চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) কর্তৃপক্ষ।
বিকডা বলছে, ডিপোতে হিমায়িত খাদ্যপণ্য ও তৈরি পোশাকের শত শত কনটেইনার ছিল। এরমধ্যে রপ্তানি কনটেইনারে ৪৫ মিলিয়ন ও আমদানি পণ্যের কনটেইনারের ক্ষেত্রেও ৪৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি এবং অন্তত ২০ মিলিয়ন ডলারের খালি কনটেইনারের ক্ষতি হয়েছে।
শনিবার রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে (সাবেক কাশেম জুট মিল) লোডিং পয়েন্টের ভেতরে আগুন লাগে। আগুনে অন্তত ৪০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহত হয়েছেন চার শতাধিক। যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফায়ার সার্ভিস বলছে, ডিপোতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড কেমিক্যালভর্তি কনটেইনার ছিল। এ বিষয়ে প্রথমে তাদেরকে জানানো হয়নি। ফলে কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়ে হতাহতের সংখ্যা বাড়ে। আর ১১০ মিলিয়ন ডলারেরও (৯ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা) বেশি আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বিকডার তথ্য অনুযায়ী, ঘটনাস্থলে রপ্তানির জন্য ৮০০ টিইইউ’স বোঝাই তৈরি পোশাক এবং হিমায়িত খাদ্যপণ্য ছিল। আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই কনটেইনার ছিল ৫০০টি এবং খালি কনটেইনার ছিল ৩ হাজার।
বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে প্রায় ৬০০ শ্রমিক কাজ করেন। ৩০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত ডিপোটির কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৬ হাজার ৫০০ টিইইউ’স। এরমধ্যে শনিবার ডিপোটিতে ৪ হাজার ৩০০ টিইইউ’স (২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার) রপ্তানি, আমদানি এবং খালি কনটেইনার ছিল বলে জানা যায়।
বিকডার সচিব রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, প্রাথমিকভাবে ১১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে রপ্তানি কনটেইনারে ৪৫ মিলিয়ন ও আমদানি পণ্যের কনটেইনারের ক্ষেত্রেও ৪৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি এবং অন্তত ২০ মিলিয়ন ডলারের খালি কনটেইনারের ক্ষতি হয়েছে। লোকসানের পরিমাপ নিরূপণে আমরা এখনও এটি নিয়ে কাজ করছি। দুপুরে জরুরি বৈঠক ডেকেছি।’
বিজিএমইএর সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘গত পাঁচ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে রপ্তানির জন্য এখানে পণ্যের চালান বোঝাই করা হয়েছে। ডিপোতে প্রাণ এবং অনন্ত গ্রুপের পণ্য ছিল।
তিনি বলেন, এমন পণ্যও ছিল যেগুলো মার্কিনভিত্তিক চেইন ক্লথ ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম-এর জন্য চালানের অপেক্ষায় ছিল। এছাড়া, ইউরোপীয় একটি ব্র্যান্ডকে ১০০ টিইইউ পণ্য পাঠানোর কথা ছিল।
বাংলাদেশে ১৯টি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) রয়েছে। এগুলো প্রায় শতভাগ রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা করে। এছাড়া ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য যেমন- চাল, গম, সরিষা, ছোলা, ডালসহ আরও বেশকিছু পণ্য ডেলিভারির জন্য নিয়ে আসা হয় এসব ডিপোতে। ডিপোগুলো মূলত চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে।
এসব ডিপোর ধারণক্ষমতা প্রায় ৭৭ হাজার টিইইউস কনটেইনার। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস কনটেইনার।
বিএম কনটেইনার ডিপো লিমিটেড একটি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে ২০১১ সালের মে মাসে। ১১ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানি ও আমদানি কনটেইনারাইজড কার্গো থেকে পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ের (স্টাফিং/আনস্টাফিং) কাজ করছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে রপ্তানি ও আমদানীকৃত পণ্যের কনটেইনার ও খালি কনটেইনার রাখা হয় ডিপোটিতে।