নানা জল্পনা-কল্পনার শেষে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন। ১২ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
অনেকে ইতোমধ্যে প্যানেল ঘোষণা করেছেন। অনেকেই আজ প্যানেল ঘোষণা করবেন।
আগামী ২৬ আগস্ট চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর প্রার্থীরা প্রচার শুরু করতে পারবেন। তবে আগেই সামাজিক মাধ্যমে প্রচার শুরু করেছেন প্রার্থীরা। নিজেদের ব্যক্তিগত আইডি, পেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত বিভিন্ন গ্রুপে নিজের পরিচয়, ইশতেহার ও ভোট চাইছেন। প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইছেন তাদের সমর্থকরা।
গত কয়েকদিন মনোনয়ন সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রার্থীরা মনোনয়ন সংগ্রহ করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢালাওভাবে প্রচার করেছেন। অনেকেই শিক্ষার্থীদের প্রতি বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই চেয়েছেন শিক্ষার্থীদের মতামত। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ডাকসু প্রার্থীদের কাছে নিজেদের প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হলভিত্তিক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এসব গ্রুপে ইতোমধ্যে কে কোন পদে দাঁড়াচ্ছেন, কী পরিবর্তন আনতে চান, তা জানাচ্ছেন প্রার্থীরা। ফলে নির্বাচনের আগেই অনলাইন পরিসরে একটি মুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-০২ নামে দুটি ফেসবুক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। প্রথম গ্রুপে ৬৭ হাজার এবং দ্বিতীয় গ্রুপে ৪৯ হাজার শিক্ষার্থী যুক্ত রয়েছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে নিয়মিতই এই গ্রুপগুলোতে পোস্ট করছেন প্রার্থীরা।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেকেই বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছেন। অনেকেই নিজের ছবি এবং ইশতেহার সংবলিত ছবি ব্যবহার করছেন। কেউ কেউ লেখার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নিজের ভাবনা এবং ভিশন তুলে ধরছেন।
ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে ফেসবুক প্রচার
এবারের নির্বাচনে ফেসবুকের প্রচার-প্রচারণা একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। ইতোমধ্যে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদসহ বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজেদের দিকে ভোট টানতে অনলাইন পরিসরে কার্যক্রম শুরু করেছেন। ভোটের মাঠে এটি বড় প্রভাবক হতে পারে।
ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খানকে ভিপি মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জিএস পদে শেখ তানভীর বারী হামীম এবং এজিএস পদে তানভীর আল হাদী মায়েদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এই তিন নেতার বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা শুরু করেছেন।
অন্যদিকে অনলাইনে প্রচারে সক্রিয় রয়েছে ছাত্রশিবিরও। শিবিরের সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েমের প্রতি প্রচার-প্রচারণা বেশি। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপসহ অনলাইনে স্পেয়ারে শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে ছাত্রশিবিরের। বিভিন্ন গ্রুপের অ্যাডমিন-মডারেটর হিসেবে তাদের কর্মীরা কাজ করছেন। এটি তাদের প্রচারণায় বাড়তি সুবিধা দেবে।
গ্রুপগুলোতে নামে-বেনামে একাধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যক্তি আক্রমণ ও অসত্য তথ্য ছড়ানো ঘটনাও ঘটেছে। অবশ্য ডাকসুর আচরণবিধিতে এ বিষয়ে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
আচরণবিধি অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা আইনসিদ্ধ উপায়ে অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাতে পারবেন। তবে ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্র হনন, গুজব, অসত্য তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে প্রার্থীদের।
অনলাইন পরিসরে প্রচারে আছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আব্দুল কাদেরসহ প্যানেলের অন্যরা। জুলাই অভ্যুত্থান এবং তার পূর্বে নিজেদের বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রম ও অবদান তারা সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরছেন।
গণতান্ত্রিক ছাত সংসদের প্যানেল ঘোষণার পর জাতীয় নাগরিক পার্টির একাধিক নেতা তাদের সমর্থন জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট ও কমেন্ট করেছেন। অনেকেই আব্দুল কাদেরকে একমাত্র যোগ্য প্রার্থী বলেছেন। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া গ্রহণযোগ্যতা এবং ছাত্রদের মধ্যে জনপ্রিয় এসব নেতার সমর্থন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ভোটকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডাকসু ঘিরে সামনে নেতাদের ইমেজ তৈরি এবং নষ্ট করার ক্ষেত্রে বড় প্রভাবক হয়ে উঠতে পারে ফেসবুক। একইসাথে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে গুজব ও অপপ্রচার প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও সচেতন থাকা দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খোরশেদ আলম বলেন, ডাকসু নির্বাচন তরুণদের অংশগ্রহণে একটি আয়োজন। এখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনলাইন পরিসরের একটি শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। ফলে প্রচার হোক বা মব তৈরি হোক, দুক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখবে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যম।
তিনি বলেন, মাত্র ২৮টি পদের বিপরীতে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী লড়ছেন। ফলে নিজেদের পরিচিত করানো এবং ভিশন তুলে ধরার ক্ষেত্রে এই মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অন্যদিকে অন্যের চরিত্র হনন করার ক্ষেত্রেও নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে ফেসবুক।
অধ্যাপক খোরশেদ আলম জানান, বিভিন্ন দল বট আইডি তৈরি করে কারও কারও ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা করতে পারে। সাধারণত যারা সংগঠনে জড়িত, তাদের এধরনের কাজে জড়িত হওয়ার সুযোগ ও সামর্থ্য বেশি থাকে। ফলে তারা একটা বাড়তি সুবিধা পাবে।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নজরদারির ওপর জোর দেন খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী এই পরিসরে আছেন। ফলে তাদের এখানকার প্রচার-প্রচারণা প্রভাবিত করবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি অনলাইন-অফলাইন মনিটরিং টিম গঠন করা যেতে পারে।