পরে তিনি তার বাগানের সাড়ে তিনশ’ গাছের মধ্য থেকে বাছাই করা ১০টি গোলাপের গাছ ঢাকায় বাড়িতে রোপণ করে দিয়ে এসেছিলেন।
৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হয় জানিয়ে তিনি বলেন,৮ ডিসেম্বর আমরা বেনাপোল হয়ে যশোরে আসি। চিত্রামোড়ে একটি ছোট হোটেলে দুপুরে আমরা ডাল-ভাত খাই। সেসময়কার যশোর আর আজকের যশোরের মধ্যে বিস্তর ফারাক বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদকে সংগ্রামী নেতা আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আজ তারা আমাদের মাঝে নেই; কিন্তু তাদের আদর্শ রয়ে গেছে।
বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনে হানাদার বাহিনীর কবলমুক্ত যশোরে স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
যশোর ইনস্টিটিউটের ‘স্বাধীনতা উন্মুক্ত মঞ্চের’ সেই জনসভায় মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সবাইকে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন।
ওই জনসভায় ওয়াশিংটন পোস্ট, লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ ও নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার প্রতিনিধিসহ বহু বিদেশি সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। দেশের একমাত্র ফটোসাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ রায়হান (৯১) তার ইয়াসিকা ৬৩৫ মডেলের ক্যামেরায় সেদিনের ঐতিহাসিক জনসভার ছবি তুলেছিলেন।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর যশোর জেলা পরিষদ এই মঞ্চটি সংরক্ষণে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুনঃনির্মাণ করেছে। রবিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে পুনঃনির্মিত এই মঞ্চের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং স্বাধীন দেশের জনসভার প্রথম জনসভার আলোকচিত্রী কুষ্টিয়ার সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ রায়হানকে সম্মাননা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো.তমিজুল ইসলাম খান।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেদিনের জনসভার স্মৃতিচারণ করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি, যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুজ্জামান পিকুল, যশোর পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণী খান পলাশ, তৎকালীন মুজিবাহিনি প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি, মুজিবাহিনি উপ-প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রবিউল আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু।#