যশোরের রিপন অটোস দায়িত্ব নিলো  অদম্য মেধাবী তামান্নার লেখাপড়ার  

যশোর প্রতিনিধি
অদম্য মেধাবী তামান্না আক্তার নূরার লেখাপড়ার খরচ বহনের ঘোষণা দিয়েছেন যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক কল্যাণের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও রিপন অটোস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজাজ উদ্দিন টিপু। মঙ্গলবার দৈনিক কল্যাণের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এজাজ উদ্দিন টিপু এ ঘোষণা দেন। এসময় তিনি তামান্নাকে এককালিন শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করেন।
গতকাল দু’হাত ও এক পা বিহীন অদম্য শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার নূরা কৃতি শিক্ষার্থীর সম্মামনা গ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়ে বাবা-মায়ের সাথে এসেছিলেন দৈনিক কল্যাণ চত্ত্বরে। অনুষ্ঠানের যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান ও দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দৌলা তামান্নার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।
অনুভুতি প্রকাশকালে তামান্না আক্তার নূরা বলেন, বহু বাঁধা কষ্ট পেরিয়ে এসেছি। দুই হাত ও এক পা না থাকা সত্ত্বেও অদম্য সাহস বুকে ধারণ করেছিলাম। পায়ে লিখে সাফল্য অর্জন করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মহল অভিনন্দন জানাচ্ছেন, কৃতি শিক্ষার্থীর সম্মাননা দিচ্ছেন। এ যে কী এক আনন্দের অনুভুতি, তা মুখে বলে শেষ করা যাবে না।
তিনি বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অ লে আমার মতো অনেক প্রতিবন্ধী রয়েছেন। তাদের মেধা বিকাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানান এই কৃতি শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, আমার সাফল্যের খবর সাংবাদিকরা প্রকাশ করেছেন। সেকারণেই বিভিন্ন মহল আমাকে চিনেছেন, সহযোগিতা করে আসছেন। তিনি সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। দৈনিক কল্যাণের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাকে কৃতি শিক্ষার্থীর সম্মাননা দেয়ায় গর্ববোধ করছি। লেখাপড়ার ভার গ্রহণের ঘোষণা দেয়ায় তিনি দৈনিক কল্যাণের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও রিপন অটোস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজাজ উদ্দিন টিপুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তামান্না বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। এইচএসসি পরীক্ষায় তার জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর সংবাদপত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে।
এরআগে ২০১৯ সালে ঝিকরগাছার বাঁকড়া জোনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেন। পান জিপিএ-৫। পিইসি ও জেএসসির ফলাফলেও সবোচ্চ সাফল্য পান তামান্না আক্তার নূরা।
যশোরের ঝিকরগাছার বাঁকড়া আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড় তামান্না। জন্মগতভাবেই তার দুটি হাত ও একটি পা নেই। পায়ে লিখে তামান্না পা দিতে চলেছেন বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে।
বাবা রওশন আলী উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। মা খাদিজা গৃহিণী। তামান্নার ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। সবার ছোট ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণির ছাত্র।
শিক্ষানুরাগী ও সচেতন মহল বলছেন-পায়ে লিখে প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় চমক দেখানো তামান্না আক্তার নূরার স্বপ্ন পূরণ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া নূরার জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জেও তামান্না আক্তার নূরা জিতে ফিরবেন-এমন প্রত্যাশা সর্বমহলের।
দৈনিক কল্যাণের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও রিপন অটোস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজাজ উদ্দিন টিপু জানান, পত্রিকায় তামান্নার অদম্য সাফল্যর সংবাদ দেখে আমাদেরকে উচ্ছসিত করেছে। ইচ্ছা শক্তি থাকলেই যে সাফল্য অর্জন করা যায় তার উদাহরণ অদম্য তামান্না। শারীরিকভাবে অক্ষমরা তামান্নার এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হবে এবং সমাজে তারা নিজেদেরকে বোঝা ভাববে না।