ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে নিম্নমধ্যবিত্ত ও অশিক্ষিত মানুষের দুর্বলতাকে পুঁজি করে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার নামে প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। এই এলাকায় তিন মাসের মধ্যে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্ধশতাধিক দুস্থ ও অসহায় পরিবারের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৬০ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে উপজেলার দরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে উন্নতমানের ঘর দেওয়া হবে বলে প্রচারণা চালায় একটি চক্র। বলা হয়, তিনটি কক্ষ, রান্নাঘর, টয়লেট ও গোসলখানাসহ একটি বাড়ি মাত্র তিন মাসের মধ্যে তৈরি করে দেওয়া হবে। এমন প্রলোভন আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে হালুয়াঘাটের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের কাছে থেকে ৩০-৬০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এদিকে তিন মাস পেরিয়ে তিনবছরেও ঘর পাননি ভুক্তভোঠগী পরিবারগুলো।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর ১২ জন ভুক্তভোগী এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তারা জানান, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে উপজেলার হালুয়াঘাট উত্তর বাজারের সাংবাদিক শাহ আলম তার সহযোগী স্বদেশী উত্তর পাড়ার মোকারম হোসেন, ধারা ইউনিয়নের চাদশ্রী গ্রামের আমির হামজা স্বাধীন, ধারা বাজারের মফিজুল ইসলামসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাত লাখ টাকার ঘর দেওয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতি আর প্রলোভন দেখান। পরে তারা বেশ কয়েকজনের কাছে টাকাও নেন। টাকা নেওয়ার বেশ কিছুদিন পর স্থানীয় এক ব্যক্তিকে ঢাকার বড় অফিসার সাজিয়ে ভুক্তভোগেীদের বাড়িতে বাড়িতে পরিদর্শনে পাঠিয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে আবারও অনেকের কাছে টাকা নেয়।
স্বদেশী উত্তরপাড়ার চাঁনবানু বলেন, আমার কাছ থেকে শাহালম ও মোকারম ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। এখন আমরা নিরুপায়।
স্বদেশী উত্তরপাড়ার কুদ্দুস ভূঞা বলেন, তার কাছ থেকে ৩৫ হাজার ৫ শত টাকা নেন মোকারম আর শাহ আলম। এই টাকা আমি ঋণ করে এনে দিয়েছি। আমি অসুস্থ। যদি টাকাটা পাইতাম তাহলে চিকিৎসা করাইতে পারতাম।
মিশন রোডের রফিকুল ইসলাম ও ঝাউগড়া গ্রামের ভোক্তভোগী গৃহিণী শাহানাজ আক্তার বলেন, সংড়া গ্রামের শামিম নামে এক লোককে ঢাকার বড় অফিসার পরিচয় দিয়ে ঘর ভিজিট করান। ভিজিট করার নাম বলেও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। ঘরের আশায় ধারদেনা করে বিপদে আছি। নিরুপায় হয়ে ডিসি স্যারের কাছে আবেদন করেছি।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহ আলম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয়ভাবে কিছু সাংবাদিক আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে ষড়যন্ত্র করছেন। যারা আমাকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও আমি আইনগত পদক্ষেপ নেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মো. সোহেল রানা বলেন, এ ব্যাপারে শুনেছি। সরকারি ঘর পেতে কেউ টাকা নিয়ে বা দিয়ে থাকলে দুই পক্ষই অপরাধী হবেন। যেহতু তিন বছর আগের ঘটনা যদি যথেষ্ঠ সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকে তাহলে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে কোনো ধরনের প্রতারণাই আমরা গ্রহণ করি না। আমরা অবশ্যই এ ধরনের প্রতারণায় কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।