ঢাকা অফিস: অনেক সাধনা। দীর্ঘ প্রতীক্ষা। সংসার পাতার আট বছর পর গিয়াস-রাবেয়া দম্পতির ঘরে জ্যোতি ছড়ায় রায়সা ছিদ্দিকা। মা-বাবার কাছে রায়সা ছিল ‘রত্ন’, তাই যত্নও ছিল বেশ। বেড়ে উঠছিল পরম মমতায়। তবে রায়সার দুই বছর তিন মাসের জীবনগাড়িটা থেমে গেল অল্পতেই।
রোববার রাত সোয়া ৮টা। রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর চত্বর। চারদিকে কোলাহল। কোথাও ছুটছে গাড়ি, কোথাও জটে পড়ে মন্থর যান। রায়সাকে কোলে নিয়ে কিয়াংসি চায়নিজ রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে রিকশায় চড়ে বাসায় ফিরছিলেন মা রাবেয়া বসরি তুলি। কিছুদূর যেতেই এক অটোরিকশা তাঁদের রিকশাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তেই মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় পড়ে যান রাবেয়া। রায়সা মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে কয়েক হাত দূরে। এ সময় বিআরটিসিরি একটি বাসের পেছনের চাকা শিশুটির ওপর উঠে গেলে থেঁতলে যায় মাথা। ঘটনাস্থলেই নিথর রায়সা। মাথার ওপর দিয়ে বাসের চাকা যাওয়ায় মগজসহ মুখের বিভিন্ন অংশ হয়ে যায় ছিন্নভিন্ন। কন্যার এমন মর্মন্তুদ পরিণতি দেখে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন মা। মেয়ের তুলতুলে দেহের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টুকরোগুলো কুড়িয়ে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করতে করতে বারবার চেতনা হারান। এমনটাই ছিল প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান।
দারুসসালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আমিনুল বাশার সাংবাদিকদের বলেন, খুবই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। শিশুটির মাথা-মুখের অংশ চেনার কোনো উপায় ছিল না। পুরোপুরি থেঁতলে গেছে। ঘটনার জন্য দায়ী বাসটি জব্দ করা হয়েছে। শিশুটির মা বাদী হয়ে বাস ও অটোরিকশার দুই চালকের বিরুদ্ধে সড়ক দুর্ঘটনা আইনে মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাসচালক আলামিন ও অটোচালক সঞ্জয়কে। গতকাল সোমবার তাদের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন।
শিশু রায়সার দাদা আনিছুর রহমান জানান, তাঁদের বাড়ি যশোরে। রায়সার বাবা গিয়াস উদ্দিন মোল্লা ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। বাস করে মিরপুরের শাহআলী বাগে। অফিসের কাজে রোববার গিয়াস ছিল চট্টগ্রামে। রাতে একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসে ঢাকায়। গভীর রাতে পুলিশের কাছ থেকে লাশ বুঝে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যশোরের অভয়নগরের গোপীনাথপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল সকালে গ্রামের কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।
রায়সার বাবা গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে গতকাল সোমবার ফোনে কথা হয়। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘বিয়ের আট বছর পর ওপরওয়ালা আমাদের সন্তান দিয়েছিল। আল্লাহ আবার তাকে কেড়ে নিল। ঘর ঝলমলে করে রাখত মেয়েটি। তাকে ঘিরেই ছিল আমাদের সব আনন্দ। এখন সব তছনছ। বাঁচার সব ইচ্ছেই যেন ফুরিয়ে আসছে। বাকি জীবন কী নিয়ে বাঁচব! আমার স্ত্রী বারবার চেতনা হারাচ্ছে। পাগলের মতো হয়ে গেছে।