যশোর প্রতিনিধি: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শার্শা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আকুল হুসাইনকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, সেই সাথে তাকে স্থায়ী বহিস্কারের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি / সাধারণ সম্পাদক বরাবর সুপারিশ করা হলে কেন্দ্রীয় থেকে বহিস্কার করা হয়।
শনিবার বিকালে এ সিদ্ধান্ত নেয় যশোর জেলা ছাত্রলীগ।ছাত্রলীগ নেতা অস্ত্র ব্যবসায়িক জেলাজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে শার্শা উপজেলার ছাত্রলীগের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয় জেলা ছাত্রলীগ। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় থেকে বহিস্কার করা হয়।
যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি /সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যশোর জেলা শাখার আওতাধীন শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আকুল হুসাইনকে দলীয় শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজে জড়িত থাকায় অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে তাকে স্থায়ী বহিস্কারের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি / সাধারণ সম্পাদক বরাবর সুপারিশ করা হলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরী সিদ্ধান্তে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বহিস্কার করা হয়।
এ বিষয়ে যশোর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সালাউদ্দীন কবির পিয়াস জানান, সে যেই হোক না কেন, যেকোন অপকর্মের বিরুদ্ধে বিন্দু মাত্র ছাড় দেয়া হবে না। একজন অপরাধী কখনো ছাত্রলীগের হতে পারে না। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব জানান, আমরা সংগঠনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অস্ত্র ব্যবসায়িক ছাত্রলীগ কর্মীকে অব্যাহতি দিয়েছি। কারণ কোন অপরাধীর স্থান ছাত্রলীগে নয়।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে আন্তদেশীয় ৫ অস্ত্র চোরাকারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ব্যবসায় ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, ৮টি বিদেশি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগাজিন ও ৮টি গুলি জব্দ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, রাজধানীর মিরপুর, দারুস সালাম ও গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আকুল হোসেন, আকুলের সহযোগী ইলিয়াস হোসেন, আব্দুল আজিম, ফারুক হোসেন এবং ফজলুর রহমান। তারা সবাই যশোর জেলার বেনাপোল এবং শার্শা থানার বাসিন্দা।
পুলিশ আরও জানায়, এই চক্রটির প্রধান আকুল হোসেন ২০১৪ সাল থেকে দুই শতাধিক অবৈধ অস্ত্র নিজে বিক্রি করেছে। অস্ত্র চোরাচালানসহ চক্রের সদস্যরা প্রতারণা, সীমান্ত পিলার, সাপের বিষ, গোল্ড স্মাগলিং, প্রত্নতাত্ত্বিক মূর্তি, ইয়াবা, আইস মাদক চোরাচালানে জড়িত।
ডিবি পুলিশ আরও জানায়, ঢাকার ভাষানটেক এলাকায় একজন ঠিকাদারকে গুলির ঘটনার ব্যবহৃত অস্ত্র এবং সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া কয়েকটি অস্ত্রের উৎসের সন্ধানে নেমে চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায় পুলিশ। বিক্রির জন্য অস্ত্র ও গুলি সঙ্গে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে গাবতলী হয়ে ঢাকায় ঢুকছিলেন তারা। এদের বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেককে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে ডিবি।
এক প্রশ্নের উত্তরে ডিবির প্রধান কে এম হাফিজ আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কোনো গোষ্ঠী এসব অস্ত্র সংগ্রহ করছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আকুল হোসেন বেনাপোল পৌরসভাসংলগ্ন বাহাদুর এলাকার বাসিন্দা। শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সে। ২০১৯ সালে ১৪ জুন আকুলের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণে দেশীয় অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও মাদক উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
এ ঘটনায় বেনাপোল থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হলেও অজ্ঞাত কারণে মামলার অভিযোগপত্র থেকে আকুলের নাম বাদ দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, সোনা ছিনতাই, মারামারি, কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলাসহ আটটি মামলা রয়েছে।
এঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর ছাত্রলীগ ও তাদের নেতা কর্মীদের ব্যাপারে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।