যশোর প্রতিনিধি: যশোরে পুলিশের কথিত সোর্স আব্দুর রহমান ওরফে রুমান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আরেক আসামি আব্দুর রশিদকে (২৮) আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে যশোর শহরের ঝুমঝুমপুর এলাকার রাজনের ভাড়াবাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। রশিদ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার শালকুপা গ্রামের ফজলু মন্ডলের ছেলে।
বুধবার তাকে যশোরে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক গৌতম মল্লিক তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
পিবিআই জানিয়েছে, গত ২৪ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এই মামলার আসামি আমিনুলকে আটক করা হয়। পরে তার আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আব্দুর রশিদের নাম উঠে আসে। সে মোতাবেক তাকে আটক করা হয়।
২০১৭ সালের ৩১ মার্চ দুপুরে স্থানীয়দের দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ বারান্দি মোল্লাপাড়ার বিপরীতে ঝুমঝুমপুরস্থ ভৈরব নদ থেকে রুম্মানের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে সদর উপজেলার সীতারামপুর পশ্চিমপাড়ার আশরাফ ফকিরের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের মা আমেনা বেগম ৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনকে আসামি করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, শহরের সিটি কলেজপাড়ার ইনছান আলীর ছেলে রুবেলসহ তার সহযোগীরা মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িত। পুলিশ কয়েকবার তাদেরকে আটকও করে। কিন্তু তারা তাদেরকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার জন্য রুম্মানকে সন্দেহ করতো। এক পর্যায়ে রুবেল তাকে খুন করার জন্য খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে রুবেল তার সহযোগী ঝুমঝুমপুরের বাবুল মৃধা ওরফে বলু মিয়ার ছেলে রুবেলের মাধ্যমে রুমানকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসে। পরে তাকে ঝুমঝুমপুরস্থ ভৈরব পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে উল্লিখিত দুজন ছাড়াও ঝুমঝুমপুরের আব্দুর রশিদের ছেলে রাকিব হোসেন ওরফে রকি, মনির হোসেনের ছেলে আমিনুর রহমান ও সীতারামপুরের মোহাম্মদ আলীর ছেলে বুনো বাবুসহ কয়েকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে রুম্মানকে কুপিয়ে এবং জবাই করে হত্যা করে। এরপর তার লাশ বস্তাবন্দি করে ভৈরব নদের কচুরিপানার নিচে ফেলে রাখে তারা। পরদিন ৩১ মার্চ সকালে স্থানীয় লোকজন বস্তাবন্দি লাশটি পাওয়ায় বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। এ খবর পেয়ে স্বজনেরা এসে লাশটি রুম্মানের বলে শনাক্ত করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে এজাহারভুক্ত আসামি ঝুমঝুমপুরের বাবুল মৃধা ওরফে বলু মিয়ার ছেলে রুবেলকে মামলা থেকে অব্যহতির আবেদন এবং এজাহারভুক্ত অপর ৪ আসামিসহ খোলাডাঙ্গা গাজীপাড়ার কামরুল গাজী ওরফে কামের ছেলে জি এম মেহেদী হাসান শক্তি, সিটি কলেজপাড়া বউবাজার এলাকার মৃত নুরুল হকের ছেলে আরমান আলী ও ঝুমঝুমপুর ভৈরব নদের পাড়ের চাঁন কসাইয়ের বাড়ির ভাড়াটিয়া মনিরুল ইসলাম ওরফে মনিরের ছেলে শাহীন হোসেন ওরফে শাহীনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশ যশোরের তৎকালীন ইন্সপেক্টর হারুন অর রশিদ। কিন্তু এজাহারভুক্ত আসামি ঝুমঝুমপুরের রুবেলের অব্যহতি চাওয়ায় সিআইডি পুলিশের দেয়া ওই চার্জশিটের ওপর আদালতে নারাজি দেন বাদী। গত ১ মার্চ বাদীর করা এই নারাজি আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য পিবিআইকে আদেশ দেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম।