ঐতিহ্য রক্ষায় যশোরের চৌগাছায় খেজুরের গাছ রোপন কর্মসূচি

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধিঃ 
যশোরের চৌগাছায় যশোরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ, গাছি, জেলা ব্র্যান্ডিং পণ্য খেজুর রস ও গুড় রক্ষায় খেজুর গাছ রোপণ কর্মসূচি পালন করেছে সেফ দি ট্রাডিশন এন্ড এনভায়রনমেন্ট (এসটিএফ) নামে একটি অলাভজনক সংগঠন।

রবিবার (৯ অক্টোবর) বেলা ১১টায় উপজেলার ধুলিয়ানি ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত মুক্তারপুর গ্রামের মাঠের একটি রাস্তায় এই খেজুর গাছ রোপণ করা হয়। বৃক্ষ রোপনের আগে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।সভায় সংগঠনটির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবু বকরের সভাপতিত্বে খেজুর গাছ রোপণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা।
প্রধান অতিথি ড. মোস্তানিছুর রহমান বলেন, যশোরের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে হলে খেজুর গাছ ও গাছ থেকে রস সংগ্রহের আধুনিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে। সবাই যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসলে জেলার এই ব্র্যাডিং ও অর্থকারী পণ্য ঐহিত্য ফিরে পাবে এবং চিনির বিকল্প হিসেবে রফতান করাও সম্ভব হবে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা যশোরের ঐতিহ্য রক্ষায় গাছিদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ে সংগঠনটির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, খেজুর গাছ রোপণ এবং গাছিদের নিয়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। উপজেলা প্রশাসন উপজেলা কৃষি অফিসের সাথে বসে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাহেব আলীর উপস্থাপনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ধুলিয়ানি ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মোমিনুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা এইচ এম ফিরোজ, এসটিএফ’র পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান, কোষাধ্যক্ষ ইমরান হোসাইন, শিক্ষক মাসুদুজ্জামান, সাকিব ইসলাম, খেজুরগাছ মালিক হবিবর রহমান, গাছি তুরাপ আলী, শহিদুল ইসলাম, মোবারেক আলীসহ গ্রামের খেজুরগাছ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।এর আগে গত ৭ অক্টোবর ইউনিয়নের মুক্তারপুর গ্রামে ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের গাছিদের নিয়ে উঠোন বৈঠক করে সংগঠনটি। গত দুই বছর ধরে সংগঠনটি ইউনিয়নের গাছিদের খেজুর গাছ রোপণ ও রস সংগ্রহে উৎসাহ এবং খেজুর রসকে ব্র্যাডিং করে গাছিদের লাভবান করার চেষ্টা করে আসছে।
এবিষয়ে সংগঠনের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবু বকর বলেন, ছোট বেলা দেখতাম মাঠে অনেক খেজুর গাছ ছিলো। এলাকায় অনেক গাছি খেজুর গাছ কাটতো। শীতকালে গ্রামে পিঠা-পুলির উৎসবমুখর আমেজ থাকতো। এখন আর এসব সচারচর দেখা যায়না। গাছির অভাবে বর্তমান প্রজন্ম সেই আমেজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যশোরের জস, খেজুরের রস ঐতিহ্য যেন এখন যাদুঘরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির সময় বিষয়টি নিয়ে চিনাভাবনা করি খেজুর গুড় ও রসের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার। মূলত ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমরা প্রান্তিক গাছিদের নিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা সেফ দি ট্রাডিশন এন্ড এনভয়রমেন্ট এর তত্বাবধানে পাঁচ হাজার খেজুর গাছের চারা রোপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করে সরকারি রাস্তার দুই ধারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এই খেজুর চারা রোপণ করতে চাই। যার মধ্যে আজ গাছি ও মালিকদের মাধ্যমে ২০০ খেজুর চারা রোপণ করছি।