মাধঘোপা নিউজ ডেক্স: বুধবার বসছে একাদশ সংসদের ত্রয়োদ্বশ ও সরকারের চলতি মেয়াদের তৃতীয় বাজেট অধিবেশন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে দেশের ইতিহাসের ও ৫০তম বাজেট অধিবেশন এটি।
এই অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় আওয়ামী লীগ সরকারের ২১তম বাজেট উত্থাপন হবে।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের তৃতীয় বাজেট এটি। তার বাজেট ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সূর্বণজয়ন্তীতে বাজেটে দেশের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ হবে।
বাজেট অধিবেশনকে ঘিরে সংসদ সচিবালয়ের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। করোনা প্রকোপের কারণে এবারও স্বল্প সময়ে বড় আকারের বাজেট পাস হতে পারে।
প্রতি অর্থবছরের জুন মাসে বাজেট উত্থাপন এবং ৩০ জুনের মধ্যে বাজেট পাস করা হয়। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ৩ জুন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এবার বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ কোটি টাকার ওপরে। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেট ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার। আর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট অর্থাৎ ১৯৭২-৭৩ সালে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। দেশের প্রথম বাজেট উত্থাপন করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ।
করোনা মহামারির মধ্যে এবারও কঠোর বিধিবিধান মেনে চলবে বাজেট অধিবেশন। সংক্ষিপ্ত সময়ে শেষ হবে বাজেট অধিবেশন।
২ জুন, বুধবার শুরু হয়ে ৩ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হতে পারে বাজেট অধিবেশন। তবে সবকিছু নির্ভর করছে কার্য উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর।
একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ অধিবেশন (বাজেট) শুরু হবে বুধবার বিকেল ৫টায়। কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী বিদ্যমান সংসদের কোনো সংসদ সদস্য মারা গেলে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোক প্রস্তাব উত্থাপন ও আলোচনা শেষে সংসদের বৈঠক মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার।
গত ১২তম অধিবেশনের শেষ কার্যদিবস অর্থাৎ ৪ এপ্রিল মারা যান ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক। ফলে ত্রয়োদশ অধিবেশনের প্রথম দিন প্রয়াত সংসদ সদস্যের ওপর আনীত শোক প্রস্তাবের আলোচনা শেষে অধিবেশনের মুলতবি ঘোষণা করবেন স্পিকার। এরপর ৩ জুন বিকেল ৩টায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। যা আগামী ৩০ জুন পাস হবে। আর ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে ২০২১-২০২২ অর্থবছর।
এবারও বিরতি দিয়ে বাজেট অধিবেশন চলবে। সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১৩ কার্য দিবস চলতে পারে অধিবেশন। আগামী ৩ জুন বাজেট উত্থাপনের পর ৪ ও ৫ জুন শুক্র, শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। এরপর ৬ জুন বেলা ১১ টায় অধিবেশন বসবে। সেদিন ২০২০-২০২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট উত্থাপন এবং আলোচনা শুরু হবে। সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা শেষে ৭ জুন সম্পূরক বাজেট পাস হবে। এরপর বিরতি দিয়ে আবার প্রস্তাবিত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের ওপর আলোচনা করবেন সংসদ সদস্যরা।
প্রতিদিন বেলা ১১টায় শুরু হয়ে ৩টা পর্যন্ত চলবে বাজেট অধিবেশন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারও কোভিড টেস্টের নেগেটিভ সনদ নিয়ে ঢুকতে হবে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। প্রতি ৭২ ঘণ্টা পর আবার নেগেটিভ সনদ মিললেই কেবল অধিবেশনে যোগদান করতে পারবেন সংসদ সদস্যরা। যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদেরও লাগবে কোভিড নেগেটিভ সনদ।
প্রতিদিন ১১০ থেকে ১২০ জন সংসদ সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ দূরত্বে বসে চলবে সংসদ অধিবেশন। সে ক্ষেত্রে কারও কারও বসার সিট পরিবর্তনও হতে পারে। যেদিন যে সংসদ সদস্যের নাম তালিকায় থাকবে, শুধু ওই দিনই সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন ওই সংসদ সদস্য।
এবার সংসদ অধিবেশন কাভার করতে আসা গণমাধ্যমকর্মীদের সংসদে প্রবেশের সুযোগ থাকছে দুই দিনের জন্য। বাজেট পেশ হওয়ার দিন ৩ জুন এবং অধিবেশন শেষ হওয়ার দিন ৩ জুলাই দুই দিন প্রবেশের সুযোগ থাকতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে লাগবে করোনা নেগেটিভ সনদ। এজন্য ১ জুন মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে কোভিড টেস্ট।
সংসদের ত্রয়োদশ অধিবেশন (বাজেট) সম্পর্কে হুইপ ইকবালুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু করোনা মহামারি চলছে, এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প সময়ে বাজেট অধিবেশন শেষ হবে।
এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে ২ জুন শুরু হয়ে আগামী ৩ জুলাইয়ের মধ্যে অধিবেশন শেষ হবে।
অর্থমন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, দেশের ইতিহাসে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে আসছে সবচেয়ে বড় ঘাটতির বাজেট। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ছিল ৬ শতাংশ। তবে আগের ১০ বছর ধরে বাজেট ঘাটতি রাখা হচ্ছিল ৫ শতাংশের নিচে।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ বা ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এবার বাজেট বক্তব্যের প্রতিপাদ্য হতে পারে ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’।
চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার বাজেট ঘোষণা হয়েছিল ১১ জুন। এরপর মাত্র ৯ দিনের বাজেট আলোচনা ছিল, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন।